প্রাণহীন ইডেনে রোহিতের কাছে পুলের শস্ত্রশিক্ষা পাঠ শ্রেয়সের

 শেষ দুপুরের ইডেন (Eden Gardens)। রোহিত শর্মাদের (Rohit Sharma) টিম বাস ক্লাবহাউসের বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে সবে। আর পাঁচটা দিনে এতক্ষণে জন-অরণ্যহয়ে যায়! আজ কোথায় গেল সব? জন-মনুষ্য কোথায় আজ? গলার শিরা ফাটিয়ে বিরাট-রোহিতের নামে কেউ জয়ধ্বনি দিচ্ছে না, প্রাণাধিক প্রিয় ক্রিকেট নায়কদের দেখতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকছে না। সামান্যতম চাঞ্চল্যও নেই কোথাও।

ভারতীয় টিম (Indian Cricket Team) ইডেনে প্র্যাকটিসে নামলে ক্লাবহাউস লোয়ার টিয়ারে অন্তত জনা দু’শো দাঁড়িয়ে থাকে। মোবাইল ক্যামেরায় ক্রিকেটারদের ছবি তোলে, ঝুঁকে পড়ে ডাকে নাম ধরে, প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে রাখে সর্বক্ষণ। কিন্তু সোমবার যখন বিরাট কোহলি দু’টো ব্যাট বগলদাবা করে নেটে সর্বপ্রথম ঢুকে গেলেন বা ইডেনের আধুনিক বরপুত্রকে সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করতে দেখা গেল যখন, দৃকপাতও করলেন কেউ? নাহ্। করবেনটাও বা কে? লোয়ার টিয়ারে লোক কোথায়?

ফাঁকা, সব ফাঁকা।

ভাবাই যায় না, শহরে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ (India vs West Indies) তিন টি-টোয়েন্টির সিরিজ হচ্ছে। আগামী বুধবার থেকে টানা পাঁচ দিন ক্রিকেট-পক্ষ চলবে পুরোদমে। বিরাট খেলবেন। রোহিত খেলবেন। খেলবেন বেঙ্গালুরু নিলাম থেকে সদ্য কেনা সম্ভাব্য কেকেআর অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। কিন্তু শহরের সামান্যতম উৎসাহ-উত্তেজনাও নেই টি-টোয়েন্টি সিরিজকে ঘিরে। থাকবে কী করে? মাঠে ঢোকার অনুমতিই তো নেই। কোভিড হানা সামলে বেশ কিছু দিন ধরেই পুরনো ছন্দে ফিরছে শহর। সিনেমা হল খুলে গিয়েছে। অফিস-কাছারি খুলেছে। বার-রেস্তোঁরা-পাবে প্রেমদিবসে উনিশ-কুড়ির ভিড়। স্টেডিয়ামেও পঁচাত্তর শতাংশ দর্শক রেখে ম্যাচ আয়োজনের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তা স্বত্বেও ইডেনে লোক নেই। কী করা যাবে, বোর্ড অনুমতি দেয়নি।
তাই ফাঁকা, সব ফাঁকা।

সন্ধেয় সিএবিতে এ দিন এক সিএবি কর্তা হায়-আফসোস করে বলছিলেন, গত ২১ নভেম্বর ইডেনে নিউজিল্যান্ড টি-টোয়েন্টির সময়েও কত লোক গমগম করছিল। সাত দিন আগে থাকতে টিকিট-প্রত্যাশীদের চাহিদায় সিএবিতে তিষ্ঠানো দায় হয়ে গিয়েছিল। আর এবার সেখানে দু’দিন আগেও নিশ্চিন্তে বসে স্থানীয় ক্রিকেট নিয়ে বৈঠক করা গিয়েছে! বঙ্গ ক্রিকেট কর্তারা আক্ষেপ করে বলছেন, পুরোটাই ঢাক্যের বাদ্যিবিহীন দুর্গাপুজোর মতে হয়ে গেল। ঢাক না বাজলে যেমন পুজো মনে হয় না, ঠিক তেমনই দর্শক ছাড়া আন্তর্জাতিক ম্যাচের ওমটা পাওয়া যায় না। তবে হ্যাঁ, চেষ্টা করেছিল সিএবি। বোর্ডকে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করেছিল দর্শক প্রবেশের। লাভ হয়নি। আবারও একটা অনুরোধ করা হয়েছে। এবার দেখা যাক।

অথচ ক্রিকেটীয় রং-বাহারের কোনও অভাব নেই প্রেক্ষাপটে। ছ’বছর আগে ইডেন থেকে যে টিমটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বজয়ী হয়ে ফিরেছিল, তারাই এবার ভারতের প্রতিপক্ষ। কায়রন পোলার্ড, নিকোলাস পুরানরা সব আছেন। পোলার্ডকে এ দিন দেখা গেল, টিমের লেগস্পিনার হেডেন ওয়ালস জুনিয়রের বোলরিংয়ের সামনে নাগাড়ে রগড়াতে। করবেন কী দীর্ঘকায় ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক? সদ্য সমাপ্ত ওয়ান ডে সিরিজে তো তাঁকে মোটামুটি পকেটবন্দি করে ফেলেছিলেন যুজবেন্দ্র চাহাল। চাহালকে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও খেলতে হবে, অতএব, তাঁর স্পিনের রহস্যভেদ দ্রুত করা দরকার। ভারতীয় ট্রেনিংয়ে বিরাট কোহলির ফর্মে ফেরার প্রাণান্ত চেষ্টাকে বাদ দিলেও একটা ছবি আছে। নেটে পুল মারতে কিছু একটা সমস্যা হচ্ছিল শ্রেয়স আইয়ারের। সোজা চলে গেলেন, টিমের অধিনায়ক রোহিত শর্মার কাছে। এবং পুল-বিশেষজ্ঞ ভারতীয় ক্রিকেটের ‘হিটম্যান’ সোজা বসে পড়লেন শ্রেয়সের ক্লাস নিতে। কে বলবে, আজ থেকে একমাস পরে এঁরাই হবেন আইপিএলে সবচেয়ে হানাহানির যুদ্ধে দুই ছাউনির মুখ? মুম্বই-কেকেআর বৈরিতার কতা আর কে না জানে?

খবর রয়েছে কয়েকটা। শোনা গেল, পিচ নিয়ে একটা চোরা অসন্তোষ রয়েছে ভারতীয় টিমে। ইডেন পিচ চিরাচরিত যে রকম হয়, তেমনই হচ্ছে। পিচে বাউন্স থাকবে। কিন্তু ভারতীয় টিম নাকি একটু ব্যাটিং সহায়ক পিচ চেয়েছিল। পিচ দেখে ভারতীয় ব্যাটারদের কেউ কেউ নাকি বলেছেন, বাইশ গজে তাঁদের জন্য কিছুই নেই তেমন। ইডেন কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় যদিও পত্রপাঠ এ সব উড়িয়ে বললেন, পিচে একশো আশি থেকে দুশো উঠবে। ওয়ান ডে সিরিজে দারুণ খেলা ওয়াশিংটন সুন্দর আবার ছিটকে গেলেন টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে। তাঁর হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট রয়েছে। জয়ন্ত যাদবকে নেওয়া হয়েছে টিমে। অক্ষর প্যাটেলও নেই। তাঁর বদলি হিসেবে রয়েছেন হরপ্রীত ব্রার। অবস্থা যা, তাতে যুজবেন্দ্র চাহাল ছাড়া প্রথম সারির স্পিনার কেউ নেই টিমে। ভারতীয় ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোর আবার আগামী অক্টোবরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দামামা বাজিয়ে গেলেন। বললেন যে, টিমের ব্যাটিং নিয়ে আর তেমন কোনও চিন্তা নেই। ব্যাটিংকে অনেকটাই গুছিয়ে নেওয়া গিয়েছে। “বাকি দিকগুলোও বিশ্বকাপের আগে ঠিক করে ফেলতে হবে,” বলে দিলেন রাঠোর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকেও খবর আছে একটা। সেটা হল, এ দিন প্র্যাকটিস চলাকালীন মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়েন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার জেসন হোল্ডার। তাঁকে হাসপাতালেও নিয়ে যেতে হয়। রক্তচাপ নেমে গিয়েছিল।

ঘুরেফিরে কী দাঁড়াল? ইডেনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু আছে। পিচ নিয়ে খুচরো অসন্তোষ আছে। দুই শিবিরে চোট-আঘাত-অসুস্থতার খবর আছে। বিরাট কোহলির রানে ফেরার আকুতি আছে। ইডেনের বরপুত্র রোহিতের অধিনায়কের রাজবেশে পদার্পণ আছে। আন্তর্জাতিক ম্যাচে রাজসূয় যজ্ঞে যা যা উপকরণ দরকার, সব আছে। নেই শুধু একটা জিনিস। প্রাণ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.