সারা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন এখন বিজ্ঞানীদের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ। কোথাও অতিবৃষ্টি, কোথাও খরা আবার কোথাও ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই সমস্যা থেকে পৃথিবীতে রক্ষা করতে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি NASA-র উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বিশ্বের মহাসাগর, হ্রদ এবং নদীগুলির সমীক্ষা করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে উত্ক্ষেপণ করা হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের প্রায় 170 মাইল (275 কিলোমিটার) উত্তর-পশ্চিমে ভ্যানডেনবার্গ ইউএস স্পেস ফোর্স বেস থেকে SWOT (Surface Water and Ocean Topography)-কে পৃথিবীর কক্ষপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল স্যাটেলাইটটি। যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়, এসইউভি আকারের স্যাটেলাইটটি কয়েক মাসের মধ্যে গবেষণার তথ্য তৈরি করে পাঠাতে শুরু করবে।
এই মিশনের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হল, সমুদ্র ও মহাসাগরগুলি কীভাবে বায়ুমণ্ডলীয় তাপ এবং কার্বন ডাই অক্সাইডকে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শোষণ করে, তা অন্বেষণ করা। উল্লেখ্য, ওই পদ্ধতি প্রাকৃতিকভাবে বিশ্বের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে হ্রাস করতে সহায়তা করে।
গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আটকে থাকা অতিরিক্ত তাপের 90 শতাংশের বেশি মহাসাগরগুলি শোষণ করেছে বলে অনুমান করছেন বিজ্ঞানীরা। এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে সমুদ্র ও মহাসাগরগুলি পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা সমুদ্র স্রোত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলিকে সঠিকভাবে পরিমাপ করতে পারবেন বলে জানা গিয়েছে। প্রতি 21 দিনে দু’বার করে তথ্য পাঠাবে এই স্যাটেলাইটটি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ঝড় ও বন্যার প্রভাব কোন এলাকার কত অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে, তা স্পষ্ট করে জানা যাবে। ঋতু পরিবর্তন এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে নদী, সমুদ্র এবং হ্রদের জলস্তর ওঠানামাকে আরও ভালভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম হবে নাসা।
প্রসঙ্গত, স্যাটেলাইটটি তৈরি করা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলসের কাছে অবস্থিত নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরিতে। কানাডা এবং ব্রিটেনের সহযোগীদের নিয়ে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA প্রায় 20 বছর ধরে এই গবেষণার কাজ করে চলেছে। SWOT-র 15টি মিশনের মধ্যে একটি ছিল জাতীয় গবেষণা কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত প্রকল্প।