এক নক্ষত্রের গ্রাসে নিশ্চিহ্ন আর এক নক্ষত্র। মহাকাশে ঘুরতে ঘুরতে সঙ্গী তারাটিকে গিলে নিল আর এক তারা। বিরল মহাজাগতিক ঘটনার হদিস পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
মহাকাশ গবেষকরা জানিয়েছেন, আকাশগঙ্গা ছায়াপথে পৃথিবী থেকে ৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরে ঘূর্ণায়মাণ এক নক্ষত্র যুগল সম্প্রতি পরস্পরের সঙ্গে প্রায় এক হয়ে গিয়েছে। একটি তারা অপরটিকে কার্যত গিলে নিয়েছে। ফলে সেখানে যুগ্ম তারার অস্তিত্ব আর নেই বললেই চলে। এমন ঘটনা মহাকাশে বেশ বিরল বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
বস্তুত, মহাকাশে এমন একাধিক জোড়া নক্ষত্রের অস্তিত্ব রয়েছে। তারা একে অপরকে কেন্দ্র করে মৃদু গতিতে পাক খায়। বিজ্ঞানীরা তাদের ‘নক্ষত্র দম্পতি’ কিংবা ‘বাইনারি স্টার’ও বলে থাকেন। আলোচ্য নক্ষত্র যুগল ‘ক্যাটাক্লিসমিস ভ্যারিয়েবল’ শ্রেণির অন্তর্গত। তাদের পরস্পরকে প্রদক্ষিণের গতিও তুলনামূলক বেশি। মাত্র ৫১ মিনিটে পরস্পরের চার দিকে এক পাক সম্পন্ন করে এই দুই তারা। পৃথিবী থেকে তাদের ঔজ্জ্বল্যের হ্রাস-বৃদ্ধিও লক্ষ্য করা যেত প্রায়ই।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, হাজার হাজার বছর ধরে এই দুই তারা পরস্পরের কাছে আসছিল। তাদের মধ্যেকার দূরত্ব কমছিল ক্রমশ। ক্ষুদ্রতর তারাটি বড় নক্ষত্রের থেকে প্রতিনিয়ত উপাদান টেনে নিচ্ছিল। এখন তাদের দূরত্ব এতটাই কমে গিয়েছে যে, চাঁদ এবং পৃথিবীর চেয়েও কাছাকাছি চলে এসেছে নক্ষত্র দু’টি। ফলে আলাদা করে দুই নক্ষত্রের অস্তিত্ব আর বোঝা যাচ্ছে না।
জানা গিয়েছে, নক্ষত্র যুগলের মধ্যে যেটি বৃহত্তর, তার তাপমাত্রা প্রায় সূর্যের সমান। কিন্তু সূর্যের ব্যাসের ১০ শতাংশে নেমে এসেছে এই তারার ব্যাস। ছোট হতে হতে তা এখন বৃহস্পতি গ্রহের মতো আকার ধারণ করেছে।
কেন এমন ঘটনা ঘটল? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। বহু বছর অস্তিত্বশীল থাকার পর মহাকাশে এক সময় নক্ষত্রের আয়ু ফুরিয়ে আসে। ‘মৃত’ নক্ষত্রটি তখন উজ্জ্বল বামন মহাজাগতিক বস্তুর আকার ধারণ করে। নিকটবর্তী নক্ষত্রের উপাদানও শোষণ করতে শুরু করে সেটি। এ ক্ষেত্রে সেই ঘটনাই ঘটেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার পালোমার পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য এবং হাওয়াই ও ক্যানারি দ্বীপের টেলিস্কোপের সাহায্যে এই বিরল মহাজাগতিক কাণ্ডের হদিস পেয়েছেন গবেষকরা।