প্রাথমিক বিপত্তি কাটিয়ে ক্ষুদ্রতম রকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করল ইন্ডিয়ার স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো)। কিন্তু সেটি কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছয়নি বলে জানিয়েছেন ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। তাঁরা এ-ও জানান, যে দু’টি কৃত্রিম উপগ্রহ ওই রকেটের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল, সেগুলি আর ব্যবহারযোগ্য নয়।
অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে আজ সকালে দু’টি কৃত্রিম উপগ্রহ নিয়ে আকাশে ওড়ার আগে সমস্যায় পড়েছিল ১২০ টনের ওই রকেটটি। ইসরোর তরফে জানানো হয়, উৎক্ষেপণের শেষ পর্যায়ের অনেক তথ্য হারিয়ে গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা সেই তথ্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
শ্রীহরিকোটা থেকে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দেয় স্মল স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিক্ল (এসএসএলভি-ডি১)। এতে আর্থ অবজা়রভেশন-০২ এবং পড়ুয়াদের তৈরি ‘আজ়াদিস্যাট’ নামে কৃত্রিম উপগ্রহ ছিল। তবে উপগ্রহ দু’টি ঠিক মতো কক্ষপথে পৌঁছতে পেরেছে কিনা, সে সম্পর্কে প্রথম থেকেই নিশ্চিত ছিলেন না ইসরোর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। সংস্থার চেয়ারম্যান এস সোমনাথ বলেন, ‘‘এসএসএলভি-ডি১ সব ক’টি পর্যায়ে আশানুরূপ ফল দেখিয়েছে। এই মিশনের অন্তিম পর্যায়ের কিছু তথ্য হারিয়ে গিয়েছে। উপগ্রহ দু’টি স্থিতিশীল অবস্থায় কক্ষপথে পৌঁছেছে কিনা, তা দেখার জন্য তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।’’
পরে এক বিবৃতিতে ইসরো জানিয়েছে, এসএসএলভি-ডি১ কৃত্রিম উপগ্রহগুলিকে ৩৫৬ কিলোমিটার বৃত্তাকার কক্ষপথের পরিবর্তে ৩৫৬ X ৭৬ কিলোমিটার উপবৃত্তাকার কক্ষপথে স্থাপন করেছে। কৃত্রিম উপগ্রহগুলি আর ব্যবহারযোগ্য নয়। প্রযুক্তিগত ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়েছে। সূত্রের খবর, মনে করা হচ্ছে, রকেটের যে অংশটি কৃত্রিম উপগ্রহগুলিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করে, সেটি চূড়ান্ত পর্যায়ে সঠিক ভাবে কাজ না করায় এই বিপত্তি।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে ৭৫০ জন স্কুল পড়ুয়াকে দিয়ে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ করা হয়েছিল। একটি ছোট রকেটের মাধ্যমে সেটিকে আজ উৎক্ষেপণ করা হয়। সব ঠিক থাকলে পড়ুয়াদের তৈরি ওই কৃত্রিম উপগ্রহটি ঘুরত পৃথিবীর অক্ষে। সেখান থেকে খুঁটিনাটি তথ্য পাঠাত ইসরোর বিজ্ঞানীদের জন্য। কিন্তু ইসরো জানিয়েছে, ওই উপগ্রহ আর ব্যবহারযোগ্য নয়। ‘স্পেস কিডস্ ইন্ডিয়া’ নামে একটি মহাকাশ গবেষণা সংস্থার অধীনে সাড়ে সাতশো পড়ুয়া ওই কৃত্রিম উপগ্রহটি তৈরি করে। কাল রাত ২টো থেকে শুরু হওয়া কাউন্টডাউনের সাতটি ধাপে মহাকাশ যানটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়। যে সব পড়ুয়া ওই কৃত্রিম উপগ্রহটি তৈরিকরে, উৎক্ষেপণের সময় তারা উপস্থিত ছিল।
৭৫০ জন পড়ুয়ার মধ্যে ছিল তেলঙ্গানার ছাত্রী শ্রেয়া। তার কথায়, ‘‘আমাদের স্কুলের তিনটি দল এই প্রকল্পে অংশ নিয়েছিল। এতে কাজের সুযোগ পাওয়ায় খুব খুশি হয়েছি। কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে ঠিকই, তবে অনেক কিছু শিখতেও পারলাম।’’
শেষ মুহূর্তের তথ্য হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কে ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান মাধবন নায়ার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে জানিয়েছেন, উৎক্ষেপণের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তথ্য আসতে শুরু করে। তাঁর মতে, এই মিশনটি বেশ ‘জটিল’। তিনি জানিয়েছেন, তৃতীয় পর্যায় পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। উৎক্ষেপণের চূড়ান্ত পর্যায়ে কিছু বিচ্যুতি ঘটে থাকতে পারে। এমনটা ঘটে থাকতে পারে প্রযুক্তিগত কোনও সমস্যার কারণে।