সরকারিভাবে লকডাউন চালু হয়েছে দু’দিন হল। আমার কিন্তু লকডাউন বলতে গেলে আট দিন আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। কেমন কাটছে দিন— প্রশ্নের উত্তরে এভাবেই শুরু করলেন ছোটপর্দা ও বড় পর্দার অত্যন্ত পরিচিত মুখ ভরত কল। বক্তব্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বললেন, ১৮ তারিখ শুটিংয়ে গিয়েছিলাম। শেষ হল ১৯ তারিখে। আর তার পরে চালু হয়ে গেল ছবিপাড়ার মানে টলিউডের লকডাউন। এর পর থেকে আর বাড়ির বাইরে প্রায় বারই হচ্ছি না। প্রায় কথাটা বলছি একারণে, একবার শুধু গিয়েছিলাম উডল্যান্ডসে শারীরিক পরীক্ষার জন্য।যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেটের ঢিলছোঁড়া দূরত্বে ‘নেচার্স নেস্ট’ নামে ৪৮টি ফ্ল্যাটের একটি আবাসনের একটিতে ভরতবাবু থাকেন সপরিবারে। মায়ের সুবাদে শরীরে বইছে কাশ্মীরী রক্ত। জন্ম কলকাতায় হলেও স্নাতক স্তরের কিছুটা সময় কেটেছে কাশ্মীরে। স্কুল ছিল সেন্ট থমাস, পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এ রকম পরিস্থিতি কখনও দেখেননি।এই পরিস্থিতি কীভাবে বদলে দিয়েছে আপনার দিনলিপি? অভিনেতার জবাব, “সকালে ঘুম ভাঙতে প্রায় নয়টা বেজে যায়। তার পর আমার অফিস, শুটিং, আড্ডা— এ সব করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে অন্তত ন’টা। আর ঘুমোতে ঘুমোতে তিনটে। কিন্তু এখন একটা যেন ছন্দ পতন হয়ে গেল। সারাদিনই বাড়িতে।”বই পড়ছেন? ভরতবাবুর জবাব, “একটা সময় প্রচুর বই পড়তাম। বলা যেতে পারে গোগ্রাসে গিলতাম। এখন পড়ার অভ্যাস অনেকটাই চলে গিয়েছে। কিন্তু আমার দিদি বইয়ে ভাল অ্যাপ পাঠিয়েছে। ওখান থেকে একটু একটু পড়ছি। অনেক অভিনেতার মতো আমিও গত বছর দুই ধরে অনেকটাই সময় কাটাচ্ছি ‘নেটফ্লিক্স’, ‘হইচই’, ‘আড্ডাটাইমস’ প্রভৃতিতে। ‘অ্যামাজন’ থেকে ডাউনলোড করা একটা ওয়েব সিরিজ এখন দেখছি। স্পেনের একটা অসম্ভব সুন্দর সিরিয়াল ‘মানি হাইস্ট‘। কিভাবে একটা টাঁকশাল একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতি হাইজ্যাক করল, তার রোমহর্ষক বর্ণনা।লকডাউনে ঘরবন্দী থাকায় পরিবারকে কতটা সময় দিতে পারছেন? ভরতবাবুর জবাব, “এটা মূলত স্ত্রী জয়শ্রীর হেফাজতে। ও-ও অভিনেত্রী। বছর চারের কন্যা আর্যা— ওদের বাড়তি সঙ্গ সুযোগ পাচ্ছি। ফ্ল্যাটে আছেন আমার শ্বশুর-শাশুড়ি।“ কোন জিনিসটা বেশি মিস করছেন লকডাউনে? চটজলদি উত্তর— “আড্ডাটা। আমি সুরিন্দর ফিল্মসের প্রোডাকশন এর বিভিন্ন কাজ দেখি। সেখানে এবং কখনো লীনার (গঙ্গোপাধ্যায়ের) ফ্ল্যাটে, কখনও আমার বাড়িতে, কখনও অন্যত্র আড্ডার আসর বসে। তাতে শৈবাল ব্যানার্জি, লীনার ছেলে অর্ক— এরাও থাকে। দোলে আমরা গিয়েছিলাম শান্তিনিকেতনে। ওখানে জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘শ্রীময়ী’ এবং ‘মোহর’-এর শুটিং হয়েছে। ব্যাস, তারপর যা অবস্থা তৈরি হল! আড্ডাটা প্রায় মাথায় উঠে গিয়েছে। এখন কথাবার্তা যা বলার, সবই ফোনে।কোনও চিন্তা হচ্ছে না? ভরতবাবুর জবাব— “হচ্ছে তো বটেই! আমার বাবার একটা কারখানা ছিল প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড। পরবর্তীকালে সেখানে একটা স্টুডিও করি। ২০০৫-এ অসুস্থ হয়ে পড়ি। তারপর ওই জমিটা একটি নামী আবাসন সংস্থাকে হস্তান্তর করে দিয়েছিলাম। এখন খুব বেশি দৌড়োদৌড়ি করতে চাইনা। ফিল্মের কাজ, আড্ডা, ছবি দেখা, পরিবার— এসবের মধ্যেই জীবনটা গুটিয়ে নিতে চাই। কিন্তু যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, খুব চিন্তার! করোনা-ভাইরাসের প্রতিক্রিয়াটা যে বিভিন্ন স্তরে কিভাবে পড়বে, ভাবতেও পারছিনা!
2020-03-29