আমেরিকার অধিকাংশ মানুষেরই ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ নেই। আবার ক্রিকেট বিশ্বের আগ্রহ নেই আমেরিকাকে নিয়ে। তবু আমেরিকায় ক্রিকেট আছে। ক্রিকেটেও আমেরিকা আছে। এই ‘আছে’ শব্দটা ‘থাকবে’-তে পরিণত হবে কি? উত্তর রয়েছে ভবিষ্যতের গর্ভে।
বেসবলের মতো আমেরিকার জনপ্রিয় খেলা বলতে প্রথমেই যেগুলির কথা ওঠে, সেখানে ক্রিকেটের স্থান নেই। কিন্তু আমেরিকায় ক্রিকেটারের সংখ্যা লজ্জায় ফেলতে পারে অনেক টেস্ট খেলিয়ে দেশকেও। নয় নয় করে সংখ্যাটা প্রায় দু’লাখ। যাঁদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ছাড়া কেউই আদতে আমেরিকার মানুষ নন।
টেক্সাসের গ্র্যান্ড প্রেইরিতে রয়েছে এয়ারহগস বেসবল স্টেডিয়াম। এয়ারহগসের একটি ফুটবল দল ছিল। স্টেডিয়ামটি ব্যবহার করা হত ফুটবল দলের হোম স্টেডিয়াম হিসাবে। ফুটবল খেলা হত কৃত্রিম টার্ফে। করোনা অতিমারির আঘাত সহ্য করতে পারেনি এয়ারহগস। ২০২০ সালেই উঠে গিয়েছে ফুটবল দল। স্টেডিয়ামটি আবার খোলা হয়েছে কয়েক মাস আগে। এ বার আর ফুটবলের জন্য নয়, ক্রিকেটের জন্য। মেজর লিগ ক্রিকেটের জন্য প্রথম নির্দিষ্ট করা হয়েছে এয়ারহগস বেসবল স্টেডিয়াম।
এই একটা ঘটনা দিয়ে প্রমাণ করা যাবে না আমেরিকায় বেসবল বা ফুটবলের জনপ্রিয়তা তলানিতে। এখনও রবিবার দুপুর বা সন্ধ্যায় বেসবল বা ফুটবল ম্যাচ দেখতে অসংখ্য মানুষ মাঠে আসেন। ভিড়ের জন্য স্টেডিয়ামগুলির বাইরে ট্রাফিক ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়। ক্রীড়াপ্রেমীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে আশপাশের রেস্তরাঁগুলিতে। ম্যাচের ফল নিয়ে বাজি ধরছেন অনেকে। প্রিয় দলের সাফল্যে উচ্ছ্বাস, ব্যর্থতায় হতাশা দেখা যাচ্ছে। আমেরিকার বেসবল, ফুটবল-প্রিয় জনতার কাছে ক্রিকেট এখনও প্রায় অপরিচিত। কেউ কেউ নাম শুনলেও তাঁদের কাছে ক্রিকেট এখনও বিদেশের খেলা। ক্রিকেট নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা নেই। অথচ আমেরিকার মাটিতে মাথা তুলে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে ক্রিকেট।
আমেরিকার অধিকাংশ মানুষের আগ্রহ না থাকলেও প্রায় ৭০ লাখ নাগরিকের আবার প্রবল আগ্রহ। এই ৭০ লাখ মানুষের প্রায় ৪২ লক্ষ সে দেশে গিয়েছেন ভারত থেকে। প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ গিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশ থেকে। আরও ১৫ লক্ষ মানুষ আমেরিকায় গিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিভিন্ন দেশ থেকে বা ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল এমন কোনও দেশ থেকে। আদতে ব্রিটেনের কিছু মানুষও আছেন যাঁরা ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহী। এই ৭০ লক্ষের ৬৮ শতাংশের জন্ম আমেরিকায় নয়। এঁদের আগ্রহ, ভালবাসায় ভর করেই বেসবল, ফুটবলের দেশে ডালপালা মেলতে শুরু করেছে ক্রিকেট। গত কয়েক বছর ধরে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ক্রমশ বাড়ছে ক্রিকেটের প্রচলন। গত দু’দশকে আমেরিকাবাসী দক্ষিণ এশীয় মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। প্রতি গ্রীষ্মেই স্থানীয় পার্ক বা মাঠগুলিতে বিভিন্ন বয়সের ছেলে-মেয়েদের ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়। আমেরিকার মূল বাসিন্দারাও অনেক সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন। কেউ কেউ বেসবলের সঙ্গে মিল খোঁজার চেষ্টা করেন।
ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের প্রাক্তন অধিনায়ক উন্মুক্ত চাঁদ আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে পারেন আমেরিকার হয়ে। আইপিএলে বিভিন্ন দলে খেলা সানি সোহাল, সিদ্ধার্থ ত্রিবেদীরাও এখন আমেরিকার ক্রিকেটার। ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অন্যতম আয়োজক আমেরিকা। সেই সুবাদে তারা খেলবে বিশ্বকাপের মূলপর্বে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সাফল্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছে আইসিসিও। ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক্সে ক্রিকেটের অন্তর্ভূক্তি সহজ হতে পারে সে ক্ষেত্রে।
আন্তর্জাতিক আঙিনায় আমেরিকার ক্রিকেট প্রথম পা রেখেছিল ১৮৪৪ সালে ম্যানহ্যাটনে। সেই ম্যাচে কানাডার কাছে হেরেছিল আমেরিকা। তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় প্রথম ক্রিকেট খেলা হয়েছিল ১৭৩৭ সালে জর্জিয়ায়। সেই হিসাব ধরলে ক্রিকেটের সঙ্গে আমেরিকার পরিচয় ২৩৫ বছরের! আমেরিকায় ক্রিকেট ছিল, ক্রিকেট আছে। থাকবে কি?
ক্রিকেটের থেকে বেসবলের এগিয়ে যাওয়ার একটা ইতিহাস রয়েছে। ১৭৩৭ সালে জর্জিয়ায় যে ক্রিকেট খেলা হতো সে কথা ‘দ্য টেনটেড ফিল্ড’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন টম মেলভিল। ক্রিকেটের পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসাবে তিনি লিখেছেন, ‘‘গৃহযুদ্ধের সময় ক্রিকেট খেলা কঠিন ছিল। ক্রিকেটে একটি মসৃণ ব্যাটিং পৃষ্ঠের প্রয়োজন হয়। বেসবলে তা প্রয়োজন নেই। আরও একটি কারণ, বেসবল অনেক কম সময় খেলা যায়।’’ আরও একটি কারণ হিসাবে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমেরিকার মানুষের চরিত্রের সঙ্গে ক্রিকেটের চরিত্র মিলত না সে সময়।’’ মেজর লিগ বেসবলের সরকারি ঐতিহাসিক জন থ্রোন ‘বেসবল ইন দ্য গার্ডেন অফ ইডেন’ বইয়ে লিখেছেন, ‘‘গৃহযুদ্ধের সময় পর্যন্ত বেসবল দ্বিতীয় স্থানে ছিল এবং বেশ পিছিয়ে ছিল।’’
আমেরিকার মানুষের চরিত্রের সঙ্গে বেসবল কতটা খাপ খেয়েছিল সে সময়? ক্রীড়া ঐতিহাসিকদের অনেকে বলেন, অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ইংল্যান্ডে বেসবল খেলা শুরু হয়েছিল। ১৯০৫ সালে অ্যালবার্ট স্প্যাল্ডিং নামে এক জন ব্যবসায়ী খেলাটির উৎস সন্ধানে একটি কমিশন গঠন করেছিলেন। থ্রোন বলেছেন, ‘‘গৃহযুদ্ধের পরেও বেসবল পিছিয়ে ছিল অনেকটা। পরে বেসবল থেকে একটি পৌরাণিক কাহিনী তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। যাকে আমেরিকার জাতীয় ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।’’ ১৯৩৭ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, আমেরিকার ৩৪ শতাংশ মানুষের প্রিয় খেলা ছিল বেসবল। অথচ ২০১৭ সালের এক সমীক্ষায় ন’শতাংশ মানুষ বেসবলকে প্রিয় খেলা বলেছেন। সাত শতাংশ মানুষের পছন্দের খেলা ফুটবল। বেসবল মেজর লিগের একটি খেলা শেষ হতে কম করে দু’ঘণ্টা সময় লাগে। গড়ে একটি খেলার জন্য লাগে তিন ঘণ্টার বেশি সময়। এতক্ষণ খেলা দেখার সময় নেই আমেরিকার আধুনিক ব্যস্ততায়। সে কারণেই ক্রমশ কমছে বেসবলের জনপ্রিয়তা।
ক্রিকেটও তো দীর্ঘ সময়ের খেলা। তবু কেন বাড়ছে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ। এর অন্যতম কারণ হিসাবে উঠে এসেছে বেসবলের তুলনায় ক্রিকেটের উত্তেজনা অনেক বেশি। তুলনায় বেশি ঘটনা বহুল। যে খেলায় উত্তেজনা যত বেশি সেই খেলা আমেরিকার মানুষের তত পছন্দের। ক্রিকেট সম্পর্কে আমেরিকার মানুষের ধারণা বদলের প্রধানতম কারণ আইপিএল। ২০০৮ সালে আইপিএল শুরু হওয়ার পর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের উন্মাদনা, উত্তেজনার স্বাদ পেয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। ধীরে ধীরে সব দেশেই শুরু হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি লিগ। ক্রিকেট সম্পর্কে ‘বিরক্তিকর’ ধারনা বদলে দিয়েছে আইপিএল এবং অন্য লিগগুলি। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণের সুবাদেই ভেঙেছে ক্রীড়াপ্রেমীদের মনোভাব। টেস্টের পর এক দিনের ক্রিকেট, তার পর টি-টোয়েন্টি— সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চরিত্র বদলেছে ক্রিকেট। ক্রিকেটের এই বিবর্তনই অটুট রেখেছে আকর্ষণ, জনপ্রিয়তা। খেলার চরিত্র বদলের সঙ্গে রঙিন পোশাক, রাতে খেলাও বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। ব্রিটিশ ক্রীড়া সাংবাদিক টিম উইগমোর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে লিখেছেন, ‘‘আইপিএল ভারতীয় ক্রিকেটকে আমেরিকার পছন্দের মতো করে তুলেছে। একটা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। বিশ্বের সেরা ক্রিকেটাররা খেলেন। মজার ব্যাপার হল, সব সময় একটি ভারতীয় দলই চ্যাম্পিয়ন হয়।’’ আইপিএলের শুরুতে আমেরিকার ফুটবলে পরিচিত চিয়ার লিডারদের নিয়ে আসা হত। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের এই পদক্ষেপও ক্রিকেট সম্পর্কে আমেরিকার মানুষের আগ্রহ তৈরি করেছিল। শহর ভিত্তিক ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি তৈরির ধারনাও বিসিসিআই নিয়েছিল আমেরিকা থেকেই।
ক্রিকেট নিয়ে আমেরিকায় যাঁরা আগ্রহী তাঁদের অনেকেই সুপ্রতিষ্ঠিত। মাইক্রোসফট, অ্যাডব-সহ আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। শীর্ষ স্তরের কর্তারাও আছেন। আমেরিকায় ক্রিকেটের প্রসার নিয়ে তাঁরাও আগ্রহী। এটাই আমেরিকার ক্রিকেটপ্রেমীদের আশাবাদী করছে। ২০২৩ সালে প্রথম আয়োজিত হবে মেজর লিগ ক্রিকেট। আগামী ১৩ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত হওয়ার কথা এই প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় খেলবে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি লস অ্যাঞ্জেলস নাইট রাইডার্স। আবু ধাবি, ত্রিনিদাদ-টোবাগোর পর বিদেশে তৃতীয় দল নাইট রাইডার্সের। সিইও বেঙ্কি মাইসোর বলেছেন, ‘‘আমেরিকার ক্রীড়াপ্রেমীদের আমরা ক্রিকেটের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করব। একটা বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েছি আমরা।’’ এই প্রতিযোগিতায় ডালাস, লস অ্যাঞ্জেলস, নিউউয়র্ক, সান ফ্রান্সিসকো, সিয়াটল এবং ওয়াশিংটন ডিসি— মোট ছ’টি ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি খেলবে। মেজর লিগ ক্রিকেটের পাশাপাশি হবে মাইনর লিগ ক্রিকেট। এই প্রতিযোগিতায় খেলবে ২৬টি দল।
একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয়দের একটা বড় অংশ সিলিকন ভ্যালিতে কর্মরত। তাঁদের গড় বার্ষিক আয় ২০১৯ সালের হিসাবে প্রায় এক কোটি টাকা। যা আমেরিকার মূল নাগরিকদের বার্ষিক আয়ের প্রায় দ্বিগুণ। ক্রিকেটপ্রেমীদের একটা বড় অংশ ভারতীয়রা। আমেরিকার ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে রয়েছেন মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলাও। কলেজ জীবন থেকেই তাঁর ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ। হায়দরাবাদে কলেজ স্তরের প্রতিযোগিতায় তিনি ছিলেন স্পিনার।
আমেরিকায় মাঝারি মাপের ক্রিকেট প্রতিযোগিতাতেও এখন গ্যালারিতে দর্শক দেখা যায়। আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৪০০ ছোট ছোট ক্রিকেট লিগ হয়। খেলোয়াড়দের প্রায় সকলেরই শিকড় দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা বা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। আমেরিকার অনূর্ধ্ব ১৯ পুরুষ এবং মহিলা দলের সদস্যদের সকলেই আদতে ভিনদেশী।
মেজর লিগ ক্রিকেটে এখনও পর্যন্ত বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে প্রায় ৩৬৪ কোটি টাকা। ভবিষ্যতে আরও প্রায় ৬৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। এই প্রতিযোগিতার সাফল্য ২০২৮ অলিম্পিক্সের আয়োজকদের ক্রিকেট সম্পর্কে উৎসাহিত করতে পারে। আবার ক্রিকেটকে ক্রীড়া তালিকায় জায়গা দিলে অলিম্পিক্স আয়োজনের বিপুল খরচ তোলাও অনেক সহজ হতে পারে। পারস্পরিক এই স্বার্থ ক্রিকেটের মুকুটে নতুন পালক যোগ করতে পারে বলে আশাবাদী আইসিসিও। দর্শক সংখ্যার বিচারে ক্রিকেট এখন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। অন্য দিকে, আমেরিকা বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়া বাজার। এই বিষয়টিও দু’পক্ষকে ভাবাচ্ছে। সেই কারণে আমেরিকার অধিকাংশ মানুষের কাছে ক্রিকেট এখনও ‘বিদেশি’ খেলা হওয়া সত্ত্বেও এড়িয়ে যেতে পারছে না।
অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকা ক্রিকেটকে গ্রহণ করে নিলেই বা লাভ কী? ক্রীড়া বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আমেরিকা গুরুত্ব দিলে আরও অনেক দেশ গুরুত্ব দেবে। সেটা আমেরিকার প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ হিসাবেই হোক বা ক্রীড়া ক্ষেত্রে জমি না ছাড়তে চাওয়ার জন্যই হোক, লাভবান হবে ক্রিকেটই। এমনই মনে করছেন বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরাশিস লাহিড়ি। তিনি বলছেন, ‘‘যত বেশি দেশ খেলবে, ক্রিকেটের পক্ষে তত ভাল। আমেরিকার মতো দেশ যারা খেলাধূলার পাওয়ার হাউস, সেখানে গুরুত্ব বা মান্যতা পেলে ক্রিকেটের জন্য অত্যন্ত ভাল। ক্রিকেটে একটা পর্যায় পর্যন্ত প্রসার হয়েছে আমেরিকায়। সেটা যত বাড়বে। আমেরিকায় ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি। ওদের জাতীয় দলের দিকে তাকালেও ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার ছেলেদেরই দেখা যায়।’’
এই মরসুমেই বাংলা ছেড়ে ত্রিপুরার হয়ে খেলতে যাওয়া সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ও আশাবাদী। তিনি বলেছেন, ‘‘অনেক নতুন নতুন দেশ ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহী হচ্ছে। ফুটবলের তুলনায় খুব কম দেশ ক্রিকেট খেলে। দেশের সংখ্যা বাড়লে ক্রিকেটের লাভ। ক্রিকেট যথেষ্ট জনপ্রিয় খেলা। সেটাও অন্যতম কারণ নতুন নতুন দেশের আগ্রহ তৈরি হওয়ার।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রথম দিকে বিদেশি বংশোদ্ভূত ক্রিকেটারদের নিয়ে দল তৈরি করা খারাপ নয়। তাতে ওরা শিখতে পারবে। কারণ খেলাটা ওদের কাছে নতুন। অভিজ্ঞতা, দক্ষতা নেই। এক দম সাফল্য না থাকলে আগ্রহ বজায় থাকে না। সাফল্য এলে আমেরিকার ছোট-মেয়েদের মধ্যেও আগ্রহ তৈরি হবে। দেখা যাবে কয়েক বছর পর ওরাই খেলছে আমেরিকার হয়ে।’’
কেবল উন্মুক্তই নন। আমেরিকার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ক্রিকেট খেলার জন্য সেখানে গিয়েছেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার লিয়াম প্লাঙ্কেট। তাঁর স্ত্রীর জন্ম আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ায়। তাদের হয়েই খেলবেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার শ্যাডলি ভ্যান শালউইকও এখন আমেরিকার ক্রিকেটার।
নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ডের মতো ইউরোপের অন্য দেশ থেকেও আমেরিকায় আসছেন ক্রিকেটাররা। আমেরিকার ক্রিকেট কর্তারা এখন সেই সব প্রতিভাবান এবং দক্ষ ক্রিকেটারের খোঁজ করছেন, যাঁদের নিজের দেশের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। উন্নত জীবন এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নপূরণের আশ্বাস দিচ্ছেন তাঁরা। টাকার অভাবে ২০২১ সালে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ় বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল আমেরিকার ক্রিকেট সংস্থা। সাফল্য এলে অর্থ সঙ্কট হবে না বলেই বিশ্বাস আমেরিকার ক্রিকেট কর্তাদের। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তানের মতো প্রথম সারির ক্রিকেট খেলিয়ে দেশগুলির সঙ্গে এখনই এঁটে উঠতে পারবে না আমেরিকা। কর্তাদের আশা, এক বার জনপ্রিয়তা পেয়ে গেলে আমেরিকায় ক্রিকেটকে আটকানো কঠিন হবে। অদূর ভবিষ্যতে ২২ গজের লড়াইয়ে আমেরিকাকেও সমীহ করতে হবে।