হাইব্রিড মডেলের সৌজন্যে এশিয়া কাপে নিয়ে জটিলতা ইতমধ্যেই কেটে গিয়েছে। তাই মনে করা হয়েছিল ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলতে আসা নিয়ে এবার পাকিস্তান আর কোনও অজুহাত খাড়া করবে না। কিন্তু তেমনটা আর হচ্ছে কোথায়! চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে পিসিবি-র তরফ থেকে প্রস্তাবিত কয়েকটি ভেন্যু নিয়ে অনীহা রয়েছে। যদিও এই ইস্যু নিয়ে বাবর আজমদের ক্রিকেট বোর্ডের তরফ থেকে কোনও সরকারি বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে শোনা যাচ্ছে ইতমধ্যেই বেশ কয়েকটি ম্যাচের ভেন্যু বদল নিয়ে আইসিসি ও আয়োজক সংস্থা বিসিসিআই-কে ভাবনাচিন্তা করতে বলেছে পাক বোর্ডের কর্তারা। শোনা যাচ্ছে মূলত দুটি ইস্যু নিয়ে মূলত চর্চা হয়েছে। প্রথমত: ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ আহমেদাবাদ থেকে সরিয়ে ইডেন গার্ডেন্সে নিয়ে আসা হোক। দ্বিতীয়ত: চেন্নাইতে আফগানিস্তান ও বেঙ্গালুরুতে অষ্ট্রেলিয়ার বিরদ্ধে পাক দলের খেলার কথা। সেই দুটি ম্যাচের ভেন্যু বদল করার ব্যাপারেও দাবি করা হয়েছে। তবে আইসিসি ও বিসিসিআই পাকিস্তানের এই দাবি মেনে নেবে কিনা সেই ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা পাওয়া যায় নি।
প্রস্তাবিত সূচি অনুসারে ৮ অক্টোবর পাক দলের হায়দরাবাদে নামার কথা। ১২ অক্টোবর দ্বিতীয় ম্যাচেও ভেন্যুও চারমিনারের শহর। দুটি ম্যাচই কোয়ালিফায়ার দলের বিরুদ্ধে। এরপর ১৫ অক্টোবর বাইশ গজের যুদ্ধে ‘মাদার অফ অল ব্যাটল’ হওয়ার কথা। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামকে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। কাপ যুদ্ধের ফাইনালে উঠলে পাকিস্তানের আহমেদাবাদে খেলতে কোনও অসুবিধা নেই। তবে গ্রুপ পর্বে গুজরাতে খেলতে মহম্মদ রিজওয়ান-শাহিন শাহ আফ্রিদিদের বোর্ডের কর্তারা আপত্তি জানিয়েছেন। কারণ এই ভেন্যুতে ম্যাচ আয়োজনের জন্য পাক বোর্ডের কর্তারা রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন! শোনা যাচ্ছে পাক বোর্ড নাকি রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের বিরুদ্ধে ইডেনে খেলতে চায়।
২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত বনাম পাক মহারণ প্রথমে ধর্মশালাতে আয়োজিত হওয়ার কথা ছিল। তবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে সেই ম্যাচের ভেন্যু কয়েক ঘণ্টার বদলে ইডেন হয়ে যায়। তবে এবার তেমনই কিছু হবে কিনা সেটা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যাচ্ছে না। কারণ রজার বিনি বোর্ড সভাপতি হলেও, এই মুহূর্তে বিসিসিআই-এর শেষ কথা যে জয় শাহ সেটা বুঝে নিতে মাধ্যমিক পাশ করতে হয় না! এই ম্যাচের ভেন্যু নিয়ে অনেক আগে থেকেই সরব ছিলেন সদ্য প্রাক্তন পিসিবি প্রধান নাজম শেঠি। তবে এতে লাভ হবে বলে মনে হয় না।
ভারত বনাম পাক ম্যাচের ভেন্যু ছাড়া, আরও দুটি ম্যাচের ভেন্যু নিয়ে প্রতিবেশী দেশের আপত্তি রয়েছে। ২০ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুতে পাক দলের খেলার কথা। এরপর ২৩ অক্টোবর চেন্নাইতে আফগানিস্তান ও ২৭ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলবে। এই তিনটি ম্যাচ খেলে কলকাতায় আসবেন বাবর আজমরা। ইডেনে ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলার কথা। এরপর নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের ম্যাচের ভেন্যু বেঙ্গালুরু। সেই ম্যাচের পর লিগের শেষ খেলা ১২ অক্টোবর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এই ম্যাচটিও ইডেন পেয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। আর এখানেই আপত্তি জানিয়েছে পাক বোর্ড। তাদের দাবি কিউইদের বিরুদ্ধে ম্যাচটি বেঙ্গালুরুতে না দিয়ে কলকাতায় দিলে যাতায়াতের ঝামেলা কমে যায়। তবে বাবর আজমদের বোর্ডের দাবি আইসিসি ও আয়োজক দেশ ভারত কি আদৌ মেনে নেবে? এখন সেটাই দেখার।
ভারত বনাম পাক ম্যাচ নিয়ে এর আগেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। ২০১১ সালে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ থেকে ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে আসা নিয়েও অনেক জট পেকেছিল। কিন্তু দিনের শেষে সব ইগো ও রাজনীতির লড়াইকে পিছনে ফেলে জিতেছিল ক্রিকেট। এবারও তেমনই কিছু ঘটবে বলে আশা করছে ক্রিকেট দুনিয়া।