ফের লজ্জাজনক হারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্বপ্নভঙ্গ ভারতের। অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ চারের ম্যাচে ভারতের পারফরম্যান্স দেখলে কেউ বলবে না, এই দলটি এত দিন কাপ জেতার দৌড়ে ফেভারিট ছিল। রোহিত শর্মা, কে এল রাহুলদের থেকে আরও সাহসী ক্রিকেট আশা করেছিলাম।
ইংল্যান্ডকে দেখে মনেই হল না, প্রথম দলের দুই ক্রিকেটার চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছে। প্রথম বল থেকে ওদের ইতিবাচক মনোভাবই এই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিল। ভারত পিছিয়ে পড়ল তাদের নেতিবাচক মানসিকতার জন্য। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এতটা সাবধানতার আদৌ কি কোনও প্রয়োজন আছে?
শুরুতেই বলব ওপেনিং জুটির কথা। বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত কে এল রাহুল ও রোহিত শর্মা একটিও ৩০ রানের জুটি গড়তে পারেনি। প্রত্যেক ম্যাচের শুরুতেই একজন ওপেনারকে হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে আমরা ছয় থেকেসাত রান রেটে স্কোর করেছি। দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তো তারও মন্থর গতিতে রান উঠেছে। লক্ষ্য করে দেখবেন, আমরা কিন্তু প্রত্যেকটি ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। সৌজন্যে বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব ও শেষ চারের ম্যাচে হার্দিক পাণ্ড্য। এই তিন ব্যাটারের মধ্যে কোনও একজন ব্যর্থ হলে ভারতীয় দলের কী অবস্থা হয়, তার প্রমাণ রেখে গেল অ্যাডিলেড।
রোহিতের নড়াচড়াই বলে দিতে পারে ও আনফিট। টি-টোয়েন্টি খেলার মতো উপযুক্ত ফিটনেস ওর নেই। অ্যাডিলেডের আড়াআড়ি দিকটা ছোট। রোহিতকে সেখানে একটিও ভাল পুল শট খেলতে দেখলাম না। অথচ এটাই ওর শক্তি। রাহুল আর কবে বড় ম্যাচে রান করবে? ক্রিস ওকসের বলঅতটা বাউন্স করার পরেও ও থার্ডম্যান অঞ্চলে কেন খেলতে গেল? ব্যাটের কোণে লেগে বল কিপারের হাতে চলে যাওয়াই তো স্বাভাবিক। রাহুল দ্রুত আউট হওয়ায় রোহিতও নেতিবাচক পথ বেছে নিল। বিরাট কোহলি এক দিক থেকে আক্রমণাত্মক ইনিংস না খেললে ছয় ওভার শেষে এক উইকেটে ৩৮ রানও হত না। এতটা নেতিবাচক ওপেনিংয়ের জন্যই ২০ ওভারে ১৬৮-৬ স্কোরে আটকে গেল ভারত। ১৯০-এর পিচে এই রান করে জেতা সম্ভব নয়। ইংল্যান্ড যা তুলে দিল মাত্র ১৬ ওভারে কোনও উইকেট না খুইয়ে।
চাপের মধ্যেও ৪০ বলে ৫০ রান করে গেল বিরাট। এর চেয়ে দ্রুত রান করার জায়গা ছিল না ওর। রোহিতের ২৮ বলে ২৭ রানের ইনিংস ও সূর্যকুমারের ব্যর্থতা বড় ধাক্কা দিয়ে গিয়েছিল ভারতীয় শিবিরে। শেষের দিকে হার্দিকের ৩৩ বলে ৬৩ রানের ইনিংস না থাকলে অবস্থা আরও খারাপ হত।
নেতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত পাওয়া গেল দলগঠনেও। যুজ়বেন্দ্র চহালের মতো একজন লেগস্পিনার থাকা সত্ত্বেও অক্ষর পটেল অথবা আর অশ্বিন কোন যুক্তিতে সুযোগ পায়? আদিল রশিদ চার ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে সূর্যের উইকেট তুলে নিয়েছে। কারণ ও মন্থর গতিতে বল ঘোরানোর চেষ্টা করেছে। সেখানে অক্ষর ৯৫ কিমি প্রতি ঘণ্টায় বল করছে। মাঝে মধ্যে সেই গতি ১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টাও ছাপিয়ে যাচ্ছে। এই পিচে মিডিয়াম পেসারের গতিতে একজন স্পিনার কেন বল করবে? গুড লেংথে ক্রমাগত ওই গতিতে বল ফেললে রান আটকানো যেত। কিন্তু অক্ষর একটার পর একটা খাটো লেংথের বল করে গেল। বাটলার ও অ্যালেক্স হেলস পুল করে ভারতের হাত থেকে ম্যাচ নিয়ে যেতে থাকল।
যে হেতু ফিঙ্গারস্পিনারদের চেয়ে রিস্টস্পিনারেরা বেশি রান দেয়, তাই চহালকে খেলানোর সাহস দেখাল না রোহিত ও রাহুল দ্রাবিড়। কিন্তু হাই ভোল্টেজ ম্যাচে রান আটকানোর চেয়েও উইকেট তোলা বেশি জরুরি। ভারতীয় থিঙ্কট্যাঙ্ক কেন এতটা রক্ষণাত্মক ভঙ্গি অবলম্বন করল, জানা নেই।
ভুবনেশ্বর কুমারের বোলিংও অবাক করেছে। বাটলারকে বেশির ভাগ ইনসুইংয়ে আউট করেছে ও। এ দিন একটার পর একটা আউটসুইং করিয়ে গেল। বাইরে ফেলে আরও বাইরে নিয়ে গেল বল। বাটলার হাত খোলার জন্য জায়গা চায়। প্রথম ওভার থেকেই তা পেয়ে গিয়েছিল।
টি-টোয়েন্টির দলগঠন নিয়ে এ বার ভাবা উচিত নির্বাচকদের। সঞ্জু স্যামসন, শুভমন গিলদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। দু’জনেই আইপিএল এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল ছন্দে রয়েছে। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে শুভমন সেঞ্চুরিও করেছে। ওদের আর কত প্রমাণ করতে হবে? উমরান মালিককে নিয়ে এত আলোচনা করে কী লাভ হল? ওর এক্সপ্রেস গতি অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশে সব চেয়ে ভাল কাজে লাগানো যেত। নির্বাচকেরা ভাবুন। বেশি দেরি করলে পরের বিশ্বকাপ থেকেও মাথা নিচু করে ফিরতে হবে।