নারী নির্যাতন একটি আদ্যন্ত লিঙ্গকেন্দ্রিক সমস্যা, যা ভারতবর্ষ কেন সারা বিশ্বেই সম্ভবত বৃহত্তম পারিবারিক, সামাজিক তথা জাতীয় সংকট। পিতৃতন্ত্রকে জিইয়ে রাখতে চাইলেও কোনও আধুনিক সুস্থ সমাজ হিংস্রতার অনুমোদন দেয় না। এর্ সমাধান চাইতে গেলে এখন সমস্যার সম্যক ও নিরপেক্ষ উপলব্ধি প্রয়োজন। ভারী আশ্চর্য কারণবশত ভারতবর্ষে নারীর প্রতি হিংস্রতার পেছনে চিরাচরিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ধর্মীয় অনুষঙ্গটিকে শনাক্ত করা হলেও সাম্প্রদায়িক চরিত্রটি কখনই স্বীকার করা হয় না, বরং সযত্নে আড়াল করা হয়। তার চেয়েও বিপজ্জনক হল ঘটনার ব্যাখ্যার অভিমুখ ঠিক বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে অপরাধপ্রবণ সম্প্রদায়টিকেই অপরাধের শিকার হিসাবে এবং আক্রান্ত সম্প্রদায়কে আগ্রাসী হিসাবে দেখানোর ষড়যন্ত্র রচিত হয়।
লক্ষণীয় সব প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই নারীকে পুরুষদের শাসনাধীন রাখতে চাইলেও সব সংস্কৃতি কিন্তু অনৈতিক কাজে অনুপ্রেরণা দেয় না। বরং ভারতের সনাতন সংস্কৃতির নীতিশিক্ষা পুরুষকেও সংযত হতে বলে যদিও সমাজে তার প্রতিফলন সব সময় ঘটে না। হিন্দু সংস্কৃতির মধ্যে আছে সংকীর্ণতা থেকে উত্তরণের উপায়ও, যার ফলে বহু সামাজিক কুপ্রথা আইন করে তুলে দেওয়াও সম্ভব হয়েছে। সেগুলোর পুনর্জাগরণের দাবি কল্কে পায় না, বরং সেই সংস্কার ও আধুনিকীকরণই ক্রমে হয়ে দাঁড়িয়েছে সনাতন সমাজের শ্লাঘার বিষয়। অথচ যাবতীয় পশ্চাদবর্তিতার দায় চাপে হিন্দু সমাজের ওপরই, যেখানে নারী ও শিশুর প্রতি হিংসায় ভারতে আব্রাহামিক বিশ্বাসের আগ্রাসনের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি; এমনকি হিন্দু সমাজে জন্ম নেওয়া নিষ্ঠুর কুপ্রথাগুলিও আগাছার মতো বেড়ে উঠেছিল এই বৈদেশিক আগ্রাসনের অভিঘাতেই।
ইতিহাস সাক্ষ্য দিলেও অস্বীকারের উপলক্ষ আছে। তার অন্যতম হল ধর্মনিরপেক্ষতার ছদ্মবেশ। এই ছদ্মবেশে সারাদেশে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে যা চলে এসেছে এতদিন, তা হল একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রসারণবাদ। নারী নির্যাতন হল ভারতীয় সমাজকে হত্যা করে সেই বিজাতীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রসারণের অন্যতম উপায়। এই বিজাতীয় মতবাদ কখনই সেইসব অপরাধ দমনে সচেষ্ট নয়, যেগুলো সেই মতবাদের অনুসরণকারী নয় এমন সম্প্রদায়ের সঙ্গে করা হয়; বরং অবিশ্বাসীদের প্রতি সবরকম নিষ্ঠুরতা ও নোংরামি করতে পারলে পরলোকে স্বর্গসুখের নামে অনুরূপ যথেচ্ছারের সুযোগ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। তাই ইসলামের কাছে অবিশ্বাসী, বিশেষত মূর্তিপূজারীদের হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণ করা পাপ নয়, পুণ্যের। বলা বাহুল্য প্রকৃতিও যাদের যথেচ্ছাচারের সুযোগ দিয়েছে সেই পুরুষরা এমন অনুপম মতাদর্শে দীক্ষিত হলে যে ধার্মিক কারণেই অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়বে, অন্তত অপরাধ করেও যে পাপবোধে বিদ্ধ হবে না, তা সহজবোধ্য। ইসলামের জনপ্রিয়তার পেছনে এটাও এক মহান ইনসেন্টিভ হিসাবে কাজ করে থাকে। যেমন সীতারাম গোয়েল তাঁর Heroic Hindu Resistance to Muslim Invaders বইটিতে দেখিয়েছেন যুদ্ধ জয়ের পরে হিন্দু সেনারা যেখানে লুণ্ঠন ও যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে সাধারণ নাগরিকদের নিপীড়ন করার অনুমতি বা উৎসাহ পেত না, যেখানে মুসলিম বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করার অন্যতম আকর্ষণ ছিল যথেচ্ছ লুঠপাট এবং ধর্ষণ থেকে যৌন দাসত্বের জন্য নারী শিশু অপহরণ বা বন্দী করার মতো যাবতীয় অপকর্ম করার অবাধ ছাড়পত্র।
অত দূর ও অতখানি তলিয়ে দেখার ও ভাবার দরকার নেই। আমরা তো দেশভাগের আগে-পরের রক্তাক্ত ও ক্লেদাক্ত ইতিহাসই ভুলে থাকতে চাই, যার বিষক্রিয়া থেকে আমাদের দেশ, বিশেষত আমাদের রাজ্য, আজও মুক্ত হতে পারল না। শুধুমাত্র দৈনন্দিন সংবাদে দৃষ্টি রাখলেই বুঝতে অসুবিধা হয় না ভারতে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে মানবাধিকার, নারী ও শিশুর সুরক্ষা কতটা ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং কেন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল বা ইউএনএফপি-এর জুন ২০২০-তে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে ভারতে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ মেয়ে ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছে। এর একটা বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গের, মূলত গ্রামাঞ্চলের। এই মেয়েরা কোথায় যায়? যারা প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে সংসার পাতে, তাদের খোঁজ দুদিন পরে ঠিক তার পরিবারের মানুষ পেয়ে যায়, চিরকাল নিখোঁজ থাকে না। কিন্তু যারা সত্যিই হারিয়ে যায়, তাদের দু ধরনের পরিণতি হয়ে থাকে – এক: ছিন্নভিন্ন বা ভস্মীভূত অবস্থায় তাদের মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয় নিরুদ্দেশ হওয়ার কিছুদিন বা কিছু মাস পরে, কিংবা দুই: অধিকাংশ চালান হয়ে যায় মুম্বাই বা দক্ষিণের কোনও শহর হয়ে পশ্চিম এশীয় দেশগুলোতে বা কেউ কেউ ইউরোপ আমেরিকাতেও। যেসব ভাগ্যবতীরা মুম্বাই বা ভারতের অন্য কোনও শহরের নিষিদ্ধ এলাকা থেকে উদ্ধার হয়, তাদের জবানি থেকে যে সত্য বেরিয়ে আসে, তা পৃথিবীর আদিমতম কদর্যতার সঙ্গে একটা সাম্প্রদায়িক কদর্যতাও উন্মোচন করে। কিন্তু আমাদের মানবাধিকার কর্মী থেকে প্রশাসন দ্বিতীয়টি ঢাকতে অতি সচেতন বলেই প্রথমটিকে অতি সহজে ‘এমন তো হয়েই থাকে’ জাতীয় নির্লিপ্ততায় উপেক্ষা করতে পারে এবং তার মূলোৎপাটনে আদতে সচেষ্ট নয়।
ইউএনএফপি-র উল্লিখিত রিপোর্টে এও বলা হয়েছে প্রতি বছর ভারতে গর্ভপাত ঘটিয়ে ৪৬ লাখ কন্যা ভ্রূণ নষ্ট করে ফেলা হয় এবং জন্মের পর কন্যা শিশুদের ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা করার কারণে জন্মের পর কন্যা শিশুমৃত্যুর হার খুবই বেশি। সম্প্রতি ভয়াবহ এক ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের বাদাউন জেলায়। গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে–তা দেখার জন্য অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেট কেটে ফেলেছে এক পুরুষ। ভারতীয় দম্পতিদের মধ্যে ছেলে সন্তানের আকাঙ্ক্ষার ফলে দেশটিতে নারী ও পুরুষের সংখ্যায় ভারসাম্যের অভাব রয়েছে। ভারত সরকারেরই ২০১৮ সালে প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছেলে সন্তান চেয়ে মেয়ে হয়েছে এমন ‘অবাঞ্ছিত’ মেয়ে শিশুর সংখ্যা দুই কোটি ১০ লাখ। দেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা ওই রিপোর্টে দেখা যায় যে, বহু দম্পতি একটি ছেলে সন্তান না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চা নিতেই থাকে। দিল্লিতে বিবিসি’র ভারতীয় নারী ও সমাজ বিষয়ক সম্পাদক গীতা পাণ্ডে ভারতীয় সমাজে পুত্র সন্তানের প্রতি পক্ষপাতের দীর্ঘদিনের সংস্কৃতিকেই দায়ী করেছেন। তাঁর মতো আরও অনেকেরই মতে, পুত্রের দ্বারা বংশ পরিচয় জীবিত থাকবে ও বৃদ্ধ বয়সে ছেলেই দেখবে এই বিশ্বাসের কারণে, আর অন্যদিকে মেয়েরা বিয়ের পর পরের সম্পত্তি এবং মা বাবার কাছে যৌতুকের বোঝা – এই প্রথার জন্যই লিঙ্গানুপাতের এই সংকট। বাস্তবিকই ১৯৬১ সালে ভারতে সাত বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতি ১০০০ ছেলে শিশুর বিপরীতে ছিল ৯৭৬টি মেয়ে শিশু। ২০১১ সালে চালানো সর্বশেষ আদমশুমারীতে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৯১৪, অর্থাৎ মেয়ের সংখ্যা আরও কমেছে। এ বিষয় নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন, তারা এটাকে ‘গণহত্যা’ বলে থাকেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই কন্যা ভ্রূণ-হত্যা এবং শিশু-হত্যার সংস্কৃতিকে জাতীয় লজ্জা বলে বর্ণনা করে মেয়েদের বাঁচাতে এক জেহাদের ডাক দিয়েছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ‘ছেলে চাই’–এই মনোভাব বদলানোর পরামর্শ দিয়েছেন এবং ‘পুত্র সন্তানের আশায় কন্যা সন্তানকে হত্যা না করার’ কথা বলেছেন। পাঁচ বছর আগে তিনি ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ উদ্যোগও চালু করেছিলেন। কিন্তু গীতা পাণ্ডের মতে এসব কোনও উদ্যোগই আসলে কাজ করেনি।
তথ্য ও তত্ত্ব কোনওটিই অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ভারতে লিঙ্গানুপাতের এই ভারসাম্যহীনতা কি শুধুই কন্যা সন্তান অবাঞ্ছিত বলেই? যাদের কাছে কন্যা সন্তান অত্যন্ত আদর ভালোবাসার, তাদের মেয়েরা কি অবহেলার জন্য ধর্ষিতা খুন বা নিখোঁজ হয়ে যায়? এই খুন হওয়া ও নিরুদ্দিষ্ট নারী ও শিশু কন্যার সংখ্যার কি লিঙ্গানুপাতের বর্তমান অবস্থায় কোনও ভূমিকা নেই? আর ভারতীয় সমাজে কন্যা সন্তানকে অবাঞ্ছিত মনে হওয়ার পেছনে কি এই অপরাধ চক্রের পরোক্ষ ভূমিকাও কাজ করে না? মানবাধিকার ও নারী সুরক্ষার জন্য কাজ করা বিশেষজ্ঞদের এটা ভেবে দেখতে অনুরোধ করব। চিরাচরিত পুরুষতান্ত্রিকতাকে নিন্দা করব অথচ এর প্রধান কারণ সাম্প্রদায়িক পুরুষতান্ত্রিক আগ্রাসনকে ধর্মীয় স্বাধীনতার আবডালে তোষণ ও পোষণ করে যাব, এই দ্বিচারিতা নিয়ে কি দেশে ও রাজ্যে নারী ও শিশু সুরক্ষা আনা সম্ভব?
২০১৪-এ প্রধানমন্ত্রী হয়ে শ্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদীর বলা কতকগুলো কথা আমার স্মরণে আছে। ‘’রাতে দেরি করে বাড়ি ফেরার জন্য নিজের মেয়েদের নয়, প্রশ্ন করুন ছেলেদের। কারণ আপনাদের মেয়েরা ছেলেদের কারণেই সুরক্ষিত নয়।’’ বলেছিলেন ‘’পহেলে শৌচালয় বাদমে দেবালয়।’’ দ্বিতীয় কথাটা তো রামমন্দিরের শিলান্যাসের আগে ‘’স্বচ্ছ ভারত অভিযান’’ চালু করার মাধ্যমে পূরণ করে দেখিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রথম বাক্যটি নিয়ে বিরোধীরা তো বটেই, হিন্দুত্ববাদী শিবিরের মানুষজনেরও গর্ব করার সুযোগ থাকলেও কখনই উচ্চবাচ্য করে না। মধ্যযুগ থেকে বলাৎকার, ধর্ষণ, যৌন দাসত্বের মতো যে ব্যাধি ভারতীয় সমাজে এসে বাসা বেঁধেছে, তার থেকে সমাজ এখনও মুক্ত নয় বরং আরও বেশি জর্জরিত। প্রসঙ্গত প্রাচীন ভারতে দেহোপজীবিনীদের বলা হত গণিকা (গণনায় পারদর্শী) বা স্বৈরিণী (স্বেচ্ছাচারিণী), যারা ছিল অনেকটাই স্বেচ্ছাধীন। বাঁদী বা যৌন দাসীর ধারণা হল খাস আরব তালুক থেকে আমদানি করা সংস্কৃতি। যাইহোক, ২০২০-তে এসে এই প্রধানমন্ত্রী তো ভারতীয় সেনার সর্বোচ্চ পদটিও মহিলাদের জন্য খুলে দিলেন। কিন্তু সমাজের অস্থি মজ্জায় শিরা উপশিরায় নারী নিগ্রহের ধর্ষকামী মানসিকতা এমন জাঁকিয়ে বসেছে, এবং এমন দ্বিচারী মানসিকতা নিয়ে প্রগতিশীলরা, এমনকি নারীবাদীরাও প্রতিবাদ করছেন, যে তার সুচারু সমাধান হচ্ছে না। কারণ জঘন্যতম অপরাধের জন্য কঠিনতম শাস্তি বা মৃত্যুদণ্ডের দাবি উঠলেই এক শ্রেণীর ভারতবাসীর কাছে অমানবের মানবাধিকার রক্ষার তাগিদ অগ্রাধিকার পায়। ফলত অসভ্যতা নৃশংসতা নোংরামির ধারাবাহিকতা চলতেই থাকে।
‘যৌন’ শব্দটা এসেছে ‘যোনি’ থেকে। কিন্তু যৌন নির্যাতন, নিগ্রহ, বিকৃতি, দাসত্ব ইত্যাদি বলে পরিচিত ঘটনায় সব সময় যোনির যোগ নাও থাকতে পারে। লিঙ্গই সক্রিয় এবং লিঙ্গের তাড়নাতেই যাবতীয় অপকর্ম, যেখানে শিকারের আপাদ মস্তক সবকিছুই নিগৃহীত হতে পারে। তাই sexual harassment-কে যৌন নিগ্রহের পরিবর্তে আমি ‘লিঙ্গ সংযোজিত’ (gender linked) বা ‘লিঙ্গকেন্দ্রিক’ (phallocentric) পীড়ন বলারই পক্ষপাতী।
২০১২-য় দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের ‘নাবালকোচিত’ কাণ্ড সামনে আসার সময় দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত। এরপর কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর সেই ঘটনা মাথায় রেখে প্রাপ্তবয়স্কসুলভ অপরাধের ক্ষেত্রে নাবালকত্বের বয়স ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ করা হয়। পরিবর্তিত হয়েছে ধর্ষণের সংজ্ঞাও যেখানে অস্বাভাবিক সংস্পর্শকেও ধর্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তা সত্ত্বেও রাজ্যে রাজ্যে একের পর এক গা শিউরানো নৃশংসতার পরীক্ষাগার হয়ে উঠেছে ভারতীয় নারী এমনকি শিশু কন্যার দেহ। কচি মেয়েদের প্রতি শরীরী ও যৌন হিংসা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না বৃদ্ধারাও।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর National Crime Records Bureau (NCRB) সাম্প্রতিক ২০১৮-র রিপোর্ট অনুযায়ী বিগত কয়েক বছরে ধর্ষণের সংখ্যা প্রতি বছর বেড়েছে ১২-১৫%, যেখানে অন্যান্য অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে ৩-৫%। ২০১৬ সালে মোট ৪০,০০০ ধর্ষণের খবর আছে। এটা হল নথিকৃত রেকর্ড। তার বাইরের অজানা ছবিটা আরও মারাত্মক।
হিন্দু পুরুষরা অপরাধী হলে বিশেষ করে শিকার নিম্নবর্ণের নারী হলে তা উন্মোচন করায় মিডিয়ার যতখানি তৎপরতা থাকে, মুসলিম পুরুষরা জড়িত থাকলে ততোধিক তৎপরতা থাকে তা আড়াল করার জন্য, যদিও নিরপেক্ষ সূত্র তো বটেই, থানাগুলিতে নথিকৃত সরকারি পরিসংখ্যান নিলেও এই জঘন্য অপরাধে মুসলিমদের অংশগ্রহণ থাকে অনেক অনেক বেশি। এমনকি বিচার চেয়ে লড়াইতেও থাকে বৈষম্য। তাই নির্ভয়া বা জ্যোতি সিং-এর ধর্ষণ হত্যা মামলার নৃশংসতম অংশগ্রহণকারী ও নির্ভয়ার খুনি মহম্মদ আফ্রোজ় নাবালকত্বের কাঁচা প্রমাণ দেখিয়ে দু বছর সংশোধনাগারে থেকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ. সেলাই মেশিন ও দশ হাজার টাকা নিয়ে মুক্ত হতে পারে এবং আম আদমি পার্টির দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের সহায়তায় জে়ড ক্যাটিগরির সুরক্ষা বলয়ে বেষ্টিত হয়ে নিরাপদে অজ্ঞাতবাসে চলে যেতে পারে। পাশাপাশি বাকি পাঁচজনের ফাঁসির দাবিতে আইনি লড়াই চলতে থাকে জনমতকে সঙ্গে নিয়েই। জ্যোতির পরিবার থেকে কোনও পারিশ্রমিক না নেওয়া রাহুল গান্ধী নিয়োজিত উকিল সীমা দেবীকে অভিনন্দন ও সাধুবাদ জানিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়, মহম্মদ আফ্রোজ়ের বয়সের মাদ্রাসা প্রদত্ত কাঁচা সার্টিফিকেটকে তিনি চ্যালেঞ্জ জানাননি কেন, যেখানে প্রকৃত বয়স জানার আধুনিক প্রযুক্তি মজুত? আর সেই শ্রদ্ধেয়া সীমা দেবীই কিনা বিনা পারিশ্রমিকে হাতরাসে খুন হওয়া দলিত কন্যার মৃতদেহকে ঘিরে সাজানো ধর্ষণ মামলার দায়িত্ব নিতে ছুটে আসেন রাহুল গান্ধীর মাধ্যমেই। একই সময় উত্তরপ্রদেশেরই বলরামপুরে দুই মুসলিম যুবক শাহিদ এবং সাহিল বাইশ বছরের দলিত কন্যাকে জোর করে মাদক খাইয়ে গণধর্ষণ করে কোমর ভেঙে খুন করার সময় দেশের যে ধর্মনিরপেক্ষ মিডিয়া অপরাধী শাহিদ ও সাহিলের ধর্মীয় পরিচয় খুঁজে পায়নি, তারাই আবার হাতরাসে জমি বিবাদ ও অনার কিলিং-এর জেরে সম্ভবত নিজেরই ভাইয়ের হাতে খুন হয়ে যাওয়া মণীষা বাল্মীকির মৃত্যুকে উচ্চবর্ণের দ্বারা দলিত নারীর ধর্ষণ ও জিভ কেটে হত্যার কাহিনী রচনা করে ব্রাহ্মণ্যবাদ মনুবাদ ও বিজেপিকে একাসনে বসানোর কাজে উঠে পড়ে লেগে যায়। সুতরাং সুবিচার পাইয়ে দেওয়ার নেপথ্যেও থাকে মিডিয়া থেকে আইনজীবী উভয়েরই সাম্প্রদায়িক অভিপ্রায় এবং সেটি যে ইসলামপন্থী অর্থানুকূল্যেই সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। ফলে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি, বুদ্ধিজীবীদের মিডিয়া বাইট লাভ ইত্যাদি চললেও আসল বিষয়টি যে তিমিরে, সেই তিমিরেই থেকে যায়। বরং ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ অপনয়নের বদলে রাত সুবিধামতো পণ্যায়ন হয়ে চলেছে।
এই বিষাক্ত প্রবণতা সর্বভারতীয় স্তরেই নিজের শাখাপ্রশাখা শিকড় ছড়িয়েছে। তবে সব চেয়ে ব্যাপক বেপরোয়া ও বেলাগাম হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে। বাম জমানাতেও বানতলা ধানতলার মতো মুসলিম পুরুষ দ্বারা হিন্দু নারীর সম্মানহানি ও বীভৎস অত্যাচারকে দুষ্কৃতকার্য, ডাকাতি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ইত্যাদি দ্বারা আড়াল করা বা ‘it happens’ বা ‘এমন তো কতই হয়’ বলে লঘু করার প্রয়াস থাকলেও বিশিষ্ট কিছু মাফিয়া ছাড়া সাধারণ দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারিতে বাধা দেওয়া বা দুষ্কর্মে খোলাখুলি ঢালাও লাইসেন্স দেওয়া ছিল না। কিন্তু ২০১১-য় মা মাটি মানুষের পরিবর্তনকামী সরকার এসে এই আড়ালটুকুও রাখল না। ২০১১-র আগে জানতাম একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ দারিদ্র ও অশিক্ষাক্লিষ্ট বলেই বেশি অপরাধ করে। ২০১১-র পর থেকে ২০২০ পর্যন্ত ধীরে ধীরে উপলব্ধি করলাম, অপরাধ করাই হয় ঐ বিশেষ সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে; ভিন্ন সম্প্রদায়ের নারী নিগ্রহ ও অবমাননা তাদের ধর্মাচারণের অঙ্গ তথা নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধির স্ট্রাটেজি। রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি দুধেল গাইদের কাছে নিজে দুধ পাওয়ার বিনিময়ে আপামর জনগণকে চাট মারার দানপত্র লিখে দিলেন। নিজের শাড়িটি সাদা রেখে বাংলার ঘরে ঘরে হিন্দু নারীকে রক্তাক্ত করার ঢালাও লাইসেন্স দিয়ে দিলেন। আর নির্যাতিতার পরিবার ও প্রতিবাদী প্রতিবেশীরা চিহ্নিত হতে লাগল মাওবাদী ঝাওবাদী হিসাবে, যাদের অস্তিত্ব তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালে জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনার সময় স্বীকারই করেননি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগ স্পষ্ট করে বলা সত্ত্বেও। ওদিকে বামপন্থীরা তৃণমূল ও তার একনায়কতন্ত্রী নেত্রীর দ্বারা ল্যাজে গোবরে হয়ে নানা বিষয়ে নিন্দামন্দ করলেও তাঁর সাম্প্রদায়িক তোষণ নিয়ে নীরব এবং নিশ্চুপ এ রাজ্যে তথাকথিত সংখ্যালঘুদের নারকীয় উল্লাসের শিকার অসহায় সংখ্যাগুরু রমনীদের ক্ষতবিক্ষত ভস্মীভূত দেহ স্তূপীকৃত হলেও।
তথ্যসূত্র:
- https://www.dw.com/en/is-india-the-worst-place-in-the-world-to-be-a-woman/a-44406279
- https://www.theguardian.com/world/2012/jul/23/why-india-bad-for-women
শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়
West Bengal, a state of unmatched Female atrocities : Part 1 : Abstract
Women abuse including violence against women that not only targets women but also girl children and even elderly women is a primarily a gender issue, an unavoidable consequence of patriarchy. But no civilised society permits violence and sexual offenses. While we make no mistake in identifying our phalacentric social structure strengthened by religious backdrop as the root cause behind this evil, the communal ingredient is deliberately overlooked in India especially in West Bengal.
As per research report ratio of girls versus boys under 7 years has declined from 1000:986 in 1961 to 1000:914 in 2011. Poor sex ratio is no doubt primarily due to female feticide in the irrational preference for sons who are suppose to hold family legacy, earn and take care in old age while girls are viewed as burden who would evacuate parents wealth in form of dowry during marriage. The activists fighting for this cause call it a selective “genocide”. There is no point of denying that the evil cycle is ruining our country’s proportion of women, who create, conceive and deliver lives and sustain the races. But what about crimes committed against women with communal motive? In India majority of criminals adhere to a particular Abrahamic belief whose moto is to expand their faith by any means — good or bad. They categorically target Hindu women and minor girls for sexual abuse, trafficking for sex slavery and religious conversion to strengthen the predators’ community. Heinous rapes, mostly gang rapes followed by brutal murders of the victims are at rampant. These are also major causes contributing to the decling sex ratio. Also fear of losing modesty and life is a major discouragement of having a girl child. As per a report published in June 2020 by United Nations Fund for Population (UNFP) in last 50 years 46 million Indian girls are missing. A portion of these missing girls are either found dead with mutilated bodies after some days. Most of them are trafficked via red light area of the major cities of india to Arab world and sometimes in the western world. Major share of such rackets are run and owned mostly by Mohamadan touts.
The situation is of grave concern in West Bengal, a state shaing international borders with Bangladesh, where the criminals have been receiving government shelters for long. The present woman Chief Minister of West Bengal has given least priority to women’s safety, rather the atrocities on women and girls have increased manifold under her administrative patronage. Criminals are set free while victims if alive are either called a conspirator, and/or her family is harassed. There are several incidences where family of the brutally raped and murdered victims are being arrested detained and tortured by police giving special protection to the accused males belonging to a particular community.
Shielding of criminals in name of secularism is the main reason why other forms of sexist crimes like domestic violence, gender selective feticide, intra-community sexual abuses are also not being taken care of.