বিজ্ঞানীরা অসম এবং অরুণাচল প্রদেশ সীমান্ত লাগোয়া হিমেবস্তি গ্রামে একটি ভূমিকম্পের প্রথম ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ পেয়েছেন। ঐতিহাসিকরা এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে শদিয়া ভূকম্প হিসাবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করেছেন। এই ভূকম্পের ফলে ওই এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ১৬৯৭ সালে সীমান্ত লাগোয়া ওই গ্রামটি ধ্বংস হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার পূর্ব হিমালয় অঞ্চলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি-প্রবণ এলাকাগুলির মানচিত্র নির্মাণে সাহায্য করতে পারে। এর ফলে, এই অঞ্চলে নির্মাণ কাজ ও পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে আরও সুবিধা পাওয়া যাবে।
ঐতিহাসিক নথিপত্রে পূর্ব হিমালয় অঞ্চল বরাবর বার বার ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটলেও তার ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ বিশেষ নেই। তাই, প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলি লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে গিয়েছিল? আরও প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে এই ভূমিকম্পগুলি পূর্ব হিমালয় অঞ্চলে ভূমিকম্পের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে দিশা দেখাতে পারে?
উল্লেখ করা যেতে পারে, হিমালয়ের এই অঞ্চলে লক্ষ লক্ষ মানুষের বাস। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের অধীন ওয়াদিয়া ইন্সটিটিউট অব হিমালয়ান জিওলজি (ডব্লিউআইএইচজি) গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা অরুণাচল প্রদেশের হিমেবস্তি গ্রামে ব্যাপক খনন কাজ চালিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের এই উদ্যোগের ফলে ১৬৯৭ খ্রিষ্টপূর্বে শদিয়া ভূমিকম্পের একাধিক প্রমাণ মিলেছে। বিজ্ঞানীরা এই ভূকম্পকে আধুনিক ভূতাত্ত্বিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। ভূকম্পের এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে বিজ্ঞানীরা সেখান থেকে ২১টি রেডিও কার্বন নমুনা সংগ্রহ করেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় বিজ্ঞানীরা আরও জানতে পেরেছেন, সে সময় সুবনসিরি নদী যে পথে নীচের দিকে অগ্রসর হয়েছে, সেখানে বন্যার ঘটনা ঘটেছিল এবং ওই বন্যার দরুন ব্যাপক ভূমিক্ষয় হয়েছিল।
স্বাভাবিকভাবেই এই ভূমিক্ষয়ের প্রভাব সেই অঞ্চলের ওপর পড়ে এবং ভূমিকম্পের ঘটনাও ঘটে। পরবর্তী ছয়মাস ধরে এই ভূকম্পের প্রভাব প্রতিফলিত হয়। ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্ট’ শীর্ষক এক জার্নালে সম্প্রতি এই সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।