করোনা অধ্যুষিত পৃথিবীতে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নতুন কোনও সংজ্ঞা নয়। কিন্তু তাই বলে ক্রিকেট কমেন্ট্রিতে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’? সেটাও আবার আইপিএলে? আশ্চর্য শোনাচ্ছে? শোনাক। আসন্ন আইপিএলে (IPL) ধারাভাষ্যকারদের জন্য সেটাই কিন্তু ‘নিউ নর্মাল’ হতে পারে!
‘বাড়ি থেকে কমেন্ট্রি’ গত রবিবারের আগে পর্যন্ত বিশ্বক্রিকেটে কেউ জানতও না। শোনেওনি। কিন্তু গত রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নে একটা ছত্রিশ ওভারের প্রদর্শনী ম্যাচে তিন ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মঞ্জরেকর (Sanjay Manjrekar), ইরফান পাঠান এবং দীপ দাশগুপ্তকে বাড়ি থেকে কমেন্ট্রি করায় স্টার স্পোর্টস। প্রভূত না হলেও সেই ‘বাড়ি থেকে কমেন্ট্রি’ সংজ্ঞা মোটামুটি সাফল্য পেয়ে যায়। যার পরপরই নাকি আইপিএল ধারাভাষ্যের একটা বড় অংশ বাড়ি থেকে করাতে চাইছে স্টার।
ধারাভাষ্যকার মহলে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল যে, আইপিএলে মাঠে এবার বিশাল কমেন্ট্রি টিম থাকবে না। মাঠে কয়েক জন ধারাভাষ্যকার থাকবেন। বাকিরা করবেন বাড়ি থেকে। দেখা যাচ্ছে, একটা ওয়াইফাই কানেকশন আর টিভি থাকলেই বাড়ি থেকে ধারাভাষ্য সম্ভব। অতএব মনে করা হচ্ছে, আইপিএলের স্টুডিও কমেন্ট্রিটাই এবার ধারাভাষ্যকারদের বাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
ধারাভাষ্যকারদের কেউ কেউ মনে করছেন, সেটা হওয়া উচিতও। করোনা আক্রান্ত মুম্বইয়ের অবস্থা এখন এত খারাপ যে, স্টার স্পোর্টস স্টুডিও কার্যত বন্ধ। সেপ্টেম্বর মাসের শেষে অবস্থা আরও কতটা করুণ হবে মুম্বইয়ের, ভাবলেও শিউরে উঠছেন তাঁরা। কেউ কেউ আতঙ্কিত ভাবে বলছিলেন যে, মুম্বইয়ের স্টার স্পোর্টসের (Star Sports) স্টুডিওয় টেকনিক্যাল টিম যেখানে বসে তা আদতে দশ ফুট বাই দশ ফুটের একটা ঘর। সেখানে পাঁচ-ছ’জনকে গাদাগাদি করে বসে থাকতে হয়। এর চেয়ে তো বাড়ি থেকেই সব করা অনেক ভাল!
কিন্তু ইরফান পাঠান-দীপ দাশগুপ্তরা, যাঁরা কি না গত রবিবার বাড়ি থেকে কমেন্ট্রি করেছেন, তাঁরা কিছু অসুবিধের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন। ইরফান (Irfan Pathan) যেমন বলেছেন যে, রুমে একাকী বসে কমেন্ট্রি করার সময় তাঁর শিশু সন্তান ক্রমাগত এসে দরজায় ধাক্কা দিয়ে গিয়েছে। “জিনিসটা ভাল। উপভোগও করেছি। কিন্তু আইপিএলেও ঘরে বসে কমেন্ট্রি করা খুব চ্যালেঞ্জিং,” বলে দিয়েছেন পাঠান। দীপ আবার ফোনে বলছিলেন, “বাড়ি থেকে না বেরিয়ে যদি কাজ করতে হয়, তা হলে এটাই সেরা বিকল্প। কিন্তু এটা কি সেরা বিকল্প? না। মাঠ থেকে কমেন্ট্রি করা আর বাড়ি থেকে কমন্ট্রি করার মধ্যে অনেক তফাত আছে। বাড়ি থেকে করলে পুরোটাই আপনাকে ক্যামেরাম্যান কী দেখাচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে চলতে হবে।” শোনা গেল, কয়েকটা সমস্যা হচ্ছে। যেমন, অনলাইন কমেন্ট্রিতে দু’টো ‘বাটন’ ব্যবহার করতে হচ্ছে ধারাভাষ্যকারদের। একটা ‘অন এয়ারের।’ আর একটা ‘অফ এয়ারের’। স্টুডিওতে ধারাভাষ্যকাররা ‘অফ এয়ার’ গেলে সেখানে ডিরেক্টর শুধু কথা বলেন। কিন্তু অনলাইনে করলে ‘অফ এয়ারে’ প্রোডিউসার থেকে ডিরেক্টর, স্ট্যাটিসটিশিয়ান, সবাই কথা বলতে থাকেন। মাঠে যা হয় না। আরও একটা সমস্যা, কমেন্ট্রিবক্সের নিয়ম হল দুজন থাকলে একজন ধারাভাষ্যকার মাইক্রোফোন তুলে নেন। আর একজন নামিয়ে রাখেন। কিন্তু এখানে একজন ধারাভাষ্যকার দেখতে পাচ্ছেন না অন্যজন কী করছেন। যে কারণে ওভারল্যাপিং হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে আরও একটা সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে যে, আইপিএলের উত্তেজনার আবহ বাড়ি বসে কী করে সৃষ্টি করা সম্ভব?কিন্তু উপায়ও বা কী? এমন অভূতপূর্ব পরিস্থিতি কবেই বা দেখেছে ক্রিকেট!