ঔষধের মূল্যবৃদ্ধি: তথ্য, সত্য, অর্ধসত্য ও ভারতবর্ষ

এপ্রিল মাসের ১ তারিখ থেকে ভারতের বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পেতে চলেছে বেশ কিছু ওষুধের। ওষুধের এমত মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে এবং সে উদ্বেগ অতি সঙ্গত। সোশ্যাল মিডিয়া ও মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় প্রকাশিত বেশ কিছু লেখা প্রয়াস করেছে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেমত মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মানুষের উদ্বেগকেও আরও বাড়িয়ে তুলতে। কিন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যে ধরনের তথ্যমূলক ও সত্যনিষ্ঠ লেখা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনো উচিত ছিল, তেমনটি এখনও পর্যন্ত চোখে পড়ে নি। মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে কোন্ ওষুধগুলির এবং কেন হচ্ছে ইত্যাদি প্রশ্নের তথ্যনিষ্ঠ উত্তর না দিয়ে ভাসাভাসা ও প্রচারমূলক সংবাদ পরিবেশনের ওপরেই জোর দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মেইনস্ট্রিম সংবাদমাধ্যমগুলি। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু মানুষের সুস্থতা সম্পর্কিত, তাই এ বিষয়ে প্রচার অপেক্ষা আদত তথ্যের প্রয়োজন বেশি। সবচেয়ে বড় কথা, যে ওষুধগুলির দাম বাড়ছে, সেগুলির দাম কেন বাড়ছে, কতখানি বাড়ছে এবং সেমত মূল্যবৃদ্ধির সম্মতি যদি ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটিকে এই মুহূর্তে(NPPA) না দিত ভারত সরকার তাহলে কি হতে পারত, সাধারণ মানুষের সেসব জানা প্রয়োজন।

দাম বাড়তে চলেছে ন্যাশনাল লিস্ট অফ এমার্জেন্সি মেডিসিনস্ বা NLEM’এর অন্তর্ভুক্ত ওষুধগুলির। এর মধ্যে পড়বে ব্যথা কমানোর ওষুধ, সংক্রমণ কমানোর ওষুধ, জ্বর কমানোর ওষুধ, রক্তাল্পতা কমানোর ওষুধ, ভিটামিন ও মিনারেল প্রিপারেশনস, কোভিডের চিকিৎসায় ব্যবহৃত আরও কিছু ওষুধ, কিছু স্টেরয়েড প্রডাক্ট এবং আরও বেশ কিছু অন্যান্য ওষুধের। NLEM এ অন্তর্ভুক্ত ওষুধের মোট সংখ্যা এই মুহূর্তে 886টি। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে সর্বপ্রথম প্রশ্ন হল, এতদসকল ওষুধের দাম কি আগে কখনও বাড়ে নি? বাড়ছে কি এই প্রথম? উত্তর হল, নিয়ন্ত্রিত মূল্যের এইসব শেডিউলড্ ওষুধের দাম প্রতিবছরই নিয়মমাফিক সংশোধন করে ভারত সরকার এবং প্রতি বছরই এইসব ওষুধের মূল্যের কিছু না কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে দেশের হোলসেল প্রাইস ইনডেক্সের (WPI) ওপর নির্ভর করে। বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি (NPPA)’র তথ্য অনুযায়ী গত বছরও এসব ওষুধগুলির দাম বেড়েছিল 5%, তবে এবছরের বিশেষত্বটি হল— এবছর এপ্রিল মাস থেকে কন্ট্রোলড্ প্রাইসের শেডিউলড ওষুধগুলির দাম বাড়তে চলেছে 10% এবং এইটিই শেডিউলড্ ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির সরকার নির্দিষ্ট সর্বাধিক হার। এর বেশি হারে এইসব ওষুধের দাম বাড়ানোর প্রভিশন আইনেই নেই। অর্থাৎ যতখানি দাম বাড়ানো সম্ভব ছিল ততখানিই দাম সরকার এবছর বাড়িয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠতে পারে যে এতখানি মরিয়া হয়ে সর্বাধিক হারে দাম বাড়াতে সরকার গেল কেন? আম্বানি আদানিদের সুবিধে করে দেওয়ার জন্য? সত্যনিষ্ঠ উত্তর চাইলে জানতে হবে বেশ কিছু তথ্য।

ভারতকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর ফার্মেসি অর্থাৎ বিভিন্ন ওষুধের নানা ডোসেজ ফর্ম যেমন ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, লিকুইডস, ইঞ্জেকশন, এরোসল ইত্যাদিগুলি এদেশে তৈরি হয় প্রচুর পরিমাণে এবং ভারতে তৈরি ফর্মুলেশন এক্সপোর্ট হয় সর্বত্র। কিছু উদাহরণ দিলে বিষয়টি হয়ত আরও খানিক স্পষ্ট হবে। কোভিড প্যাণ্ডেমিকের ফার্স্ট phase’এ ভারতবর্ষ জীবনদায়ী ওষুধ এবং মেডিকেল ইক্যুইপমেন্টস্ সরবরাহ করেছে 150’টিরও বেশি সংখ্যক দেশকে। তাছাড়া, এবছরের 28শে মার্চ পর্যন্ত মোট 98 টা দেশকে ভারতবর্ষ সরবরাহ করেছে ভারতে প্রস্তুত কোভিভ ভ্যাকসিনের মোট 17 কোটি 4 লক্ষ 46 হাজার 400’টি ডোজ, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে ক্রমাগত পাঠিয়েছে ও পাঠাচ্ছে জীবনদায়ী ওষুধসহ অন্যান্য নানা ওষুধ এবং তালিবানের খপ্পরে পড়ে যাওয়া আফগানিস্তানেও এ যাবৎ পাঠিয়েছে 6.6 টন জীবনদায়ী ওষুধ। “সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি”। রাণী, কারণ ভারতবর্ষ ‘মা’। সকলের প্রতি এদেশের মমতা ও মানবিক অনুভূতি তাই প্রশ্নাতীত। কিন্তু অনুভূতি থাকা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সামর্থ্যের। সে সামর্থ্য অর্জনে ভারতের নিরলস প্রয়াসেও নেই ঘাটতি। “মেক ইন ইণ্ডিয়া” উদ্যোগের ফলে ভারতে ওষুধের নানা ফর্মুলেশনের প্রডাকশন ও এক্সপোর্ট দুই-ই বেড়েছে অনেক বেশি। এবার প্রশ্ন হল, এতকিছু ভালো যদি হয়েই থাকে, তাহলে আভ্যন্তরীণ বাজারে শেডিউলড্ ওষুধের দাম বাড়াতে সরকারকে হচ্ছে কেন? তবে কি দেশের লোককে শোষণ করে বিদেশের কাছে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চাইছে ভারত? যাকে বলে— “ঘর জ্বালানী পর ভুলানী”? তথ্যনিষ্ঠ উত্তর প্রয়োজন।

ফর্মুলেশন অর্থাৎ ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ইঞ্জেকশন আদি ডোসেজ ফর্ম তৈরি করতে ওষুধের যে মূল উপাদান (যাকে বলা হয় বাল্ক ড্রাগ/এপিআই অর্থাৎ অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট)প্রয়োজন হয়, সেই জৈব রাসায়নিক পদার্থগুলির প্রায় 70%’ই ভারতে তৈরি হয় না, বরং API ভারতকে আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে যার একটি বড় অংশই আবার আমদানিকৃত হয় চীন থেকে। কোভিড প্যাণ্ডেমিকের কারণে গত দু’বছরে এতদসকল এপিআই’এর দাম চীন তথা অন্যান্য উৎপাদক দেশগুলি বাড়িয়েছে 15% থেকে 130% পর্যন্ত। প্যারাসিটামলের এপিআই প্যারা অ্যামাইনো অ্যাসেটাইল স্যালিসাইলিক অ্যাসিডের দাম বেড়েছে 130%. অনুরূপভাবে, ওষুধের ফর্মুলেশন ম্যানুফ্যাকচারিং’এ এপিআই ছাড়া আর যা কিছু লাগে, (যাকে বলে এক্সিপিয়েন্টস্) সেগুলিরও মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে 18% থেকে 262%. যেমন, গ্লিসেরিন এবং প্রপিলিন গ্লাইকল হল এমন দুই সলভেন্ট (দ্রাবক) যেগুলি বিভিন্ন ওষুধের লিকুইড ফর্মুলেশন ম্যানুফ্যাকচারিং’এ ব্যবহৃত হয়। প্যাণ্ডেমিকের গত দু’বছরে গ্লিসেরিনের দাম বেড়েছে 263% আর প্রপিলিন গ্লাইকলের 83%. তাছাড়া, এপিআই থেকে ফর্মুলেশন তৈরির গোটা পদ্ধতিটিতে তৈরি হয় এমন বহু ইন্টারমিডিয়েট প্রডাক্ট যেগুলিও এক একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ওষুধ। গত দু’বছরে 11% থেকে 175% মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে এই ধরনের ইন্টারমিডিয়েট প্রডাক্টগুলিরও। যেমন, পেনিসিলিন জি একটি ইন্টারমিডিয়েট প্রডাক্ট যেটির মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে 175% এবং এটি একটি অ্যান্টিবায়োটিক যা সংক্রমণ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয় মূলতঃ ইঞ্জেকশন হিসেবে। এই দ্রব্যগুলি ভারতবর্ষ দেশের মধ্যে উৎপাদন করে না বরং নিয়ে আসে আমদানি করে। প্যাণ্ডেমিকের কারণে উদ্ভুত অতিরিক্ত চাহিদার ফলে এবং প্যাণ্ডেমিক চলাকালীন লকডাউনের কারণে চাহিদার তুলনায় উৎপাদনের গতি হ্রাস পাওয়ায় এই সমস্ত এপিআই, এক্সিপিয়েন্টস এবং ইন্টারমিডিয়েট প্রস্তুতকারক দেশগুলি এসবের দাম দিয়েছে অনেকখানি বাড়িয়ে। অতএব সেই কারণেই সেইগুলির ব্যবহারে তৈরি এণ্ড প্রডাক্ট অর্থাৎ ওষুধের ফর্মুলেশনগুলির দাম না বাড়িয়ে এই মুহূর্তে ভারতের আর কোনো উপায় নেই। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির আদত কারণ এইটি।

মূল্যবৃদ্ধি মানুষের পক্ষে বিড়ম্বনাকর হলেও এ বিষয়ে আদত বিপদটি ছিল এই যে এতদসত্ত্বেও যদি দাম না বাড়ানোর গা জোয়ারি সিদ্ধান্ত ভারত সরকার নিত, তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধের জোগানে প্রথমতঃ দেখা দিত ঘাটতি এবং অতঃপর দেখা দিত জাল ওষুধের রমরমা। এপিআই’এর দাম বাড়ার ফলে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছিল আগে থেকেই। কিন্তু ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণে ও অনুরোধে গত দু’বছর যাবৎ শেডিউলড্ ওষুধগুলির দাম উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির অনুপাতে বাড়াতে তারা পারে নি। এমত চাপ স্বীকার করে প্যাণ্ডেমিকের দু’বছর টানার পর আরও টানতে নিশ্চিতভাবেই রাজী হত না ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি, ফলে বাজার দখল করত জাল ওষুধ। আন্দাজ করা যায় যে ভারতের শাসনভার যদি এই সময়ে কংগ্রেসের হাতে থাকত, তবে জনমোহিনী নীতি নিয়ে তারা হয়ত রাজী হত না ওষুধের দাম বাড়াতে, কিন্তু তার দ্বারা আদতে পরোক্ষে উৎসাহ দেওয়া হত জাল ওষুধওয়ালাদের এবং বাড়ত ওষুধের ব্যবহারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু মানুষের দুর্নীতির সুযোগ। কংগ্রেস আমলে এভাবেই সর্বক্ষেত্রে তৈরি হয়েছিল দুর্নীতিপরায়ণতা এবং একদল অন্যায্য সুবিধাভোগী গোষ্ঠী। বর্তমান ভারত সরকার সেটি ঠেকাতে চাইছে বলেই হয়ত এনডিএ পরিচালিত সরকারের উপর বেশি পরিমাণে আসছে অর্ধসত্যপ্রচারের আঘাত। তবে স্বাধীনতাউত্তরকালে এতবছর কাটার পরেও কেন প্রয়োজনীয় বাল্ক ড্রাগ ম্যানুফ্যাকচারিং’এ উপযুক্ত উদ্যোগ ভারত সরকার এযাবৎ নেয় নি সে প্রশ্ন সঙ্গত এবং সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর বোধ করি নেই। তবে বর্তমান ভারত সরকার যে পথে এগোচ্ছে তাতে অদূর আগামীতে ফার্মা দুনিয়া যে ভারতের কথা শুনে চলবে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ কম। গুজরাটের জামনগরে ভারত সরকারের আয়ুশ মন্ত্রকের উদ্যোগে তৈরি হতে চলেছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (WHO) ট্রাডিশনাল মেডিসিনের গ্লোবাল সেন্টার এবং ভারত সরকার এবং ডব্লু এইচ ও (WHO) উভয়ের তরফ থেকেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সে ঘোষণা করা হয়ে গিয়েছে। এ খবরের আদত গুরুত্ব ওয়াকিবহাল মহল অনুমান করতে পারবেন।

এপ্রিল মাস থেকে দাম 10% বাড়তে চলেছে প্রায় 886টি ওষুধের। এর মধ্যে আছে জ্বর ও ব্যথা কমানোর ওষুধ প্যারাসিটামল এবং আপার রেসপিরেটরি ট্রাক সংক্রমণের (সহজ ভাষায় সর্দি, কাশি গলা ব্যথা, কান ব্যথা, টনসিলাইটিস জাতীয় লক্ষনসমূহ)চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যাজিথ্রোমাইসিন। তাছাড়াও বাড়বে সিপ্রোফ্লক্সাসিন, মেট্রোনিডাজোলের মত অ্যান্টিবায়োটিক এবং ফেনোবারবিটোন ও ফেনিটয়েনের মত এপিলেপ্সির ওষুধের দামও। বস্তুতঃ, নিয়ন্ত্রিত মূল্যের এই ওষুধগুলি দখল করে রয়েছে ভারতে ওষুধের Rs. 1.5 ট্রিলিয়ন মূল্যের খুচরো বাজারের প্রায় 16% থেকে 18%. 10% দাম বাড়বে এগুলির। এর প্রকৃত অর্থ হল— প্যারাসিটামল ট্যাবলেট বানানোর র মেটিরিয়াল’এর (এপিআই) দাম যেখানে গত দু’বছরে বেড়েছে 130%, সেখানে দু’বছর পর আজ প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের দাম বাড়তে চলেছে 10%. অর্থাৎ এযাবৎ যে 15 টি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট পাওয়া যেত 20 টাকায়, সেই 15 টি ট্যাবলেট এখন পাওয়া যাবে 22 টাকায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, দাম না বাড়ালে কমে যেতে চলেছিল প্যারাসিটামলের জোগান এবং সেই শূন্যস্থান জাল ওষুধ নিয়ে দখল করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিল কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এমত প্রকৃত বিপদ সম্বন্ধে সাধারণ মানুষকে অবগত না করানোর অর্ধসত্যকথনপ্রক্রিয়াটি ভুল শুধু নয়, একটি হোয়াইট কলার অপরাধ বললে ভুল বলা হয় না। এ রাজ্যের মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলি এমত অর্ধসত্যকথনে ক্লান্তিহীন।

শেষ করার আগে একথা বলা প্রয়োজন যে চিকিৎসা ক্ষেত্রটিকে সার্বিকভাবে জনস্বাস্থ্যবীমার অধীনে নিয়ে না আসা পর্যন্ত মধ্যবিত্তের ভোগান্তি কমবে না এবং তার জন্য প্রয়োজন জনমত গঠন। দেশের 50 কোটি মানুষের জন্য যে “আয়ুষ্মান ভারত” বীমার সুবিধা ভারত সরকার তৈরি করেছে, সেই সুবিধা সমস্ত ভারতবাসীর জন্য নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন। স্বেচ্ছায় সে বীমার আওতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতাও যেমন সব মানুষকে দিয়ে রাখা উচিত, তেমনই বীমার আওতায় দেশের 100% মানুষকে নিয়ে আসার কাজটিও কর্তব্য। তবে এমত আশা করা যায় দেশের বর্তমান সরকারের কাছ থেকেই। পূর্ববর্তী সরকার ভারতকে এবং ভারতের মানুষকে আত্মনির্ভর করে তোলার কার্যকরী ও যথাসাধ্য প্রয়াস এযাবৎ করে নি বলেই তাদের ওপর ভরসা করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।

প্রায় এক হাজার বছর বাদে ভারতবর্ষের নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেহারাটি দেখে যাঁরা ভয় পেয়ে যাচ্ছেন, মানুষকে ভুল ও অর্ধসত্য বোঝাতে উদ্যত হচ্ছেন তাঁরাই। যে সরকার দেশের 80 কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশষ্য দেয়, গরীব ও নিম্ন মধ্যবিত্তের বাসস্থান গড়ে দেয়, শৌচালয় বানিয়ে দেশের অধিকাংশ জায়গাকে ওপেন ডিফিকেশন ফ্রি করার কাজে অর্জন করে ফেলে প্রায় 100% সাফল্য (মানুষের এতকালের অভ্যেস অন্যরকম হওয়া সত্ত্বেও), দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার পর উঠে পড়ে লাগে দেশের প্রতি ঘরে ‘কল খুললেই জল’এর ব্যবস্থা করার জন্য, সেই সরকারের সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন যাঁরা তুলছেন, তাঁরা আদতে সমাজতন্ত্রের নামে দেশের সম্পদ লুঠ করবার সেই পুরোনো দিনগুলো ফিরে পেতে চাইছেন। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে আন্দাজ করা যায় সেদিন বোধ করি আর ফিরবে না। ভারতবর্ষ এবার সামনে হাঁটবে। অর্ধসত্যের ঘায়ে তাকে কাবু করা কিঞ্চিৎ গেলেও যেতে পারে, কিন্তু পেড়ে ফেলা বা থামানো আর যাবে না।


দেবযানী ভট্টাচার্য্য
Debjani Bhattacharyya

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল এঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তনী, বর্তমানে পেশায় বিজনেস কনসালটেন্ট ও এন্টারপ্রেনেয়র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.