শিক্ষক, অভিবাবক এবং প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে ট্রাক চালকদের খাদ্য ও ত্রাণ বিলি

লকডাউন (lock down)একটি শহরকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে?গৃহবন্দী থেকে সাধারণ মানুষের পক্ষেই বা কতটা আঁচ করা সম্ভব! যতটা আমরা ভাবতে পারি তার চেয়েও অনেক অনেক গুন ভয়াবহ। সমস্যাটা চাক্ষুস করতে পেরেছিলেন একজন গবেষক ছাত্র। আর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাঁর স্কুল শিক্ষককে জানান। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকও তাঁর সর্বশক্তি দিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সব ব্যর্থ হয়। শেষমেশ নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে মাঠে নামেন ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক ও প্রাক্তন ছাত্র সেইসঙ্গে সংশ্লিস্ট শিক্ষকের বন্ধুমহল।

This image has an empty alt attribute; its file name is 20200503_111556.jpg

শহর কৃষ্ণনগরের সমস্ত হোটেল, ধাবা, খাবারের দোকান বন্ধ। এই অবস্থায় যেসব ট্রাক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সম্ভার নিয়ে শহরে আসছিল তাদের চালক ও সহায়করা কোথাও খাবার পাচ্ছিলেন না। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা কৃষ্ণনগরে আসতে চাইছিলো না। বিষয়টি দীর্ঘস্থায়ী হলে শহরে পণ্য আমদানির কাজ বিঘ্নিত হবে। মুহূর্তের মধ্যেই খাদ্য সংকট দেখা দেবে। হাহাকার শুরু হয়ে যাবে চারদিকে। শুধু শহর কৃষ্ণনগর নয়, শহর সংলগ্ন সমস্ত গ্রাম, গঞ্জ, মফঃস্বলের পণ্য আমদানি রপ্তানির বিঘ্ন ঘটবে।
“এ যেন ছোট বেলার পড়া হান্স এর গল্পের মতো। ছোট্ট একটি ছিদ্র কি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে গোটা গ্রামের জন্য। তাই আর চুপ করে বসে থাকার মতো পরিস্থিতি ছিলো না।” –বললেন শক্তিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস। আর একার পক্ষে এই কাজ সম্ভব নয় সেটাও একবাক্যে স্বীকার করলেন। ভরসা করলেন প্রাক্তন ছাত্র, বর্তমান ছাত্র, বন্ধু এবং সহকর্মীদের একাংশের উপরে।

This image has an empty alt attribute; its file name is 20200503_111617.jpg

সকলের সহযোগিতায় ট্রাক চালকদের হাতে তুলে দিলেন রান্না করা গরম গরম খাবার। চলল একটানা বেশ কিছু দিন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন কর্তব্যরত পুলিশ অফিসাররা। কোন ট্রাক বাইরে থেকে আসছে, কারা খাবার পাচ্ছে না তা গাড়ির নম্বর প্লেট দেখে বলে দিলেন। কঠিন ছিলো এতদিন একটানা রান্নার আয়োজন করা। কিন্তু ভালো কাজে এগিয়ে আসেন অনেকেই। ছাত্রছাত্রীদের মায়েরা দায়িত্ব নিলেন রান্নার। আর আজ সেইসব মায়েরাই খাবার তুলে দিলেন ট্রাক চালকদের হাতে।

This image has an empty alt attribute; its file name is 20200503_111537.jpg

এমন এক মহৎ কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছাত্ররাও খুব খুশি। উচ্ছসিত প্রশংসা শোনা গেল তাদের গলায়। “স্যার আমাদের খুব প্রিয়। যখনই উনি ডাকবেন, আমরা সবসময় সঙ্গে আছি।” “কাজ এখনও শেষ হয়নি। আমাদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য দিয়ে যতটুকু করা সম্ভব সেটুকুই করেছি। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এগিয়ে এসে যৌথভাবে কাজ করলে অনেক বেশি ফলপ্রসু হয়।” –বললেন রমেশবাবু। ” ইদানিং কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা ট্রাক ড্রাইভারদের চরিত্র সম্পর্কে ভুলবার্তা পৌঁছে দিয়েছে জনমানসে। সব ট্রাক ড্রাইভার সমান নন। তারাও যে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অবিচ্ছেদ্য অংশ তা আজকের এই কর্মকাণ্ড অনেকটাই প্রমাণ করতে পেরেছে।” সব মিলিয়ে ট্রাক চালকদের সমস্যার কথা যে আর কোনো সংগঠন ভাবেনি সেটা সব পথচলতি সাধারণ মানুষই স্বীকার করেছে। ট্রাক চালকরাও স্বভাবতই খুব খুশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.