আইপিএল জগতে একটা কথা চালু আছে, কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ছন্দে ফেরাতে হলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে খেলিয়ে দাও। কলকাতার দল খুব খারাপ অবস্থায় থাকলেও বিপক্ষকে হারিয়ে ঠিক ফের বেঁচে উঠবে। তবে এ বারের প্রেক্ষাপট একেবারে আলাদা। মরসুমের শুরু বলে কথা। এমন ম্যাচে খেলতে নেমে আইপিএলের ইতিহাসে ১০০তম জয় পেল অইন মর্গ্যানের কেকেআর। ব্যাট হাতে যেমন নীতীশ রানা টানলেন, তেমনই বল হাতে জ্বলে উঠলেন দুই জোরে বোলার প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ (৩৫/২) ও প্যাট কামিন্স (৩০/১)। আর তাঁদের যোগ্য সঙ্গত দিলেন আন্দ্রে রাসেল, শাকিব আল হাসান। ফলে ১০ রানে জিতে এ বারের অভিযান শুরু করল নাইট বাহিনী।
মাঠে নামার আগে হায়দরাবাদকে দুটো চমক দিয়েছিলেন নাইট অধিনায়ক মর্গ্যান। সুনীল নারাইনকে বাইরে রাখা প্রথম চমক হলে দ্বিতীয় চমক ছিল নীতীশ রানাকে ওপেনিংয়ে পাঠানো। আর এটাই কাজে দিল। মিডল অর্ডারে ফের ধস নামলেও তাঁর ৫৬ বলে ৮০ রানের লড়াকু ইনিংস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বিপক্ষ বোলিংয়ে একাধিক বিকল্প থাকলেও আক্রমণ করে দ্রুত রান তোলা যায়। আইপিএলের আগে কোভিডে আক্রান্ত হলেও সেই যুদ্ধ জিতেছিলেন নীতীশ। এ দিন ব্যাট হাতে বাইশ গজে নেমে নিজেকে প্রমাণ করার যুদ্ধটাও জিতলেন তিনি। তাঁর ইনিংস ৯টি চার ও ৪টি ছয় দিয়ে সাজানো ছিল।
শুভমন গিল যখন ফিরলেন তখন দলের রান ৫৩। তবে দমে না গিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে রাহুল ত্রিপাঠিকে সঙ্গে নিয়ে ৯৩ রান যোগ করলেন দিল্লির এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। গত মরসুমে কম সুযোগ পেলেও জাত চিনিয়েছিলেন রাহুল। এ বারও তাঁর ব্যাটিংয়ে সেই ঝলক ধরা পড়ল। এক দিক থেকে লাগাতার আক্রমণ করে যাচ্ছিলেন নীতীশ রানা। অন্যদিকে রাহুল দিচ্ছিলেন তাঁকে যোগ্য সঙ্গত।
তবে রাহুল ব্যক্তিগত ৫৩ রানে ফিরতেই ফের নাইটদের মিডল অর্ডারে ভাঙন ধরল। ২ উইকেটে তখন নাইটদের স্কোরবোর্ডে ১৪৬ রান। ভাবা গিয়েছিল আন্দ্রে রাসেল নেমেই ঝড় তুলবেন। কিন্তু সেটা হল না। রশিদ এসেই ‘ড্রে রাস’কে ফেরত পাঠালেন। তাঁর আফগান ভাই নবিও কাজের কাজটা করে দিয়ে চলে গেলেন। ১৮তম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে রানা ও মর্গ্যানকে তুলে নিয়ে কলকাতার দলের চাপ বাড়িয়ে দিলেন এই অফ স্পিনার। ১৬০ রানে ৫ উইকেটে হারিয়ে তখন বেশ চাপে বেগুনী বাহিনী। যদিও প্রাক্তন অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক লড়াই ছাড়েননি। তাঁর দ্রুত ৯ বলে ২২ রানের সৌজন্যে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৭ রান তুলল কেকেআর।
আইপিএল শুরু হওয়ার আগেই দলের হায়দরাবাদের অর্ডার নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা। আর সেটাই হল। রবিবার তিনি ও ডেভিড ওয়ার্নার ১০ রানের মধ্যে ফিরে যেতেই চাপ বাড়ল মিডল অর্ডারে। জনি বেয়ারস্টো ও মণীশ পাণ্ডে তৃতীয় উইকেটে ৯২ রান তুললেন, কিন্তু সেটা কাজে দিল না। কারণ চাপ বাড়লেই বেয়ারস্টো উইকেট ছুড়ে দেন। তাঁর সেই পুরনো রোগ এখনও সারেনি। ভারতের বিরুদ্ধে গত সিরিজের একাধিক স্কোর কার্ড দেখলেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যায়। আর বিজয় শঙ্কর, মহম্মদ নবিদের নিয়ে কিছুক্ষণ লড়াই করা যায়। যুদ্ধ জেতা যায় না। সেটা এ দিন ফের প্রমাণ হল। কাশ্মীরের তরুণ আব্দুল সামাদ শেষের দিকে কয়েকটা ছয় মেরে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। কারণ সানরাইজার্সের সূর্যাস্ত ততক্ষণে ঘটে গিয়েছে। তাই ৪৪ বলে ৬১ রানে অপরাজিত থাকলেও মনমরা হয়ে মাঠ ছাড়লেন ‘প্রাক্তন নাইট’ মণীশ পাণ্ডে।