ট্রাফিক নেই, গাড়ি নিয়ে দুঃস্থদের হাতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ

পুলিশ গাইছে, খাবার বিলোচ্ছে, রক্তদান করছে। কলকাতা পুলিশকে (Kolkata Police) এমন ভূমিকায় শেষ কবে দেখেছিল শহরবাসী তা বলা যাবে না। নজিরবিহীন বললেও ভুল হবে না। এবার এগিয়ে এল কলকাতা ট্রাফিক পুলিশও। তাদের খাদ্য সরবরাহকারী গাড়ি শহরের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গিয়ে দুঃস্থদের খাবার বিলোচ্ছে।

লকডাউনের (lockdown)মধ্যে কলকাতার দিন-আনা দিন-খাওয়া মানুষ, দুঃস্থ-দরিদ্র এবং ফুটপাথবাসীদের পাশে সাধ্যমতো দাঁড়াতে শহরের থানাগুলির পাশাপাশি এগিয়ে এল কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশও। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে একটি খাদ্য সরবরাহকারী গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই গাড়িতে থাকছে রান্না করা খাবার, অন্যান্য পুষ্টিকর শুকনো খাবার-সহ রেশনের কম্বো প্যাকেট। এই খাবার ও রেশনের প্যাকেট নিয়ে গাড়িটি পৌঁছে যাচ্ছে কলকাতার দুঃস্থ-দরিদ্র এবং ফুটপাথবাসী মানুষদের কাছে। শহরের কোনও প্রান্তে কেউ যাতে অভুক্ত না থাকেন, সেই চেষ্টাই করছেন তাঁরা।

এর আগে কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police) লকডাউন-জনিত অসুবিধায় পড়া মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। বয়স্কদের বাড়িতে খাবার-ওষুধ পৌঁছে দেওয়াই হোক বা দুঃস্থ-দরিদ্রদের দু’বেলার গ্রাসাচ্ছাদনের যথাসাধ্য ব্যবস্থা করা, বা রাস্তাঘাটের অভুক্ত চতুষ্পদদের খাবারের জোগান দেওয়া, যে যেভাবে পারেন চেষ্টা করছেন এই সঙ্কটে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার। সেই কাজ তাদের চলছে। দেখাদেখি এগিয়ে এসেছে শহরের ট্রাফিক পুলিশও।

সম্প্রতি, এন্টালি এবং গড়িয়াহাট, রবীন্দ্র সরোবর থানা এলাকায় গৃহবন্দি সহনাগরিকদের একঘেয়েমি কাটাতে এবং লকডাউনে জরুরি দরকার ছাড়া বাইরে না বেরনোর বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে গান গাইতে দেখা গিয়েছে কলকাতা পুলিশকে। গানের তালিকায় বেলা বোস থেকে শুরু করে সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’-গান রয়েছে। গান গেয়েছেন কলকাতা পুলিশের অফিসারকর্মীরা। লকডাউনের জেরে অনুষ্ঠিত হতে পারছে না রক্তদান শিবির। রক্তদাতারাও বাধ্যত ঘরবন্দি। ফলে বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে দেখা দিয়েছে রক্তের অভাব। সেই কথাও ভেবেছে কলকাতা পুলিশ। অভাব কিছুটা পূরণের উদ্দেশ্যে এপ্রিলের ৩০ তারিখ পর্যন্ত( রবিবার বাদ দিয়ে) রোজ সন্ধেয় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রক্তদান করছেন কলকাতা পুলিশের সর্বস্তরের কর্মীরা। প্রতিদিন অন্তত ৫০ জন রক্ত দিচ্ছেন।

২৯ মার্চ বৌবাজার থানায় যোগাযোগ করেন হালদার লেনের বাসিন্দা শ্রীমতী কণিকা মজুমদার। কণিকা দেবী জানান, তাঁর ননদ কৃষ্ণা গুপ্ত গুরুতর অসুস্থতাজনিত রক্তপাতের কারণে হাসপাতালে ভর্তি। রক্ত মিলছিল না। এগিয়ে আসেন বৌবাজার থানার অ্যাডিশনাল অফিসার-ইন-চার্জ সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জি। গ্রুপ মেলায় রক্ত দেন তিনি। মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কে এসে রক্তদান করেন। সেই রক্ত যথাসময়েই পৌঁছে দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে। সেই শুরু। সামাজিক দায়িত্ব পালনের দুরন্ত প্রমান রেখেই চলেছে শহরের সাদা উর্দিধারিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.