দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ় জয় নিশ্চিত করল ভারত। রবিবার গুয়াহাটিতে টেম্বা বাভুমাদের ১৬ রানে হারালেন রোহিত শর্মারা। জয়ের জন্য ২৩৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কার্যত ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ল সফরকারীররা। যদিও ভারতীয় বোলারদের দুর্দশা আরও এক বার প্রকট হয়ে গেল।
টস জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠান দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক বাভুমা। প্রথমে ব্যাট করা নিয়ে ম্যাচ শুরুর আগে রোহিত কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, ভারতীয় ব্যাটাররা তাণ্ডব চালালেন। অধিনায়ক রোহিত ছাড়াও ঝড়ের গতিতে রান তুললেন লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদবরা। শেষ কয়েক বলে মানানসই আগ্রাসী মেজাজে দেখা গেল দীনেশ কার্তিককেও। নির্ধারিত ২০ ওভারে ভারত তুলল ৩ উইকেটে ২৩৭ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২০ ওভারের ম্যাচে এটাই ভারতের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
অধিনায়ক রোহিত করলেন ৩৭ বলে ৪৩ রান। ৭টি চার এবং ১টি ছয় এল তাঁর ব্যাট থেকে। তাঁর থেকেও বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন সহ-অধিনায়ক রাহুল। ২৮ বলে ৫৭ রান করলেন তিনি। ৫টি চার এবং ৪টি ছয় মারলেন ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়ক। মাত্র ১ রানের জন্য অর্ধশতরান পূর্ণ করতে পারলেন না কোহলি। ২৮ বলে ৪৯ রান করে অপরাজিত থাকলেন প্রাক্তন অধিনায়ক। শেষ ওভারে ব্যাট না পাওয়ায় অর্ধশতরান করতে পারলেন না তিনি। কোহলির ব্যাট থেকে এল ৭টি চার এবং ১টি ছয়। ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে সব থেকে আগ্রাসী ছিলেন সূর্যকুমার। ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালালেন রবিবার। দক্ষিণ আফ্রিকার কোনও বোলারই ছাড় পেলেন না তাঁরা আগ্রাসন থেকে। ৫টি চার এবং ৫টি ছয়ের সাহায্যে ২২ বলে ৬১ রান করলেন সূর্যকুমার। কোহলির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হলেন তিনি। শেষ কয়েক বলে ঝড় তুললেন কার্তিকও। ৭ বলে ১৭ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। তাঁর ব্যাট থেকে এল ১টি চার এবং ২টি ছক্কা।
সফরকারীদের সফলতম বোলার কেশব মহারাজ ২৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নিলেন। তিনি আউট করলেন রোহিত এবং রাহুলকে। কাগিসো রাবাডা ৪ ওভার বল করে দিলেন ৫৭ রান। ওয়েন পার্নেল ৪ ওভারে দিলেন৫৪ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার কোনও বোলারই রবিবার ভারতীয় ব্যাটারদের বিরুদ্ধে সুবিধা করতে পারলেন না।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দু’উইকেট হারায় সফরকারীরা। প্রথম ওভার দীপক চাহার মেডেন নিলেন। দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসেই আরশদীপ সাজঘরে ফেরালেন বাভুমা এবং রিলি রুসোকে। কেউই খাতা খুলতে পারলেন না। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলের পরেই নিভল স্টেডিয়ামের বাতিস্তম্ভের আলো। প্রায় মিনিট ১৫ বন্ধ রাখতে হল খেলা। রবিবার প্রথম বার খেলা বন্ধ হয় অবশ্য ভারতের ইনিংসের মাঝামাঝি সময়। মাঠে হঠাৎ ঢুকে যায় একটি সাপ। সে জন্যও কিছু ক্ষণ বন্ধ রাখতে হয় খেলা।
আলো আসার পর খেলা শুরু হলেও সতর্ক ভাবেই ব্যাটিং করেন সফরকারীরা। মূলত উইকেট বাঁচিয়ে খেলার চেষ্টা শুরু করেন তাঁরা। তাতে ওভার প্রতি রান তোলার লক্ষ্য বাড়ার পাশাপাশি চাপও বাড়তে থাকে। যে চাপ শেষ পর্যন্ত আর সামলাতে পারেনি বাভুমার দল। কুইনন্ট ডি’কক এবং এডেন মার্করাম দলের ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করলেও লাভের লাভ হয়নি। শুরুতেই তৈরি হওয়া চাপ শেষ পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারলেন না সফরকারীরা। দু’জনের মধ্যে মার্করাম ছিলেন তুলনায় আগ্রাসী। যদিও রান তোলার গতি তেমন বাড়েনি। ১৯ বলে ৩৩ রান করে অক্ষর পটেলের বলে আউট হলেন মার্করাম। ৪টি চার এবং ১টি ছয় মারলেন তিনি। ডি’কক মূলত উইকেটের এক দিন আগলে রেখেছিলেন। এর পর দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের হাল ধরেন ডেভিড মিলার। ডি’ককের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তুললেন ১৭৪ রান। মিলারের ব্যাট থেকে এল অনবদ্য শতরানের ইনিংস। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দ্বিতীয় শতরান করলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকলেন ৪৭ বলে ১০৬ রান করে। নিজের ইনিংসটি সাজালেন ৮টি চার এবং ৭টি ছয় দিয়ে। ডি’কক শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন ৪৮ বলে ৬৯ রানে। তাঁর ব্যাট থেকে এল ৩টি চার এবং ৪টি ছয়।
সিরিজ় জিতলেও রোহিতের বোলারদের কঙ্কালসার দশা দেখিয়ে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। আরশদীপ শুরুতে ২ উইকেট তুলে নিয়ে ধাক্কা দিলেও শেষ পর্যন্ত ৪ ওভারে ৬২ রান দিলেন। যদিও ২ উইকেট নেওয়ায় তিনিই ভারতের সফলতম বোলার। অক্ষর ৫৩ রানে ১ উইকেট নিলেন। হর্ষল পটেল ৪৫ রান দিলেও কোনও উইকেট পেলেন না। সব থেকে কম রান দিলেন দীপক চাহার। তিনি ৪ ওভারে খরচ করলেন ২৪ রান। রবিচন্দ্রন অশ্বিন দিলেন ৩৭ রান। বোলারদের বেহাল দশা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে চিন্তায় রাখবে রাহুল দ্রাবিড়দের।