প্রাচীন চরক – সংহিতার নতুন রহস্যোদ্ধার, ৬০০ রোগে ২৭ ভাবে ওষুধ প্রয়োগের ফর্মুলা প্রকাশ্যে

সাড়ে তিন হাজার বছর পেরিয়েছে। আজকের ৫ জি’র যুগেও বিশ্বজুড়ে বইটি নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। আজও আগ্রহ বিরাজমান সনাতন ভারতের কিংবদন্তি ফিজিশিয়ান চরক এবং ‘চরক-সংহিতা’ নিয়েও। কেউ বলেন, ‘চরক’ নামে আসলে নির্দিষ্ট কেউ ছিলেন না। ছিলেন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে রোগী দেখা বা ‘চারণ’ করা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের কিছু অসাধারণ চিকিৎসক বা সন্ন্যাসী। আত্রেয়, অগ্নিবেশের পর তাঁরাই সনাতন আয়ুর্বেদ চিকিৎসার শিকড় দৃঢভাবে প্রোথিত করে যান। আবার অনেকের মতে, ভীষণভাবেই ছিলেন চরক। তাঁর নিবাস ছিল কাশ্মীর। 
সে যাই হোক লাটিন, জার্মান, আরবিসহ নানা ভাষায় অনূদিত হওয়া সেই চরক-সংহিতার এক দিকপাল বাঙালি টীকাকারের দুর্মূল্য পাণ্ডুলিপির সন্ধান মিলল জয়পুরে। সংস্কৃত ভাষায়, বাংলা হরফে লেখা প্রায় ১২০ বছর আগেকার (১৯০১ সাল) এই পাণ্ডুলিপির পাঠোদ্ধার করেছেন আয়ুর্বেদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব আয়ুর্বেদের (এনআইএ) অধ্যাপক ও গবেষকরা। সেখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করার পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে পাঠোদ্ধারও করা হয়েছে। 
এনআইএ সূত্রের খবর, দুর্মূল্য পুঁথিটি বিশিষ্ট আয়ুর্বেদাচার্য যোগীন্দ্রনাথ সেনের (১৮৭১-১৯৩১ সাল)। অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদ বিদ্যালয়ের ডিন, এশিয়াটিক সোসাইটির আজীবন সদস্যসহ প্রায় ডজনখানেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের পদাধিকারী ছিলেন ডাঃ সেন। পাথুরিয়াঘাটায় তাঁর টোলও ছিল। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ‘চরক বিবৃতি’ নামক ‘চরক সংহিতা’র ‘চিকিৎসাস্থান’ নামক অধ্যায় নিয়ে সেই পাণ্ডুলিপিটির কথার উল্লেখ নেই কোনও শাস্ত্রেও। কেন পুঁথিটি এত গুরুত্বপূর্ণ? এনআইএ’র সহযোগী অধ্যাপক এবং আয়ুর্বেদের প্রাচীন পাণ্ডুলিপি শাখার কেন্দ্রীয় সরকারের নোডাল অফিসার ডাঃ অসিত পাঁজা বলেন, প্রমেহ বা সুগার, ডেঙ্গু বা সন্নিপাত জ্বর, উন্মাদ অকস্মার বা মানসিক রোগ, অতিসার, গ্রহণি ইত্যাদি পেটের অসুখসহ ৬০০টি রোগের উল্লেখ আছে দিকপাল টীকাকারের চরক বিবৃতিতে। রয়েছে ২৭ ভাবে ওষুধ প্রয়োগের বিধান। যেমন, অবলেহ বা চাটনি, ট্যাবলেট বা বটিকা, ওষুধের গুঁড়ো বা চূর্ণ ইত্যাদি। এখন বলতেই পারেন, বহু টীকাকারই তো চরক-সংহিতার নির্যাস লিখেছেন। 
এই পাণ্ডুলিপির অভিনবত্ব কী? অভিনবত্ব এর সারল্যে। এত সহজে বিভিন্ন রোগে বিভিন্ন ওষুধ তৈরির রহস্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে, মনে হবে ‘চরক সংহিতা’ বোধহয় সাড়ে তিন-চার হাজার বছর আগে নয়, লেখা হয়েছে ১০০-১৫০ বছর আগে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডাঃ লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য বলেন, যা নেই চরক-সংহিতায়, তা নেই চরক-সংহিতাতেই। এত প্রাচীন গ্রন্থ, অথচ তাতে উল্লেখিত একটি বিষয়ও আজকের দিনে কেউ অসার প্রমাণ করতে পারেননি। তার সহজপাঠ্য, সময়োপযোগী টীকার পাণ্ডুলিপি আবিষ্কার আজকের দিনের তরুণ চিকিৎসক সমাজের জন্য হতে পারে বিশেষ উপকারী।  সেই পাণ্ডুলিপি

বিশ্বজিৎ দাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.