শ্রদ্ধার পেরেন্ট কি কন্যার এই পরিণতির দায় এড়াতে পারেন?

শ্রদ্ধা মদন / শ্রদ্ধা ওয়াকার মহারাষ্ট্রের কন্যা। প্রেমে পড়েছিল আফতাব আমিন পুনাওয়ালার। সম্ভবতঃ মেনে নেওয়া হয় নি বাড়ি থেকে, তাই দিল্লি চলে আসে শ্রদ্ধা ও আফতাব এবং শুরু করে লিভ-ইন করতে। লিভ-ইন সম্পর্কে থাকতে থাকতে শ্রদ্ধা আফতাবকে বলে তাকে বিয়ে করতে। আফতাব তা মানতে পারে না এবং খুন করে শ্রদ্ধাকে।

শ্রদ্ধার পেরেন্ট কি কন্যার এই পরিণতির দায় এড়াতে পারেন? মেয়েকে তৈরি করায় কি অনেকই ফাঁক রয়ে গিয়েছিল না? নাহলে ওরকম দৃষ্টি যে ছেলের চোখে, তার প্রেমে শ্রদ্ধা পড়ল কি করে? চারপাশে ছড়িয়ে থাকা সম্ভাব্য বিপদ আপদ সম্পর্কে কন্যাকে একেবারে বালিকাবস্থাতেই সতর্ক করা প্রয়োজন ছিল যা হয়ত শ্রদ্ধার মা বাবা করে উঠতে পারেননি। মা বাবার সঙ্গে মতের মিল হল না বলে লিভ ইন করার জন্য বম্বে থেকে দিল্লির মত বিপজ্জনক শহরে শিফট করে শ্রদ্ধার চলে যাওয়া থেকে এ-ও মনে হয় যে লিভ ইন করার আগ্রহ ছিল তার খুবই বেশি। এরকম বেশি আগ্রহ তখনই সম্ভব যখন মেয়ে সেক্সুয়ালিটির পাঁচপেঁচি গড়পড়তা ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন, প্রজেস্টেরোনের ওঠাপড়ার গল্পটা উপলব্ধিতে না এনে সেক্সুয়াল অ্যাক্টকে অযথা বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলে। যেন কি না কি! বিষয়টি যে নেহাৎই শারীরবৃত্তীয় কেমিস্ট্রির খেলা, তা না বোঝার ফলেই বোকার মত তৈরি হয় অপরিমিত সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসি। শারীরবৃত্তীয় কারণ এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে মনের উপর নিয়ন্ত্রণের শিক্ষার কৌশল বালিকাবস্থাতেই দিতে হয়। ছেলেবেলায় খেলাধুলো করলে এসব নিয়ন্ত্রিত হয়। টেস্টোস্টেরন সার্জের ফলে শারীরিক উত্তেজনার হঠাৎ-প্রাবল্য আসা স্বাভাবিক। তার প্রশমণের জন্য শারীরিক কসরৎ, নাচ, ইণ্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল মিউজিক এবং দাপিয়ে খেলাধুলার শিক্ষা অতি কার্যকর। এগুলি অভ্যাস করলে মন অযথা এরোটিক চিন্তা তথা ফ্যান্টাসির দিকে ধাবিত হয় না। নিজের মূল্য যে কেবল দেহকে pamper করায় নয় বরং নিজের নিজস্বতার বিকাশে, সেইটি বুঝলে একটি স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা বলয় তৈরি হয়ে থাকে যে বলয় ভেদ করে আফতাবরা ঢুকতে পারে না সহজে।

অন্যদিকে, আফতাবরা নিজেদের সেক্সুয়ালিটির অ্যাগ্রেসিভ ডিসপ্লে করেই অভ্যস্ত। তারা এ বিষয়ে inhibition-free, কারণ তাদেরকে একদম ছোটবেলা থেকে এইটি করতে উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং তাদের সামনে হয়ত এ জিনিসের ডিসপ্লেও করা হয় নিয়মিত। তাদের কাছে মানুষের পরিচয় তার cerebrality তে নয়, sexuality তে। তাদের জন্য এসব হয়ত শত্রুদুর্গভেদের একটি কৌশলগত অ্যাপ্রোচ। আফতাবরাও কেমিস্ট্রির খেলা একেবারেই শেখে না, বরং ছেলেবেলা থেকে সেক্সুয়াল অ্যাক্টে overindulgence এর অভ্যেস তৈরি করে ফেলে বা ফেলার দিকে তাদের lead করা হয়। কেমিস্ট্রির খেলা না বোঝা মেয়েরা তাতে হয়ে পড়ে আরও বেশি vulnerable আর বোকা বনে।

যে সব মেয়েরা চট করে বোকা বনতে চায় না, তথ্য অনুযায়ী, প্রায়শঃই তাদের ড্রাগ করে আফতাব, আব্দুলরা। ঘুরতে বেরিয়ে হয়ত কোল্ড ড্রিংক বা কফিতে মিশিয়ে ড্রাগ দিয়ে দেয় মেয়েগুলোকে। অজান্তে ড্রাগ সেবনের পর অধিকাংশ মেয়েই প্রথমবার বোকা বনে তাদের কাছে এবং অতঃপর বোকা বনতে থাকে বার বার— অভ্যাস, আকর্ষণ এবং/অথবা ব্ল্যাকমেইলড হওয়ার কারণে। তবে শ্রদ্ধাকে এসব করতে হয়েছে বলে মনে হয় না কারণ শ্রদ্ধার ডেসপারেশন এমনিতেই অনেক বেশি ছিল বলে মনে হয়। নয়ত নিজের শহরে নিজের বাড়ি ছেড়ে দিল্লির মত বিপজ্জনক জায়গায় কেউ পাড়ি দেয় না। উপরন্তু নিজে নিজে ড্রাগ সেবনের অভ্যেসও কি শ্রদ্ধার ছিল? থাকলে অবাক হওয়ার নেই। এবং সেক্ষেত্রে লিভ ইন করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠার পিছনে সেটিরও হওয়ার কথা অন্যতম কারণ।

আফতাবরা আফতাবদের মতন। তাদের কাছ থেকে অন্যরকম প্রত্যাশা না করে বরং শ্রদ্ধাদের তৈরি করুক ভারতীয় সমাজ। নারীশক্তির জাগরণ ঘটা আবশ্যক।

©দেবযানী ভট্টাচার্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.