কিছুদিন ধরেই বিষয়টা লক্ষ করছিলেন পুরসভার কর্তারা। প্রথমদিকে তেমন গা না করলেও পরে বুঝতে পারলেন সংখ্যাটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। হটাৎ এত ভিড়? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সবার একটাই উদ্দেশ্য , পুরসভা থেকে জন্মের সার্টিফিকেট তোলা। নিজের হোক কিংবা সন্তানের। এমনকি প্রতিদিন জন্মের সার্টিফিকেটের জন্য ফর্ম তোলার লোকের ভিরও ক্রমশ বাড়ছে।
আগে প্রতিদিন পুরসভা থেকে গড়ে একশ করে ফর্ম দেওয়া হতো। এবার সেই সংখ্যা বাড়িয়ে দৈনিক দুশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুর কর্তারা জানাচ্ছেন, ভিড় এতটাই বেড়ে গেছে যে ওই নির্দিষ্ট বিভাগে কাজের জন্য লোকসংখ্যা বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
যারা প্রতিদিন ভিড় করে আসছেন তাদের উদেশ্য জন্মের সার্টিফিকেট সংগ্ৰহ করে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু হঠাৎ কেন মুসলিমদের মধ্যে এই তাগিদ তৈরি হলো তা সার্টিফিকেট তুলতে আসা মানুষদের কথাতেই পরিষ্কার। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ হবার পরে, মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, হয়ত ভবিষ্যতে এনআরসি হতে পারে।
কারন বিজেপি নেতারা বহুবার দাবি করেছেন,পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে এনআরসি চালু করবেন তারা। সত্যি কোনও দিন এনারসি চালু হলে তখন কাগজ দেখিয়েই প্রমাণ করতে হবে নিজের নাগরিকত্ব। সুতরাং নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য যেসব কাগজ দরকার তা এখন থেকেই নিজেদের হাতে মজুদ করে রাখতে চাইছেন বহু মানুষ। নাগরিক প্রমানের অন্যতম হাতিয়ার জন্মের প্রমাণপত্র, সেটা সংগ্ৰহ করে রাখার তাগিদ এতদিন যারা অনুভব করেননি, তারাও এখন ছুটে আসছেন পুরসভার কাছে।
এরাজ্যে নয়া নাগরিক আইন কার্যকর হবে না , এনপিআর কার্যকরী হবে না, এমনকি এনআরসি চালু করার কোনও প্রচেষ্টাও সফল করতে দেওয়া হবে না বলে প্রতিদিন নিয়ম করে সভায় সভায় বলে বেড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শুধু তার কথার ওপরেই ভরসা করে নেই মুসলিমরা। নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে নিজেরাই এখন ছুটে বেড়াচ্ছেন, রক্ষা কবচ সংগ্ৰহ করার কাজে।
এমনকি এমনও বহু মানুষ আসছেন যারা যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এতদিনের পুরনো রেকর্ড বার করে পুরসভা কি করে তাদের সার্টিফিকেট দেবে সেটাও ভাবাচ্ছে অনেককে। কিন্তু ভিড় বেড়েই চলেছে। অনেকে দুদিন তিনদিন ধরে লাগাতার আসছেন। কারন কর্মী কম থাকায় একদিনে সমস্ত দাবিদারকে খুশি করা যাচ্ছে না। কর্তারা বলছেন, হয়ত আরও লোক বাড়াতে পারলে এই সমস্যা দূর করা যাবে।