স্কারলেট ও’হারাকে রূপসী বলা যাবে না। তবে ওর লাবণ্যের একটা আকর্ষণ ছিল। ওর সবুজ একজোড়া চোখ, ফর্সা কোমল ত্বক— ‘গন উইথ দি উইণ্ড’-এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্র করে তুলেছিল। বইটায় গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা আর স্কারলেটের কথা পড়ে কেঁদে ফেলেছিল স্কুলপড়ুয়া মেয়ে অনেষ্যা।
সেদিনের ছোট্ট মেয়ে অনেষ্যা বি টেক-এ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এই ক’দিন আগে স্বর্ণপদক পেল। আইআইটি-তে এম টেকে ভর্তি হয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে ক্যান্সার নিরাময়ের ওষুধ তৈরি নিয়ে। প্রাথমিক কাজ কিছুটা এগিয়েছে। প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি এই ওষুধ ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধের সহায়ক হবে বলে অনুমান।
দেবী জ্যোতির্ময়ী অর্থাৎ শক্তিপুঞ্জের অপর নাম অনেষ্যা। দাদুর দেওয়া নাম। ডিপিএস রুবি পার্ক স্কুলের প্রাক্তনী অনেষ্যা শৈশব থেকেই এক কথায় ‘অল স্কোয়ার’। ক্লাশ টুয়ে নাচে হাতেখড়ি। দীর্ঘদিন ভারতনাট্যমের তালিম নিয়েছে থাঙ্কমনি কুট্টির শিষ্যা শ্রীজা নায়ারের কাছে। ধ্রুপদী সঙ্গীত, বিশেষত খেয়াল শিখেছেন, এখনও শিখছে পণ্ডিত জয়ন্ত সরকারের কাছে। ফরাসি ভাষা শিখেছে। ২০১৩-তে গোটা দেশে ফ্রেঞ্চ অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে অনেষ্যা। কবিতা-গল্প লেখায় পারদর্শী। এই সঙ্গে আছে গোগ্রাসে বই পড়ার অভ্যাস। আর তাই আইআইটি-তে ভর্তি হওয়ার পরেই হেলায় জিতে নিয়েছে ‘মিস ফ্রেশার’ শিরোপা।
এ হেন অনেষ্যা জয়েন্ট এবং নিট-এ উত্তীর্ণ হয়েও বেছে নিয়েছিল জৈব প্রযুক্তির মত বিষয়। লক্ষ্য ক্যান্সারের ওপর গবেষণা। হেরিটেজ ইন্সটিট্যুট অফ টেকনোলজি থেকে বি টেকে পেয়েছে ৯৭ জিডিপি (কিমিউলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট)। পড়তে পড়তেই শিক্ষানবীশি করেছে যাদবপুরে কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সে। বিষয় ‘জিন এডিটিং’। শিখেছে অধ্যাপক ডঃ দীপক সিনহার কাছে। অতিমারির মধ্যে আর এক প্রস্থ শিক্ষানবীশি করেছে ‘নাইপার’-এ।
লক্ষ্যটা ঠিক কী? অনেষ্যার কথায়, “কম্পিউটেশনাল
মেডিসিনাল কেমিস্ট্রির ওপর পিএইচডি করব। অধ্যাপক ডঃ পার্থসারথী দাস এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। তিনি আমাকে পথ দেখাচ্ছেন। মূল লক্ষ্য দুটো। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করতে নয়নতারা ফুল (ভিঙ্কা রোজিয়া) থেকে তৈরি হয়েছে ‘ভিঙ্ক্রিস্টাইন’। ‘ট্রাক্সুস ব্রেভফোলিয়া প্যাসিফিক ইউ’ থেকে তৈরি হয়েছে ‘প্যাকলিট্যাক্সেল’। প্রাকৃতিক জিনিস থেকে প্রতিষেধক তৈরির আরও চেষ্টা চলছে। সেরকমই একটি বিশেষ প্রাকৃতিক জিনিস থেকে আমি কার্যকরী এবং জীবনদায়ী প্রতিষেধক তৈরি করতে চাই। নজর রাখছি দুটো বিষয়ের ওপর—১) কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেন না থাকে। আর ২) যেন সহজলভ্য হয় সেটি।“
আইআইটি-তে পড়াকালীন কিভাবে বা কতটুকু এর গবেষণার সুযোগ হবে? অনেষ্যার জবাব, কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতিতে প্রতিষেধকের কার্যকারিতা নিয়ে আরও ভাবনাচিন্তার সময় এসেছে। ফর্মাসিউটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ‘কম্পিউটার এডেড ড্রাগ ডিজাইনিং’-এ আমি আরও ঋদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছি।
প্রিয় কবি রবার্ট ফর্স্ট এবং জীবনানন্দ দাস। প্রিয় লেখক মার্গারেট মিশেল। পড়া, লেখা, নাচ, গান— এসবের মধ্যেও দিবারাত্রির স্বপ্ন অভীষ্ঠ লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া। দ্রুত ছড়াচ্ছে ক্যান্সারের মত কালান্তক ব্যাধি। মানুষ বড় অসহায়। বিশ্বজুড়ে গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু যে হারে ক্যান্সারের থাবা প্রসারিত হচ্ছে, একে রুখতে আরও ঢাল-তরোয়াল দরকার। সেই অস্ত্র তৈরিই এখন পাখির চোখ অনেষ্যার।