বেনজির রেকর্ড গড়ল NRS, ১০০ জনের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন নজির সরকারি হাসপাতালের

 সুমনের সেই বিখ‌্যাত গান, ‘দশফুট বাই দশফুট’ গানের লিরিকগুলো মনে করতে করতে এগারো বছর পিছিয়ে যেতে হবে। তবে এই গান আবারও মনে এল NRS-এর হেমাটোলজি বিভাগের কীর্তিতে। পাঁচতলায় দশফুট বাই দশফুট ঘরে নিঃশব্দে সূচনা হল এক নতুন অধ‌্যায়ের। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করে ক‌্যানসার রোগীকে জীবনে ফেরানোর লড়াই।

NRS

রোগিনী বেলা সরকার তখন তরুণী। বিভিন্ন হাসপাতাল ফিরিয়ে দিয়েছে। যুক্তি দেখিয়েছে, ব্লাড ক‌্যানসারের এই কেস নিরাময় অসম্ভব। শেষে এনআরএস। একবার দেখাই যাক না, এমনটা ভেবে হেমাটোলজি বিভাগ ভরতি করে নিল। দিনকয়েক বাদে সেই ‘দশফুট বাই দশফুট’ ঘরে। এসি আছে, কিন্তু লোহার পাতের দরজা টেনে খুলতে হয়। স্টিলের খাটে তোশক পাতা। সেখানেই জায়গা হল বেলা সরকারের। ঘরে দূষণমুক্ত করার আধুনিক প্রযুক্তি তখন স্বপ্ন, খানিকটা বিলাসিতাও বটে। অস্থিমজ্জা বদলের পরে বাতাসে ভেসে থাকা জীবাণু রোগীর পক্ষে কতটা ঝুঁকির, সেই সহজ বিজ্ঞান স্বাস্থ‌্যকর্মীদের বোঝানোই ছিল বড় চ‌্যালেঞ্জ।

বেলার শরীর থেকে একটি সুস্থ অস্থিমজ্জা তুলে নেওয়া হল। দিনকয়েক পরে বাকি সব অস্থিমজ্জা নষ্ট করা হল। আদি অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হল। দিন-রাত এক করে রোগিণীর কাছে সর্বক্ষণ থাকতেন ডা. তুফান দলুই। মাসখানেক বাদে পরীক্ষার ফল হাতে এল। বেলার পরিবার যতটা না খুশি, তার শতগুণ আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল এনআরএস মেডিক‌্যাল কলেজে। ক‌্যানসারমুক্ত হয়েছেন বেলা সরকার!

মাঝের ১১ বছরে অনেক বদল হয়েছে। গত সপ্তাহে ২৮ বছরের রাজেশ্বর পালের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করে তাঁকে ক‌্যানসারমুক্ত করেছে সরকারি হাসপাতাল এনআরএস, যেখানে দু’টাকার টিকিট কেটে নিখরচায় চিকিৎসা মেলে। একই সঙ্গে ছুঁয়ে ফেলেছে সেঞ্চুরির অবিশ্বাস‌্য শিখর। কলেজের অধ‌্যক্ষ ডা.পীতবরণ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘গর্ব হচ্ছে। দিল্লির এইমস বা পিজিআই চণ্ডীগড়ে আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামো। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একশোজনকে ক‌্যানসারমুক্ত করেছে আমাদের হাসপাতাল।’’

nrsapp_web

একই বক্তব‌্য উপাধ‌্যক্ষ ডা.ইন্দ্রাণী পালের। হেমাটোলজি অ‌্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশনের বিভাগীয় প্রধান তুফান দলুইয়ের কথায়, ‘‘আমার সহযোগী চিকিৎসক নার্স, মেডিক‌্যাল টেকনোলজিস্ট থেকে সাফাইকর্মী– সবার সহযোগিতা না থাকলে এটা সম্ভব হত না। যাঁরা ক‌্যানসার মুক্ত হয়েছেন তাঁরা মাঝেমধ্যে চেকআাপে আসেন। ভাল লাগে।’’ সাফল‌্যকে কুর্নিশ জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ‌্যমন্ত্রক।

সমস্ত তথ‌্য পাঠানো হয়েছিল আইসিএমআর-কে। বস্তুত, স্বাস্থ‌্যমন্ত্রক থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পরে আর পিছন ফিরে তাকায়নি এনআরএসের হেমাটোলজি অ‌্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগ। রাজ‌্য স্বাস্থ‌্য দপ্তরের আর্থিক সহযোগিতায় আনা হয়েছে হেপাফিল্টার। ঘরে ঢুকলেই জীবাণুমুক্ত হবে। স্বয়ংক্রিয় সেন্সর। বিএমটি-র ঘরের সামনে দাঁড়ালেই দরজা খুলে যায়। চারটি পৃথক শয‌্যা। সেগুলির মধ্যেও অদৃশ‌্য ব‌্যারিকেড।

রাজেশ্বর বাড়ি ফেরার দু’দিনের মাথায় আরও দু’জন বাড়ি ফিরেছেন। তুফানবাবুর সহযোগী ডা. অধ‌্যাপক রাজীব দে-র কথায়, ‘‘একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়, এমন দৃশ‌্য দেখে সব ক্লান্তি ভুলে যাই। এখন তো হ‌্যাপলেয়ড, অ‌্যানালোগাস (ভাই-বোন অথবা বাবা-মায়ের সুস্থ অস্থিমজ্জা) নিয়েও রোগী সুস্থ হচ্ছে। আবার অন্যের থেকেও (অটোলোগাস) করা হচ্ছে। ১০৩ জন সুস্থ হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.