মঙ্গলে কর্মহীন নাসার রোবট। প্রায় ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে লাল গ্রহে নিজের কর্তব্য পালনের পর অকেজো হয়ে পড়ল নাসার ল্যান্ডার ইনসাইট (নাসার রোবট)। উত্ক্ষেপণের পর থেকে মঙ্গল গ্রহে ঘুরে বেড়িয়েছে ইনসাইট। কী কাজ ছিল এই রোবটের? লাল গ্রহে ভূমিকম্প হয় কি না, হলে সেই কম্পনের তীব্রতা কত, মূলত এই দু’টি তথ্য় জোগাড় করার কাজেই ব্য়স্ত ছিল ইনসাইট।
2018-র 26 নভেম্বর ল্যান্ডার রোভারটি মঙ্গল গ্রহে পৌঁছেছিল। সম্প্রতি ল্যান্ডারের তরফে পাঠানো একটি ছবি টুইটারে শেয়ার করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা। সেই ছবির সূত্র ধরেই নাসা জানিয়েছে, মঙ্গলে জীবনযাপন শেষ হয়েছে ইনসাইট-এর। চলতি বছরের 19 নভেম্বর নাসার তরফে শেয়ার করা সেই ছবিতেই ধরা পড়েছে মঙ্গলের ‘শেষ চিত্র’। 19 নভেম্বরের সেই টুইটের খবর প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। ইনসাইট-এর সেই ছবির সঙ্গে টুইটে একটি ছোট্ট বাক্য জুড়ে দিয়েছে নাসা: ‘আমার জন্য চিন্তা করো না (Don’t Worry About Me)’। লেখার সঙ্গে সঙ্গে কী ছবি টুইট করেছিল নাসা? টুইটার হ্যান্ডেলে দেখা যাচ্ছে, লাল গ্রহের মাটিতে পড়ে রয়েছে ল্যান্ডার ইনসাইট।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এ বছর নভেম্বর মাসেই ইনসাইট সম্পর্কে সতর্কবার্তা শোনানো হয়েছিল নাসা-র তরফে। সেই সতর্কবার্তায় বলা হয়েছিল, সময় ফুরিয়ে আসছে ইনসাইট-এর। অর্থাত্ গত চার বছর ধরে মঙ্গলের বাসিন্দা ইনসাইট শক্তি হারাচ্ছে। কেন এমন পরিণতি ইনসাইট-এর? উত্তরে নাসা জানিয়েছিল, লাল গ্রহের ধূলিকণা ধীরে-ধীরে নষ্ট করে দিয়েছে ইনসাইটের শক্তি।
এই সতর্কতাবাণীর এক মাস পর ইনসাইট একটি বার্তা পাঠায় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে। অনেকটা যেন চিঠির আকারে লেখা সেই মহাকাশ-বার্তা। তাতে লেখা ছিল, “আমার শক্তি সত্যিই কম হয়ে আসছে। তাই এটিই হতে পারে আমার পাঠানো শেষ ছবি। তবে আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না। এখানে আমার ক্ষমতা কমে এসেছে। আমি যদি আমার মিশন টিমের সাথে কথা বলতে পারতাম, অবশ্যই তা করতাম-কিন্তু শীঘ্রই এখান থেকে বিদায় নেব আমি। আমার সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।”
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে নাসার এই রোবোটিক ল্যান্ডার মঙ্গলের পৃষ্ঠের সিসমিক তরঙ্গ শনাক্ত করে। ইনসাইট মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করেছিল 2018 সালের নভেম্বরে। এই সিসমিক তরঙ্গের খোঁজ পাওয়াই ছিল নাসাকে দেওয়া ল্যান্ডারের তরফে সবচেয়ে যুগান্তকারী তথ্য। ইনসাইটের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলে এক হাজারেরও বেশি ভূ-কম্পন চিহ্নিত করা হয়েছে। আর তার মাধ্যমে যা প্রমাণিত হয়েছে, তা হল, মঙ্গল গ্রহে প্রাণ থাকা সম্ভব।
‘ঘুমের দেশে’ চলে গেলে কীভাবে ইনসাইট-এ থাকা তথ্য হাতে আসবে নাসার? এই ‘রোবটিক জিওলজিস্ট’-কে ‘স্লিপ ফরএভার’ মোড-এ পাঠানোর আগে নাসার তরফে নিশ্চিত করা হয়েছিল, যাতে কোনওভাবেই গত চার বছর ধরে সংগৃহীত তথ্যগুলি নষ্ট না-হয়ে যায়। NASA-র জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি (JPL) দ্বারা পরিচালিত হয় এই যান। এর বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ইউরোপীয় বিভিন্ন সংস্থায় তৈরি। চলতি বছরের মে মাসে ৫.০ মাত্রার একটি বড় ভূমিকম্পও শনাক্ত করে নাসার এই যান। পৃথিবীতে যার প্রভাব রিখটার স্কেলে অনুভূত মাঝারি মাপের ভূমিকম্পের মতো।