বাংলার অধিকাংশ আমগাছে সার-জল পড়ে না; নির্লজ্জ বেহায়ার মতো তবুও ফল দিয়ে যায়। গাছের যদি যত্ন নেওয়া যায়, তবে অনিয়মিত ফলন দেবার প্রবণতাও খানিকটা কমে। ফলন ও ফলের গুণমান বাড়াতে গাছকে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার কথা বিবেচনা করে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈবসার, জীবাণু সার, সবুজসার ইত্যাদি সমন্বয়ের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে। প্রধান খাবার ছাড়াও অনুখাদ্যগুলি পাওয়া দরকার। তাই সুসংহত খাদ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি। কেঁচোসার বা ভার্মি-কম্পোস্ট ব্যবহার লাভজনক এবং কৃষকেরা নিজের জমিতেই তা তৈরি করে নিতে পারেন৷

আম গাছ লাগানোর সময় গাছ প্রতি ২০ কেজি গোবর বা কম্পোস্টসার; ৮০ গ্রাম ফসফেট সার (৮০ x ৬.১ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট বা SSP) দিতে হবে। সাধারণভাবে গ্রীষ্মের সময় ২x২x২ ফুট মাপের গর্ত খুঁড়ে রাখতে হবে। গর্তের মাটি তুলে পাশে রেখে দিন যাতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পেয়ে তাতে রয়ে যাওয়া রোগ সজীব ও পোকা-মাকড় সব মরে যায়। এরপর প্রতিটি গর্তে ১/২ ঝুড়ি ভালোভাবে পচানো গোবর বা অন্যান্য জৈব সার এবং ৫০০ থেকে ৭৫০ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট সার এবং খানিকটা মাটি মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। ভরাট হবার পর তা কয়েকদিন ফেলে রাখলে গর্তের মাটি বসে যায়। এবার সুবিধামত দিনে বর্ষার প্রথমে বাগানে আমের চারা বসানো উচিত।

এক বছর বাদে গোবরসার ২০ কেজি, নাইট্রোজেন ১০০ গ্রাম (১০০ x ২.১৭ গ্রাম ইউরিয়া), ফসফেট ১০০ গ্রাম (১০০ x ৬.১ গ্রাম SSP) এবং পটাশ ১০০ গ্রাম (১০০ x ১.৬ গ্রাম মিউরিয়েট অফ পটাশ বা MOP) দিতে হবে। প্রতি বছর সারের পরিমাণ বাড়বে। পূর্ণমাত্রার ফলন্ত গাছে ১০০ কেজি গোবরসার, ১ কেজি নাইট্রোজেন (১ x ২.১৭ কেজি ইউরিয়া), ৫০০ থেকে ৭৫০ গ্রাম ফসফেট (৫০০/৭৫০ x ৬.১ গ্রাম SSP) এবং ৭৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পটাশ (০.৭৫/১ x ১.৬ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ বা MOP) লাগবে। পুরো সার দু’ভাগে ভাগ করে এক ভাগ বর্ষার আগে ও বাকিটা বর্ষার শেষে দিতে হবে। গাছ প্রতি বছরে ২৫০ গ্রাম অ্যাজোটোব্যক্টর বা অ্যাজোস্পাইরিলাম নামক জীবাণু সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। এইভাবে সার প্রয়োগ করলে ফলন ও ফলের গুণগত মান বাড়ে।

যারা জৈবচাষ করতে চান তারা গাছ প্রতি ৫০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট, ২৫০ গ্রাম অ্যাজোস্পাইরিলাম এবং ২৫০ গ্রাম PSB (Phosphate Solubilizing Bacteria) বা ফসফরাস দ্রবণীয় ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার করতে পারেন, তাতে লক্ষ্নৌ, রাহুড়ি, সাঙ্গারেড্ডি-তে ফলের গুণগত মান ও ফলন বাড়ে বলে প্রমাণিত হয়েছে। মাটিতে ও পাতায় অনুখাদ্যের যথোপযুক্ত যোগান থাকলে ফলন ও উৎকর্ষতা বাড়ে। RDF (Recommended Dose of Fertilizer) বা সুপারিশ মতো কেমিক্যাল ফার্টিলাইজারের সঙ্গে ফসল নেবার পর মাটিতে বেসিন বা গামলা পদ্ধতিতে গাছ প্রতি ১০০ গ্রাম করে জিঙ্ক সালফেট, ৫০ গ্রাম করে কপার সালফেট এবং ৫০ গ্রাম করে বোরাক্স বা সোহাগা প্রয়োগ করতে হবে। তারসঙ্গে গাছে ফুল আসার আগে একবার এবং মার্বেল দশা থাকা ফলের সময় আর একবার স্প্রে করতে হবে ০.২% জিঙ্ক সালফেট, ০.১% কপার সালফেট এবং ০.১% বোরিক অ্যাসিড।

অধিক জানবার জন্য বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ICAR-AICRP on Fruits, Mohanpur Center -এর ফল গবেষণা কেন্দ্রে প্রকল্প আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

ড. কল্যাণ চক্রবর্তী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.