ঘড়ির কাঁটায় তখন পৌনে সাতটা। প্রথমে অনুশীলনে নামল ইস্টবেঙ্গল। তার মিনিট পাঁচেক পরে এটিকে মোহনবাগান। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের দুই কোণ থেকে একটা চিৎকার শোনা গেল বটে, তবে সেটা নেহাতই সামান্য। দু’দিক মিলিয়ে মেরেকেটে হাজির হাজার পাঁচেক সমর্থক। অন্য সময় হলে অনুশীলনের আগেই গমগম করত যুবভারতী। ম্যাচের ঘণ্টাখানেক আগেই প্রায় হাজার তিরিশ-চল্লিশ সমর্থক হাজির হয়ে যেতেন। শনিবার অবশ্য মুখে বলে না দিলে বোঝা অসম্ভব যে ডার্বি শুরু হতে চলেছে কয়েক মিনিট পরে। কলকাতা ডার্বি কোনও দিন দৃশ্য দেখেনি।
সমর্থকদের প্রতিবাদ চলছিল অনেক দিন ধরেই। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ক্ষোভ ক্লাবের কিছু কর্তার দিকে। অন্য দিকে, মোহনবাগান সমর্থকেরা চান ক্লাবের নামের আগে থেকে উঠে যাক ‘এটিকে’ শব্দটি। দুই দলের সমর্থকেরাই নিজ নিজ কারণে বয়কটের ডাক দিয়েছেন। এত দিন সমর্থকদের যাবতীয় বিপ্লব স্রেফ ফেসবুক, টুইটারেই আটকে ছিল। অনেক দিন পর তা ছড়িয়ে পড়ল মাঠে। বয়কটের ডাক যে দুই দলের সমর্থকরাই ভেবেচিন্তে নিয়েছেন, তা যুবভারতীর দর্শকসংখ্যা দেখে পরিষ্কার।
মাঠে ঢোকার আগে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের প্রধান গেটের বাইরে চোখে পড়ল ইতিউতি দুই প্রধানের সমর্থকদের জটলা। মোহনবাগানের দুই সমর্থক একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এ বার মনে হচ্ছে সমর্থকরা প্রতিবাদটাকে সিরিয়াসলি নিয়েছে। এত দিন শুধু ফেসবুকেই শুনতাম।” কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের জনাকয়েক সমর্থক। তাঁদের এক জন বললেন, “না রে, সবার কথা শুনে না এলেই ভাল হত। কেউ তো নেই। এ রকম ডার্বি কি আগে দেখেছি?”
ওই সমর্থকের কথাই মিলে গেল। সত্যিই গ্যালারি ভরতে দেখা গেল না। শেষ বার কবে এ রকম ‘দর্শকহীন’ ডার্বি দেখেছে কলকাতার মানুষ, তা অনেকেই মনে করতে পারছেন না। বছর আটেক আগে আই লিগের ডার্বিতে এ ভাবে সমর্থকদের গণবয়কট দেখা গিয়েছিল। তবে কর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নয়, টিকিটের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে। সে ভাবে অস্বাভাবিক দাম রাখা হয়েছিল টিকিটের, যা মেনে নিতে পারেননি কলকাতা ফুটবলপ্রেমীরা। দু’দলের বেশির ভাগ সমর্থকই ম্যাচে না আসার সিদ্ধান্ত নেন।
এ বার প্রতিবাদের ধরন আলাদা। কিন্তু একটা ব্যাপারে মিলে গেল দুই সমর্থকদের ঐক্য। কেউ মুখর কর্তাদের বিরুদ্ধে, কেউ মুখর ক্লাবের নাম নিয়ে। লড়াই ভুলে সমর্থকদের অন্য ঐক্য দেখা গেল।