আজ বৃহস্পতিবার চেন্নাইয়িন এফসি ম্যাচ জিততে পারলেই সেমিতে জায়গা পাকা হয়ে যাবে। শীর্ষ স্থান দখলের লড়াইয়ে এক ধাপ তারা উপরে উঠে আসবে। যে কারণে পুরো এটিকে মোহনবাগান শিবির জুড়ে শুধুই ৩ পয়েন্টের ভাবনা।
তবে চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে জেতাটা সহজ নয়। প্রথম লেগের ম্যাচে তারা চেন্নাইয়িনের সঙ্গে ১-১ ড্র করেছে। এ দিকে আজকের ম্যাচে ৩ পয়েন্ট অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। এ দিনের ম্যাচ জিতলে, এর পর লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে জামশেদপুরকে দু’গোলের ব্যবধানে হারাতে পারলে, তবেই শীর্ষ স্থানের দখল নিতে পারবে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। ট্রেন্ডিং স্টোরিজ
এই মুহূর্তে ১৮ ম্যাচে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকার তিনে রয়েছে এটিকে মোহনবাগান। চেন্নাইয়িনের পয়েন্ট ১৯ ম্যাচে ২০। তারা রয়েছে লিগ তালিকার ৮ নম্বরে। আগেই প্লে-অফে ওঠার আশা শেষ হয়ে গিয়েছে চেন্নাইয়িনের।
চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে নামার আগে এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দো সাংবাদিকদের যা বললেন:
হায়দরাবাদকে হারিয়ে দিয়েছে জামশেদপুর। যার ফলে এক নম্বরে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শীর্ষে থেকে লিগ পর্ব শেষ করার বিষয়ে কতটা আশাবাদী?
এখন আমাদের সামনে চেন্নাইয়িন ম্যাচ। আর সেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখন আর অন্য কিছু নিয়ে ভেবে লাভ নেই। শুধু চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে কী করে তিনটে পয়েন্ট পাওয়া যায়, তা নিয়েই শুধু ভাবতে হবে আমাদের।
শেষ ম্যাচে জামশেদপুরকে দুই বা তার বেশি ব্যবধানে হারানোটা কি আপনাদের কাছে বিশাল চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়?
অবশ্যই। তবে যখন আমরা একটা দলের বিরুদ্ধে জয়ের কথা ভাবি, তখন এক গোলে জেতার কথা নিশ্চয়ই ভাবি না। অন্তত ২-৩ গোলে জেতার কথা ভাবি। আমরা মাঠে নেমে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার কথাই ভাবি। জামশেদপুরের বিরুদ্ধেও সে রকমই মানসিকতা থাকবে। তবে সবার আগে আমাদের চেন্নাইয়িনকে হারিয়ে তিন পয়েন্ট পেতে হবে। জামশেদপুরকেও আবার ওড়িশার বিরুদ্ধে খেলতে হবে। সব দলই পেশাদার এবং সব দলই তাদের শেষ ম্যাচে ভাল খেলতে চায়। কারণ, দলের সব খেলোয়াড়ই জানে, এটাই তাদের কাছে নিজেদের প্রমাণ করার শেষ সুযোগ।
হুগো বৌমাস, ডেভিড উইলিয়ামসদের শারীরিক অবস্থা এখন কেমন?
ওরা ক্রমশ সেরে উঠছে। চোট লাগলে সাধারণ, ৮-৯ দিন লেগে যায় সেরে উঠতে। কিন্তু যখন দু’দিন পরেই ম্যাচ এবং শেষ তিন-চারটে ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তখন সেরে ওঠার তাগিদটা অনেক বেশি থাকে। তবে ওরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই দ্রুত সেরে উঠছে। আরও সময় লাগবে। তবে প্রতি দিনই উন্নতি করছে ওরা।
ডেভিড উইলিয়ামস বা রয় কৃষ্ণকে কি চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে শুরু থেকে খেলাতে পারেন?
দেখা যাক। ওরা কী অবস্থায় রয়েছে, মাঠে নেমে কতটা নিজেদের মেলে ধরতে পারছে, বলে কেমন শট নিচ্ছে, কিছু শারীরিক কসরত করার পরে ওরা কেমন বোধ করবে, অনুশীলনে এ সব দেখে নিয়ে তার পরে সিদ্ধান্ত নেব।
সন্দেশ ঝিঙ্গান গত ম্যাচে পুরো ৯০ মিনিট খেলে এবং ম্যাচের সেরার পুরস্কারও পায়। তিরির সঙ্গে ওর জুটি নিয়ে কি আপনি খুশি?
দলের সব খেলোয়াড়দের নিয়েই আমি খুশি। সন্দেশের পারফরম্যান্সেও যথেষ্ট খুশি আমি। তবে আমি জানি, ও আরও ভাল খেলতে পারে। ও এখন ৬০ শতাংশ দিতে পারছে। এএফসি কাপের সময় একশো শতাংশ দেওয়ার জায়গায় চলে আসবে বলেই মনে হয় আমার। কারণ, ও পরিশ্রম করতে চায়। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
চেন্নাইয়িন এফসি-র শক্তি কোথায় কোথায়?
চেন্নাইয়িনের মাঝমাঠটা বেশ শক্তিশালী। ওদের অনিরুদ্ধ থাপা, ভ্লাদিমিক কোমানের মতো খেলোয়াড় রয়েছে। এ ছাড়া ভাল্সকিসের ব্যাপারে সবাই জানে। যদিও ও সেরা জায়গায় নেই, তবে বক্সের বাইরে হোক বা ভেতরে, ও খুবই বিপজ্জনক। গত তিনটি ম্যাচে ওকে বক্সের আরও কাছাকাছি দেখা যাচ্ছে। ও নিজের পজিশনটা খুব ভাল বোঝে, দারুন ক্রস দেয়। ওদের রক্ষণ বেশ ভাল। ওদের ট্রানজিশনও খুব ভাল। ওড়িশা, গোয়ার বিরুদ্ধে ওরা বোধহয় ৯০ মিনিট পর্যন্ত ফোকাস বজায় রাখতে পারেনি। তবে আমার মতে, চেন্নাইয়িন এই মরশুমে, বিশেষ করে প্রথম লেগে ভাল খেলেছে।
চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে কি আপনারা অল আউট আক্রমণে যাবেন?
সব ম্যাচেই কিছু না কিছু পরিকল্পনা থাকে। এই ম্যাচেও। তবে সেটা কাল ঠিক করব।
লিস্টন কোলাসো ও জনি কাউকোর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে আপনার কী ধারণা?
জনিকে নিয়ে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নেই। যারা দেখেছে ওর খেলা, তারা জানে ও নিখুঁত ফুটবল খেলছে। শুধু যে গোল করার দক্ষতা আছে ওর, তা নয়। ওর টাইমিং, পাসিং, বল নিয়ন্ত্রণ, বল ধরে খেলা দরকার হলে তা করা, সব ব্যাপারেই ও অসাধারণ। আমি খুবই খুশি। লিস্টনকে ছোটখাটো ব্যাপারে আরও উন্নতি করতে হবে। আরও ট্রেনিং সেশন পেলে ও আরও উন্নতি করবে বলেই আমার ধারণা।
জনি কাউকো ও হুগো বৌমাস—দু’জনই যদি ফিট থাকে, তা হলে কাকে প্রথম দলে রাখবেন? নাকি দু’জনকেই খেলাবেন?
কেন নয়? হুগো আর জনি তো গত ম্যাচেও একসঙ্গে শুরু থেকে খেলেছে। হুগোর চোট লাগার পরে আমরা সিস্টেম বদলে ৩-৫-২-এ চলে যাই। শেষে ৪-৪-২-এ খেলি। সুতরাং ওদের দুজনের একসঙ্গে খেলা সম্ভব। কারণ, ওরা আমাদের স্টাইলের পক্ষে নিখুঁত।
এর আগে আপনাকে গোলের পরে উল্লসিত হতে দেখা যাচ্ছিল না। এখন সাইডলাইনে আপনার উল্লাস দেখা যাচ্ছে। এখন কি আপনি আগের চেয়ে খুশি?
কেরালার বিরুদ্ধে উইলিয়ামসের গোলটা দেখে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে লিস্টন যে গোলটা করেছিল, তাতেও খুব খুশি হয়েছিলাম। আসলে যখন দলের কোনও খেলোয়াড় একেবারে ঠিক ঠিক জায়গায় থেকে, সঠিক মুভ করে, নিখুঁত একটা শটে গোল করে, তখন তা দেখে অনেক ভাল লাগে। ছেলেরা যখন একেবারে সঠিক জায়গা দিয়ে আক্রমণে উঠে সঠিক ভাবে গোলের সুযোগ তৈরি করে, তখন কোচ উচ্ছ্বসিত হবেই।
এত ঘন ঘন ম্যাচ বলে কি খেলোয়াড়রা অনুশীলনেও ক্লান্ত হয়ে পড়ছে?
হ্যাঁ, এটা একটা সমস্যা। দলকে প্রস্তুত করা বেশ কঠিন। কারণ, সময় খুব কম। যেমন কাল বৃহস্পতিবার ম্যাচের তিন দিন পরে (৭ মার্চ) আমরা জামশেদপুরের বিরুদ্ধে খেলব। এখন যা অবস্থা, ম্যাচ খেলো, বিশ্রাম নিয়ে তরতাজা হও, আবার ম্যাচে নেমে পড়ো। আশা করি, এএফসি কাপের আগে আমরা ভাল প্রি-সিজন করতে পারব।