দাপটের সঙ্গে খেলেই শেষ ষোলোয় উঠে গেল আর্জেন্টিনা। পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারাল তারা। দ্বিতীয়ার্ধে গোল দু’টি করলেন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার এবং জুলিয়ান আলভারেস। প্রথমার্ধে লিয়োনেল মেসি পেনাল্টি নষ্ট করেন। তবে সেই সুযোগ নষ্টের কোনও প্রভাব পড়ল না ম্যাচে। দুই অর্ধেই অনবদ্য ফুটবল খেলে মন জয় করে নিল আর্জেন্টিনা।
পেনাল্টি নষ্ট করলেও বুধবার দুর্দান্ত খেললেন মেসি। পেনাল্টিটাও তিনিই আদায় করে নেন। দিনের শেষে তাঁর নামের পাশে হয়তো কোনও গোল নেই। কিন্তু গোল পেতেই পারতেন। শেষ দিকে দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন। বাকি দু’টি ম্যাচের মতো এ দিন তাঁকে খুব বেশি পিছনে নেমে খেলতে হয়নি। তাঁর কারণ শুরু থেকে এনজ়ো ফের্নান্দেসকে নামানো। আগের ম্যাচের গোলদাতা এ দিন মাঝমাঠে দুরন্ত খেললেন। তিনি এবং রদ্রিগো দি পল শাসন করছিলেন মাঝমাঠ। পোল্যান্ড অতি রক্ষণাত্মক না খেললে মেসিদের আরও বেশি গোলে জেতার কথা।
ম্যাচের শুরুতেই কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। দি মারিয়ায় কর্নার প্রথমে ক্লিয়ার হয়ে যায়। পাল্টা বল পান দি মারিয়া। তাঁর ক্রস থেকে ওটামেন্ডির হেড বাইরে যায়। পোল্যান্ডও আক্রমণ করতে থাকে। ১০ মিনিটের মাথায় পোল্যান্ডের গোলে শট করেছিলেন মেসি। তবে তাঁর ডান পায়ের দুর্বল শট পোলিশ গোলকিপার উজসিয়েচ শেজেনির বাঁচাতে অসুবিধা হয়নি। কিছু ক্ষণ পরেই আবার বল পেয়েছিলেন মেসি। তাঁর শট প্রতিহত হয় সতীর্থের গায়ে লেগেই।
এর পর দি মারিয়া মেসিকে পাস দিয়েছিলেন। মেসি বল বাড়ান দি পলকে। তাঁর থেকে মোলিনা পাস দেন আবার মেসিকে। তবে আগেই বল আটকে দেন পোল্যান্ডের ডিফেন্ডার। তার পরেই মেসির থেকে বাঁ দিকে পাস পেয়েছিলেন আকুনা। তাঁর উঁচু শট বারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। আর্জেন্টিনার আক্রমণের কিছু ক্ষণ পরে পোল্যান্ড পর পর ফ্রিকিক এবং কর্নার পায়। কোনওটাই কাজে লাগাতে পারেনি তারা।
এর পরেই অতি রক্ষণাত্মক মানসিকতা নিয়ে ফেলে পোল্যান্ড। তাদের সব ফুটবলাররাই নিজেদের অর্ধে খেলছিলেন। প্রতি আক্রমণের উপর ভরসা রাখছিল পোল্যান্ড। সামনে ছিলেন একা লেয়নডস্কি। সতীর্থরা বল পেলেই তাঁকে পাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু একা লেয়নডস্কি কিছুই করতে পারছিলেন না।
৩২ মিনিটের মাথায় দারুণ সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। দি মারিয়া কর্নার থেকে সোজাসুজি গোলে শট নিয়েছিলেন। বাঁকানো বল গোলেই ঢুকছিল। শেষ মুহূর্তে বাঁচিয়ে দেন শেজেনি। না হলে প্রথম গোল তখনই পেয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা। ছ’মিনিট পরেই পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। শেজেনি বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে মেসির মুখে হাত চালিয়ে দেন। ভার-এর সঙ্গে আলোচনা করার পর পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। মেসির শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচিয়ে দেন পোলিশ গোলকিপার শেজেনি। মেসির মুখচোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কতটা যন্ত্রণাকাতর। পেনাল্টি নষ্ট করার পর থেকে আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনা। আক্রমণের ঝড় তুলে দেয়। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে পারেনি।
সেই আক্ষেপ মিটল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই। ৪৮ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল করে দেন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। সীমান্ত বরাবর দৌড়ে বল টেনে আনেন হোসে মোলিনা। সেখান থেকে তিনি ক্রস করেছিলেন। গোল করেন ইপিএলে খেলা আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার। তবে গোলের আসল কৃতিত্ব মোলিনারই প্রাপ্য।
গোল পেয়ে তেড়েফুঁড়ে খেলতে থাকে পোল্যান্ড। অতি রক্ষণাত্মক মানসিকতা ছেড়ে বেরিয়ে এসে গোলের দিকে আক্রমণ শুরু করে তারা। এতে আর্জেন্টিনার কাছে খেলাটা সহজ হয়ে যায়। মাঠে অনেক জায়গা পেয়ে যায় তারা। তার ফায়দা পাওয়া যায় কয়েক মিনিট পরেই। আর্জেন্টিনার হয়ে ব্যবধান বাড়ান জুলিয়ান আলভারেস। মাঝমাঠ থেকে এনজ়ো ফের্নান্দেসের পাস পেয়েছিলেন তিনি। ডান পায়ের নিখুঁত শটে বল জালে জড়ান।
তার কিছু ক্ষণ পরে গোল করে ফেলতে পারতেন মেসি। বাঁ দিক থেকে সুন্দর পাস পেয়েছিলেন। নিখুঁত জায়গায় বল রেখে অনায়াসে গোল করার সুযোগ ছিল। কিন্তু তাঁর সোজাসুজি শট আটকে দেন গোলকিপার। ম্যাচ শেষের ১০ মিনিট আগে গোলদাতা আলভারেস এবং এনজোকে তুলে নেন স্কালোনি। তাতেও কমেনি আর্জেন্টিনার আক্রমণ। তবে শেষের দিকে এসে কিছুটা হালকা দেয় তারা। পোল্যান্ডকে দেখে অবশ্য কখনওই মনে হয়নি তারা গোল পেতে পারে। ম্যাচের শেষ দিকেও বলের নিয়ন্ত্রণ ছিল আর্জেন্টিনার পায়েই। দাপট রেখেই ম্যাচ জিতে নেন মেসিরা।