“সব কিছুর জন্য একটা সর্বব্যাপী মন খারাপ”— লীনা গঙ্গোপাধ্যায়

ক’দিন আগেও বলতাম, “একটু যদি ছুটি পাই, দুচোখ ভরে ঘুমাব! কতদিন যে ভালোভাবে ঘুমোইনি!“

কথা হচ্ছিল লেখিকা, বিশিষ্ট পরিচালিকা, চলচ্চিত্র নাট্যকার এবং রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। একগুচ্ছ জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট বা খসরা সৃষ্টি করেছেন।  ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে জানালেন, “এ রকম লকডাউন হবে স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। জনতা কার্ফু-তে ঘুমোতে শুরু করলাম। কিন্তু তারও তো একটা শেষ আছে! এখন বই পড়ে, রান্না করে, ঘর গুছিয়ে, বইয়ের ধুলো ঝেড়ে, খাওয়া-দাওয়া করে নিজের মত সময় কাটাচ্ছি। কাল সারাদিন প্রচুর বইয়ের ধুলো ঝাড়লাম। বিভিন্ন সময় বেশ কিছু বই কিনে রেখেছি। এগুলো পড়ার সময় সুযোগ হচ্ছিল না। এখন আমার খুব আনন্দ।  স্তূপ করে রেখেছি ঘরে আস্তে আস্তে পড়ব বলে। বই পড়লে মনের দরজা খুলে যায়, প্রশস্ত হয় ভাবনার পরিসর।“
স্বামী ছিলেন রেলের পদস্থ আধিকারিক। পুত্রও চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত। একটা প্রোডাকশন হাউস আছে ওঁর। লীনার কথায়, এমনিতে এমন ব্যস্ততা যে মাঝে মাঝে মনে হত দিনে ২৪ ঘন্টার বদলে ৪৮ ঘন্টা কেন হয় না? সকাল বেলাটা লেখালেখির জন্য বরাদ্দ। দুপুরে যেতাম মহিলা কমিশনের দফতরে, সপ্তাহে তিনদিন। আর সপ্তাহান্তের দুটো দিন যেতাম জেলায় ওই কমিশনেরই কাজে।  অন্য কিছুই সেভাবে করা হত না। এখন একটা দৈনিক সংবাদপত্রের জন্য ধারাবাহিক উপন্যাস লিখলাম।  সন্তুদা (মুখোপাধ্যায়) চলে গেলেন। তাঁর ওপর লিখলাম কিছু লেখা। এবার শুরু করছি আমার আগামী ছবির চিত্রনাট্য।  
দক্ষিন কলকাতার অভিজাত সাউথ সিটির ১৯ তলায় পেল্লাই ফ্ল্যাট। জানালা খুললেই আদিগন্ত আকাশ। অনেক নিচে সবুজ গাছগাছালি, কোথাও ঝুলনের মত ছোট ছোট বাড়ি। মাঝে মাঝে অন্য গাড়ির হর্ণের মৃদু শব্দ পেতাম। এখন শুধু  নৈঃশব্দ। টুকরো টুকরো ভেসে আসছে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন।ছোটপর্দা খুললেই মৃত্যু-মিছিল। এ সব কিছুর জন্য একটা সর্বব্যাপী মন খারাপ। মাঝে মাঝে এ কারণে এই জীবন ভালো লাগছে না। শুধু ঈশ্বরের কাছে  প্রার্থনা করছি, যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি উন্নত হোক।  মানুষ বাঁচুক মাথা উঁচু করে, সুখে-শান্তিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.