ঘরের মাঠে বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারিয়ে প্লে-অফের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল ইস্টবেঙ্গল। রবিবার ২-১ গোলে জিতেছে লাল-হলুদ। সাউল ক্রেসপো এবং ক্লেটন সিলভা গোল করেছেন। বেঙ্গালুরুর একমাত্র গোল সুনীল ছেত্রীর। জয়ের ফলে ২১ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকায় ছয়ে উঠে এল ইস্টবেঙ্গল। পরের ম্যাচ পঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে। সেটি জিততে পারলে প্লে-অফ নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের। পঞ্জাব ইতিমধ্যেই প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছে। এ ছাড়াও, আইএসএলের ইতিহাসে এই প্রথম টানা দু’টি ম্যাচে জিতল ইস্টবেঙ্গল।
শুরু থেকেই মাঝমাঠে খেলা চলছিল দুই দলের। কোনও দলই বলার মতো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। বেঙ্গালুরুর শিবশক্তির কাছে একটি সুযোগ এসে গিয়েছিল। তিনি অফসাইডের ফাঁদে পড়েন। প্রথম ভাল সুযোগ এসেছিল বেঙ্গালুরুর কাছেই। বক্সের ডান দিকে ফানাইয়ের কাছে একটি ক্রস ভেসে এসেছিল। তিনি পাস দেন শিবশক্তিকে। বেঙ্গালুরুর ফুটবলার পায়ের টোকায় বল জালে জড়াতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার প্রভসুখনের মাথায় লেগে তা বেরিয়ে যায়। অল্পের জন্য গোল খাওয়া থেকে বেঁচে যায় ইস্টবেঙ্গল।
কয়েক মিনিট পরেই এগিয়ে যায় লাল-হলুদ। বেঙ্গালুরুর বক্সের ভিতরে নাওরেম মহেশকে ফাউল করেন ফানাই। রেফারি পেনাল্টি দেন। পেনাল্টি থেকে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন ক্রেসপো। কিছু ক্ষণ পরেই গোল খেতে পারত ইস্টবেঙ্গল। বেঙ্গালুরুর ড্রস্টকে বল পাস দিয়ে দেন হিজাজি মাহের। কিন্তু শৌভিক চক্রবর্তীর সৌজন্যে সে যাত্রা বেঁচে যায় ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচে কিছু ক্ষণ ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণের পর আবার এক টানা আক্রমণ চালায় বেঙ্গালুরু। বিরতির আগের মুহূর্তে আবার চাপ বাড়ায় ইস্টবেঙ্গল। ক্রেসপো পাস দেশ বিষ্ণুকে। তিনি পাস দেন ক্লেটনকে। গোল ছেড়ে এগিয়ে এসেছিলেন বেঙ্গালুরুর গোলকিপার গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু। তা দেখে আবার বিষ্ণুকে পাস দেন ক্লেটন। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ফুটবলার বল ধরে রাখতে পারেননি।
বিরতির পরে বিষ্ণুকে তুলে নেন কুয়াদ্রাত। নামান সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শুরু থেকে আক্রমণ করতে থাকে বেঙ্গালুরুই। ৬০ মিনিটেই সমতা ফেরায় তারা। সুনীলের ক্রস লাগে হরমনজ্যোত খাবরার হাতে। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টি দেন। সেখান থেকে সমতা ফেরান সুনীল। প্রভসুখন ঠিক দিকে ঝাঁপালেও বলের নাগাল পাননি। পরের মিনিটে আবার পেনাল্টির আবেদন করে বেঙ্গালুরু। এ বারও খাবরার হাতে বল লাগার আবেদন করা হয়। রেফারি তাতে পাত্তা দেননি।
অতীতে এগিয়ে গিয়েও পয়েন্ট নষ্ট করে আসার প্রবণতা দেখা গিয়েছে ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে। কিন্তু মরণ-বাঁচন ম্যাচে কোনও সুযোগই নষ্ট করতে চায়নি তারা। গোল খেয়েও এক টানা আক্রমণ চালিয়ে যায় এবং তার সুফলও পায়। ৭৩ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন ক্লেটন। বাঁ দিকে বল পেয়েছিলেন নিশু কুমার। তিনি বক্সে থাকা ক্লেটনের উদ্দেশে নিখুঁত পাস বাড়িয়েছিলেন। হেডে গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন ক্লেটন।
খেলা যত এগোতে থাকে তত বেঙ্গালুরুর চাপ বাড়তে থাকে। মাঠে থাকা হাজার তিরিশের লাল-হলুদ সমর্থকেরা তখন ভাবতে শুরু করেছেন, আবার তীরে এসে তরী ডুববে না তো? মাঠে দু’দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেও উত্তেজনা শুরু হয়। দু’দলের কোচই হলুদ কার্ড দেখেন। সময় নষ্টের জন্য হলুদ কার্ড দেখানো হয় প্রভসুখনকেও। তিনি পঞ্জাব ম্যাচে খেলতে পারবেন না। তবে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে আমন সিকে যে সুযোগটি মিস্ করলেন তা অবিশ্বাস্য। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে ফেলিসিয়ো ব্রাউন পাস দিয়েছিলেন আমনকে। গোলকিপার গুরপ্রীতকে কাটিয়ে সামনে ফাঁকা গোল পেয়েছিলেন আমন। কিন্তু বল এতটাই ভিতর দিকে টেনে ফেলেন যে অনেকটা এগিয়ে যায়। তার পরেও ফাঁকা গোল ছিল সামনে। শট মারতে যাওয়ার মুহূর্তে পিছলে পড়ে যান। উঠে দাঁড়িয়ে আবার নেওয়া তাঁর শট বাঁচিয়ে দেন গুরপ্রীত।