দলের বড় ব্যবধানে জয়, অধিনায়কের জোড়া গোল, ইংল্যান্ডের জন্যই যেন ছিল এই রাত। ৪-০ গোলে ইউক্রেনকে উড়িয়ে দিয়ে দাপটের সঙ্গে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড। সঙ্গে হ্যারি কেনের গোল। এটাই তো দেখার অপেক্ষায় ছিল ইংল্যান্ডবাসী।
গ্রুপ পর্ব এবং প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠেই খেলেছে ইংল্যান্ড। এই প্রতিযোগিতায় প্রথম বারের জন্য বিদেশে পা রেখেছিলেন কেনরা। রোমের মাঠে যদিও ইংরেজ সমর্থকদের উচ্ছ্বাস সেই অভাব বুঝতে দেয়নি।
আলো ঝলমল স্টেডিয়ামে মাত্র চার মিনিটের মাথায় হলুদ জার্সিধারী উইক্রেন ফুটবলারদের মুখে অন্ধকার নামিয়ে আনেন কেন। রাহিম স্টার্লিংয়ের পাস থেকে কেনের গোল। শুরুতেই এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। সেই সঙ্গে যেন কেন বুঝিয়ে দেন শনিবারের রাতটা তাঁরই।
এ বারের ইউরো কাপের পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। গোল করেছে আটটি। তার মধ্যে কেন করেছেন তিনটি। বাকি রয়েছে সেমিফাইনাল এবং সেখানে জিততে পারলে ফাইনাল। দুই ম্যাচে গোল করে এ বারের প্রতিযোগিতায় সোনার বুট পাওয়ার সুযোগ রয়েছে তাঁর কাছে। পাঁচ গোল করে শীর্ষে রয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং প্যাট্রিক শিক। কিন্তু তাঁদের দল পর্তুগাল এবং চেক প্রজাতন্ত্র ইতিমধ্যেই ছিটকে গিয়েছে।
শনিবারের ম্যাচে শুরু থেকেই কেনকে আটকে রাখার জন্য ঘিরে রেখেছিলেন চার জন হলুদ জার্সিধারী। ইউরোর প্রতি ম্যাচেই কেনকে আটকে রাখতে এই রণনীতি নিয়েছে বিপক্ষ দল। আর সেই সুযোগে বার বার কামান দেগেছে ডান প্রান্ত ধরে উঠতে থাকা জেডন স্যাঞ্চো এবং কাইল ওয়াকার।
অন্য প্রান্তে রয়েছেন স্টার্লিং। কেনকে আটকাতে ব্যস্ত থাকা বিপক্ষের ফুটবলাররা খেয়ালই করেননি ইংল্যান্ডের দুই প্রান্ত থেকে উঠে আসা এই আক্রমণ। শুরুতেই তা বিপদে ফেলে ইউক্রেনকে। বাঁ দিক থেকে ভিতরে ঢুকে এসে স্টার্লিং এমন পাস বাড়ান যে গোলের সামনে একা গোলরক্ষক এবং কেন। মুহূর্তের মধ্যে বল জালে জড়িয়ে দেন ইংরেজ অধিনায়ক।
কেন যেন গন্ধ পেয়েছিলেন স্টার্লিংয়ের সেই পাসের। নিজেকে অফসাইডের হাত থেকে বাঁচাতে মুহূর্তের জন্য থেমে গিয়ে ইউক্রেনের রক্ষণকে নামতে দিয়েছিলেন। আর ভিতরে ঢুকে আসতে ঠিক সেই সময়টুকুই যেন নিলেন ম্যাঞ্চেস্টার সিটির প্রাণভ্রমরা। তার পরেই একটা পাস এবং চার জন ডিফেন্ডারের এক সঙ্গে বোকা বনে যাওয়া। সিংহের ক্ষিপ্রতায় সেই বলের দিকে ছুটে যান কেন। এবং গোল।
দেশের হয়ে খুব বেশি গোল করতে পারছিলেন না কেন। শনিবারের আগে এ বারের ইউরোতে মাত্র একটি গোল এসেছিল তাঁর পা থেকে। তবে সেটা এসেছিল জার্মানির বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে। তাঁর গোলই নিশ্চিত করে দিয়েছিল জার্মানির হার। ইউক্রেন ম্যাচে দেশকে জোড়া গোল উপহার দিয়ে সেই ছন্দটাই যেন ধরে রাখার ইঙ্গিত দিলেন কেন।বুঝিয়ে দিলেন ছন্দ আসবে যাবে, প্রতিভা থেকে যাবে।
প্রথম গোল কেনকে আত্মবিশ্বাস দিল, আনন্দ দিল এবং মানসিক শক্তি দিল। দ্বিতীয়ার্ধে পাঁচ মিনিটের মাথায় ফের গোল করেন তিনি। তার আগে যদিও হ্যারি ম্যাগুয়ের দলের গোল সংখ্যা বাড়িয়ে দেন। ইউক্রেনের কফিনে শেষ পেরেকটা পোঁতেন জর্ডান হেন্ড্যারসন। ৪-০ করে দেন তিনি।
কেন ছন্দে থাকলে ইংল্যান্ড যেন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ৭২ মিনিট মাঠে ছিলেন ইংরেজ অধিনায়ক। গোলে চার বার শট নেন, তিন বার হেড করেন। ড্রিবল, ট্যাকল, সব করেছেন তিনি। নিজেকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ যেন উপভোগ করছিলেন কেন। দেশের হয়ে ৫৯ ম্যাচে করে ফেললেন ৩৭টি গোল।
পরের ম্যাচ ঘরের মাঠ ওয়েম্বলিতে। বিপক্ষে লড়াকু ডেনমার্ক। গ্রুপ পর্ব থেকেই যে দেশ ছিটকে যেতে বসেছিল, সেই ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের দেশ এখন সেমিফাইনালে। বিপক্ষে রক্তের স্বাদ পেয়ে যাওয়া হ্যারি কেনের ইংল্যান্ড। এই ইউরোতে এখনও অবধি যাঁদের গোলে বল ঢোকেনি, সাদা জামায় একটুও দাগ লাগতে দেননি ইংরেজরা।