প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো বাংলার শারদীয় দুর্গা পুজো পুরাণ কাল থেকে বর্তমানে নানান পরিবর্তিত রূপ ধরে এসেছে। নানান পরিবর্তন হলেও নবপত্রিকা এবং এই সর্বতোভদ্রমন্ডল এর ওপর ঘট স্থাপন করেই দুর্গা পুজো করা হয়।এই দুটি ক্রিয়া দুর্গা পুজোয় অপরিহার্য।
আগেই নবপত্রিকার কথা বলা হয়েছে। এখানে ন রকম উদ্ভিদ, যেমন কলা, কচু, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, মান ও ধান এই ন টি উদ্ভিদকে একত্রিত করে শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে শুক্লা সপ্তমী তিথিতে, স্নান করিয়ে শাড়ি পরিয়ে নববধুর রূপ দেওয়া হয়। ন টি উদ্ভিদকে ন টি দেবীর প্রতীক হিসেবে একত্রিত করলেও কেবলমাত্র দেবী চামুন্ডার পুজো করা হয়। এবার দুর্গা পুজোর প্রধান অঙ্গ সর্বতোভদ্রমন্ডল যন্ত্র ও ঘট সম্বন্ধে জানাই। সর্বতোভদ্রমন্ডল এক জাতীয় তন্ত্র যন্ত্রের চিত্র।
বৈদিক যুগে ভারতবর্ষীয় ধর্মে পুরুষতন্ত্র প্রাধান্য পেলেও পরবর্তী কালে কৃষি আবিষ্কার পর্বে এক আদিম বিশ্বাস মাতৃ তন্ত্রের পুজাকে জনপ্রিয় করে তোলে। ফলে যাগ যজ্ঞ পরিবর্তিত হয়ে জাদু বিশ্বাস, যা মনোকামনা সফল করার চেষ্টার ফলশ্রুতিতে, রূপান্তর পায়। বাংলায় এই পুজা পদ্ধতি তন্ত্রের রূপ নেয়। আদিম বিশ্বাস টি হলো-নারীর জননাঙ্গের উপর ই প্রাকৃতিক ফল প্রসুতা নির্ভরশীল।
তন্ত্রে কতকগুলি প্রতীক চিত্র যন্ত্র রূপে পুজো করা হয়। যন্ত্র শব্দটি তাই তন্ত্র সাধনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এক এক দেবতার এক এক যন্ত্র চিত্র অংকন করে পুজো, প্রার্থনা করাহয় ।নিজেদের মনস্কামনা পুরনের জন্য।
এই পোস্টের সঙ্গে সর্বতোভদ্রমন্ডলের একটি চিত্র দেওয়া হয়েছে – এটি তন্ত্রের একটি বিখ্যাত যন্ত্র (বৃহৎ তন্ত্রসার)। তন্ত্র বেত্তারা বলেন এর মূল কথা হলো অষ্টদল পদ্ম ও তাকে ঘিরে বীথিকা অংকন করা থাকে। তাকে ঘিরে চৌষট্টীঘর কাটা থাকে-যা চৌষট্টী যোগিনীর প্রতীক।বাংলার পুজা পদ্ধতি ও তন্ত্রের যন্ত্র সংকেত যাঁরা জানেন, তাঁরা বলেন যন্ত্রে পদ্ম বা অষ্টদলপদ্ম নারী জননাঙ্গের প্রতীক।
” পদ্মমধ্যে গতে শুক্র সন্ততিস্তেন জায়তে।। ” (বিশ্বকোষ)
অর্থাৎ পদ্মমধ্যে শুক্রের মিলনে সন্ততির জন্ম।
পদ্মকে ঘিরে রয়েছে বীথিকা। নারী জননাঙ্গের সঙ্গে বীথিকা সম্পর্ক কি? – এটি আদিম বিশ্বাস যে প্রাকৃতিক উর্বরতার সঙ্গে মানবীর উর্বরতার সংযোগ কল্পনা করা। তাই তন্ত্রে নারী জননাঙ্গকে উদ্ভিদেরবাচক নাম লতা দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তন্ত্র মতে নারী যোনি হচ্ছে সকল উপাসনার উত্স বা আধার।
২৫৬ টি বর্গক্ষেত্রের গ্রাফচিত্র এঁকে পঞ্চগুঁড়ি দিয়ে জ্যামিতির নিখুঁত ব্যবহারে যে দেবতার ঘটের বেদী তৈরী হয় পূজার আগে, তাকেই সর্বতোভদ্রমণ্ডল বলে। দুর্গাপূজার আগে আগে অনেকেই এই যন্ত্র বা মণ্ডলটি (যা দুর্গাপূজার অন্যতম অপরিহার্য অঙ্গ, এই যন্ত্র অঙ্কন করে দেবীঘট স্থাপন করতে হয়) আঁকতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হন। তাই সকলের সুবিধার্থে একটি সহজ সরল চিত্র দেওয়া হল। (প্রকৃত চিত্র আরেকটু জটিল, বিশদ বিবরণের জন্য শ্লোক ও অনুবাদ অংশ দেখুন) প্রকৃতপক্ষে এই যন্ত্র বা সর্বতোভদ্রমণ্ডল একটি নিখুঁত জ্যামিতিক নকশা।
প্রথমে মুষ্টিবদ্ধ একহাত পরিমিত বর্গাকার চার আঙুল উঁচু মাটির বেদী তৈরী করে শুকিয়ে সমান করে তার উপর দাবার ছকের মতো করে ১৬ × ১৬ = ২৫৬ ঘর অঙ্কন করা হয়। তারপর পঞ্চগুড়ি বা পাঁচ প্রকার প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করে নিম্নোক্ত চিত্র আঁকতে হয়। পঞ্চগুড়ির পাঁচ রং – কালো (ধানের তুষ পুড়িয়ে চালুনিতে চেলে কালো গুঁড়ো রং) লাল (সাধারণতঃ লাল আবির) হলুদ (গুঁড়ো হলুদ) সাদা (চাল গুঁড়ো) সবুজ (শুকনো বেলপাতা গুঁড়ো)। এই পাঁচ রঙে যন্ত্র অঙ্কন বিধেয়।
দুর্গা, লক্ষ্মী ও কালীপূজায় পদ্মের পাঁপড়িগুলি লাল হলেও সরস্বতীপূজায় সাদা পাঁপড়ি হবে।
বিশদ বিবরণ—
সর্বতোভদ্রমণ্ডল তন্ত্রের একটি বিখ্যাত যন্ত্র। বৃহৎতন্ত্রসারে এই চিত্রটি আঁকবার নির্দেশ দিয়ে বলা হচ্ছে—
ষটত্রিংশতা পদৈর্মধ্যে লিখেৎ পদ্মং সুলক্ষণম্।
বহিঃপঙক্ত্যা ভবেৎ পীঠং পংক্তিযুগ্মেন বীথিকা।।
দ্বারশোতোপশোভাস্রাং শিষ্টাভ্যাং পরিকল্পয়েৎ।
শাস্ত্রোক্তবিধিনা মন্ত্রী ততঃ পদ্মং সমালিখেৎ।।
পদ্মক্ষেত্রস্য সংত্যজ্য দ্বাদশাংশং বিহঃ সুধীঃ।
তন্মধ্যং বিভজেদ্বৃত্তৈস্ত্রিভিঃ সমবিভাগতঃ।।
আদ্যং স্যাৎ কর্ণিকাস্থানং কেশরাণাং দ্বিতীয়কম্।
তৃতীয়ং তত্র পত্রাণাং মুক্তাংশেন দলাগ্রকম্।।
বাহ্যবৃত্তান্তরালস্য মানেন বিধিনা সুধীঃ।
নিধায় কেশরাগ্রেষু পরিতোহর্ধনিশাকরান্।।
লিখিত্বা সার্দ্ধসংস্থানি তত্র সূত্রাণি পাতয়েৎ।
দলাগ্রাণাঞ্চ যন্মানং তন্মানাৎ বৃত্তমালিখেং।।
তদন্তরালং তন্মধ্যসূত্রস্যোভয়তঃ সুধীঃ।
আলিখেদ্বাহ্যহন্তেন দলাগ্রাণি সমন্ততঃ।।
দলমূলেষু যুগশঃ কেশরাণি প্রকল্পয়েৎ।
এতৎ সাধারণং প্রোক্তং পঙ্কজং তন্ত্রবেদিভিঃ।।
অঙ্গুলোৎসেধবিস্তারাঃ সীমারেখাঃ নিতাঃ শুভাঃ।
কর্ণিকাং পীতবর্ণেন কেশরাণ্যরুণেন চ।।
শুক্ল-বর্ণানি পত্রাণি তৎসন্ধীন্ শ্যামলেন চ।
রজসা রঞ্জয়েন্মন্ত্রী যদ্বা পীতৈব কর্ণিকা।।
কেশরাঃ পীতরক্তাঃ স্যুররুণানি দলানি চ।
সন্ধয়ঃ কৃষ্ণবর্ণাঃ স্যুঃ সিতেনাপ্যসিতেন বা।।
রঞ্জয়েৎ পীঠগর্ভাণি পাদাঃ স্যুররুণপ্রভাঃ।
গাত্রাণি তস্য শুক্লানি বীথিষু চ চতসৃষু।।
আলিখেৎ কল্পলতিকাং দল-পুষ্প-সমন্বিতাম্।
বর্ণৈনানাবিধৈশ্চিত্রৈঃ সর্ব্বদৃষ্টিমনোহরাম্।।
দ্বারানি শ্বেতবর্ণানি শোভা রক্তাঃ সমীরিতাঃ।
উপশোভাঃ পীতবর্ণাঃ কোণান্যসিতভানি চ।।
তিস্রো রেখা বহিঃ কার্য্যাঃ সিতরক্তাসিতাঃ ক্রমাৎ।
মণ্ডলং সর্ব্বতোভদ্রমেতৎ সাধারণং মতম্।।
অর্থাৎ :-
তন্মধ্যে ৩৬টি ঘর লইয়া সুলক্ষণ পদ্ম অঙ্কিত করিবে। ৩৬টি ঘরের বাহিরের এক পংক্তিতে পীঠ, তাহার পরের দুই পংক্তিতে বীথিকা হইবে। পরে অবশিষ্ট দুই পংক্তি দ্বারা মধ্যস্থলে দ্বার, উভয় পার্শ্বে দুইটি করিয়া শোভা এবং শোভাদ্বয়ের পার্শ্বে দুইটি করিয়া উপশোভা এবং পরে কোণ প্রস্তুত করিতে হইবে। যে ৩৬টি ঘর লইয়া পদ্ম অঙ্কিত, তাহার দ্বাদশটি ঘর বাহিরে পৃথক রাখিয়া তন্মধ্যস্থ ২৪টি ঘরকে ৩টি বৃত্ত দ্বারা সমভাগে বিভক্ত করিবে। উহার প্রথম বৃত্ত কর্ণিকা, দ্বিতীয় বৃত্ত কেশর ও তৃতীয়টি পদ্মপত্র। যে দ্বাদশাংশ বাহিরে রাখা হইয়াছে, উহা পত্রের অগ্র। তৃতীয় বৃত্তের মধ্যস্থ স্থানের পরিমাণে পদ্মপত্র রচনা করিবে। কেশর সমূহের অগ্রভাগে অর্ধচন্দ্র অঙ্কিত করিবে। অর্ধচন্দ্রাকৃতি রেখা-সমূহের মধ্যভাগে সূত্রপাত করত পদ্মপত্রের অগ্রগুলির সমান মাপে বৃত্তরেখা আঁকিবে।
মধ্যস্থ সূত্রপাতের দুই পার্শ্বে স্থির হস্তে দলাগ্র আঁকিবে। দলমূলে দুই দুইটি করিয়া কেশর করিতে হয়। ইহাকেই তন্ত্রবেত্তারা সাধারণ পদ্ম কহেন।…
এক অঙ্গুলি উৎসেধ অর্থাৎ বেধ পরিমাণে শুভ্রবর্ণদ্বারা সীমারেখা সকল চিত্রিত করিয়া পীতবর্ণদ্বারা কর্ণিকা, রক্তবর্ণ গুণ্ডিকাদ্বারা কেশর ও শুক্লবর্ণদ্বারা পত্রসকল রঞ্জিত করিয়া শ্যামবর্ণে সমস্ত সন্ধিস্থানে চিত্রিত করিবে। প্রকারান্তরে যথা- কর্ণিকা পীতবর্ণ, কেশরসকল পীত রক্তবর্ণ, পত্রসকল রক্তবর্ণ, সন্ধি কৃষ্ণবর্ণ, পীঠগর্ভ শুক্লবর্ণ কিংবা কৃষ্ণবর্ণ, পীঠপাদ রক্তবর্ণ ও পীঠগাত্র শুক্লবর্ণ করিয়া বীথিচতুষ্টয়ে পত্র ও পুষ্প সহিত কল্পলতা সর্ববর্ণদ্বারা বিচিত্রিত করিবে। এই কল্পলতিকা দর্শনমনোহর করিবে। দ্বারসকল শুক্লবর্ণ, শোভা রক্তবর্ণ, উপশোভা পীতবর্ণ ও কোণ চতুষ্টয় কৃষ্ণবর্ণ করিবে। মণ্ডলের বহির্দেশে শ্বেত রক্ত ও কৃষ্ণবর্ণ তিনটি রেখা চিত্রিত করিবে। এই প্রকারে সাধারণ সর্বতোভদ্রমন্ডল নির্মাণ করিতে হইবে।
এতোখানি জ্যামিতিক নিষ্ঠা নিয়ে, শোভা এবং উপশোভায় বিভূষিত করে, এই যে সর্বতোভদ্রমণ্ডলটি আঁকবার নির্দেশ পাওয়া গেলো, এর মূল কথা কী? তন্ত্রবেত্তারা জানেন, এর মূল কথা হলো অষ্টদলপদ্ম ও বীথিকা :
ষটত্রিংশতা পদৈর্মধ্যে লিখেৎ পদ্মং সুলক্ষণম্।
বহিঃপঙক্ত্যা ভবেৎ পীঠং পংক্তিযুগ্মেন বীথিকা।।
(অর্থাৎ : তন্মধ্যে ৩৬টি ঘর লইয়া সুলক্ষণ পদ্ম অঙ্কিত করিবে। ৩৬টি ঘরের বাহিরের এক পংক্তিতে পীঠ, তাহার পরের দুই পংক্তিতে বীথিকা হইবে।)
সুলক্ষণ পদ্ম এবং বীথিকা; ওই বীথিকার নাম কল্পলতিকা :
আলিখেৎ কল্পলতিকাং দল-পুষ্প-সমন্বিতাম্।
(অর্থাৎ : পত্র ও পুষ্প সহিত কল্পলতা সর্ববর্ণদ্বারা বিচিত্রিত করিবে।)
পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন “এখন যে সিংহবাহিনী দশভুজার প্রতিমা গড়িয়া আমরা পুজা করিয়া থাকি, শতবত্সর পুর্বে ঠিক এমন ভাবে প্রতিমা বাংলার কারিগর গড়িত না…. কারন আসল কথা এই যে, দুর্গোতসবের সময় যে প্রতিমা গড়িয়া, চন্ডিমন্ডপ জোড়া করিয়া আমরা যে উৎসব করিয়া থাকি সেই উৎসবে ঠিক সেই প্রতিমার পুজা হয় না, ;পুজা হয় ভদ্রকালীর, পুজা হয় পুর্ণঘটের, দেবী কে আহ্বান করিতে হয় ‘যন্ত্রে ও ঘটে’।
দুর্গা পুজার প্রধানত অনুষ্ঠান নব পত্রিকা কে কেন্দ্র করে। এদের কথা আগেই জানিয়েছি।
যন্ত্রের কথাও জানালাম। এই সর্বতোভদ্রমন্ডল সাদা চালে র গুঁড়ি দিয়ে অংকন করতে হয়। পঞ্চগুঁড়ি অর্থাৎ বেলপাতা গুঁড়ি দিয়ে সবুজ রং,হলুদ গুঁড়ি দিয়ে হলুদ রং,পলাশফুল গুঁড়ি দিয়ে লাল রং,তুঁষ পোড়া গুঁড়ি দিয়ে কালো বা ছাই রং, চাল গুঁড়ি দিয়ে সাদা রং। ইত্যাদি দিয়ে যন্ত্রের নির্দিষ্ট স্হানে ভরে দিতে হয়। এর ওপর ঘট স্থাপন করতে হয়। শুদ্ধ মাটিতে পঞ্চশষ্য অর্থাৎ ধান, যব, তিল, সর্ষে, কলাই দিয়ে তার ওপর শুদ্ধ জল পুর্ণ করে মাটি, ধাতু, অথবা পাথরের ঘট স্থাপন করতে হয়। ঘটের ওপর তান্ত্রিক মতে পঞ্চপল্লব বা আম,কাঁঠাল অশ্বত্থ, বট, বকুল শাখা দিতে হয়। ঘটের গায়ে তেল সিন্দুর দিয়ে পুতুল এঁকে দিতে হয়। এর ওপর সরায় করে ধান বা চাল রেখে এর ওপর সশীষ ডাব বা নারকেল রেখে দিতে হয়। সবশেষে বস্ত্র বা গামছা দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। এঁকেই দেবী দুর্গা রূপে কল্পনা করে পুজা প্রার্থনা করা হয়।
পরিশেষে এটা বলা বাহুল্য হবে না যে, হিন্দুধর্মে তন্ত্রের যে তাৎপর্যময় সুস্পষ্ট প্রভাব আনুষ্ঠানিকভাবে বহমান তার জ্বলন্ত প্রমাণ হলো হিন্দুধর্মের প্রচলিত মাতৃপূজা অনুষ্ঠান ও তার বিধি-প্রক্রিয়া। বৈদিক সংস্কৃতিতে পূজা অনুপস্থিত। দুর্গা কালী সরস্বতি লক্ষ্মী এইসব অনার্য ঐতিহ্যবাহী মাতৃপূজার বহিরঙ্গের ভেতরগত মন্ত্র-বিধি-প্রণালীর গোটা প্রক্রিয়া জুড়েই রয়েছে তন্ত্র ও তান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থার বিপুল প্রভাব। এছাড়া আউল-বাউল ফকির-সাধু-সন্ন্যাসী ধারা তথা বাঙালির পরবর্তীকালে সাধন-পরম্পরার মধ্যেও মিশে আছে তন্ত্রের বিপুল প্রভাব।
Tantra says that If you are in order,then the whole world is in order for you.When you are in harmony, then the whole existence is in harmony for you.When you are in disorder, then the whole world is disorder.
????
All tantric scriptures have this single objective…
To destroy your lust for finite pleasure…And Liberate you into infinite bliss…
Rituals uplift you into Attunement. After you realise the finite nature of rituals, is your Attainment.
????
তন্ত্র গুরুমুখী সাধন পথ। এর প্রতিটি স্থুল জিনিসের পশ্চাতে লুকিয়ে আছে নিগূঢ় সুক্ষ অর্থ। জ্ঞানের পিপাসা নিশ্চয়ই থাকবে। সেই তৃষ্ণা মেটাতে সর্বাগ্রে দরকার গুরুগত হওয়া। যে মনে করে Wikipedia বা Google দেখে বা Facebook এ প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে সাধন পথে অগ্রসর হওয়া যায়, সে মূর্খের স্বর্গে বাস করে। তন্ত্রের ব্যাখ্যা অত্যন্ত গুপ্ত, এখানে ব্যাবহৃত সবকিছুর অর্থ হাটের মাঝে টেনে নামাতে হবে এমনটা কখনওই উচিত নয়। তাছাড়া পরম্পরা ভেদে এক একটি জিনিসের এক এক রকম ব্যবহার। Group তো অবশ্যই প্রয়োজন পূজা পাঠ সম্বেন্ধ সাধারণ বিধি ব্যবস্থা জানার এবং জানানোর উদ্দেশ্য। তবে মাত্রা ছাড়িয়ে সেই জানার ইচ্ছে যখন “গুরু” সত্ত্বাকেও অতিক্রম করে যায়, তখন তা সত্যই নিন্দনীয়।
Facebook করেই যদি সবাই তন্ত্রের নিগূঢ় অর্থে পারদর্শি হয়ে ওঠে তবে আর শ্রী গুরুদেবের প্রয়োজন কোথায়?
শালগ্রামে তুলসী কিভাবে দেব সেটা বই পড়ে বা এখানে জেনে apply করা যায়, কিন্তু গণিকা আর বেশ্যা র মধ্যে তফাত্টাও যদি এখানে আলোচনা হয়, তবে তন্ত্রের মর্যাদাহানি হয় বৈকি!
আসল কথা হল, যিনি শ্রীনাথের শরণাগত নন, সেই অনাথ, অর্বাচীন ব্যক্তি আর কতটুকুই বা বুঝবেন “গুরু” তত্বের মহিমা – সেই করুণাসিন্ধুর ব্যাপ্তি! শ্রী গুরুদেবের আশির্বাদী হাত মাথার উপর থাকলে Facebook ও লাগে না, Google এ গুগলিয়েও বৃথা সময় নষ্ট করতে হয় না!
অনধিকার চর্চার একটা সীমা আছে, সেটা ভুলে গেলেই বিপদ!
[তথ্যসূত্র :-
বৃহৎ তন্ত্রসার।
পুজা পদ্ধতি।
পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়।]
ওঁ সর্বাবাধাবিনির্মুক্তো ধনধান্যসমন্বিতঃ ।
মনুষ্যো মত্প্রসাদেন ভবিষ্যতি ন সংশয়ঃ ॥ ১৩॥
ওঁ স্মরন্ মমৈতচ্চরিতং নরো মুচ্যেত সঙ্কটাত্ ।
মম প্রভাবাত্সিংহাদ্যা দস্যবো বৈরিণস্তথা ॥ ২৯॥
দূরাদেব পলায়ন্তে স্মরতশ্চরিতং মম ॥ ৩০॥
ওঁ এবং ভগবতী দেবী সা নিত্যাপি পুনঃ পুনঃ ।
সম্ভূয় কুরুতে ভূপ জগতঃ পরিপালনম্ ॥ ৩৬॥
তয়ৈতন্মোহ্যতে বিশ্বং সৈব বিশ্বং প্রসূয়তে ।
সা য়াচিতা চ বিজ্ঞানং তুষ্টা ঋদ্ধিং প্রয়চ্ছতি ॥ ৩৭॥
ব্যাপ্তং তয়ৈতত্সকলং ব্রহ্মাণ্ডং মনুজেশ্বর ।
মহাদেব্যা মহাকালী মহামারীস্বরূপয়া ॥ ৩৮॥
সৈব কালে মহামারী সৈব সৃষ্টির্ভবত্যজা ।
স্থিতিং করোতি ভূতানাং সৈব কালে সনাতনী ॥ ৩৯॥
ভবকালে নৃণাং সৈব লক্ষ্মীর্বৃদ্ধিপ্রদা গৃহে ।
সৈবাভাবে তথালক্ষ্মীর্বিনাশায়োপজায়তে ॥ ৪০॥
স্তুতা সম্পূজিতা পুষ্পৈর্গন্ধধূপাদিভিস্তথা ।
দদাতি বিত্তং পুত্রাংশ্চ মতিং ধর্মে গতিং শুভাম্ ॥ ৪১॥
ॐ যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহংচ যদ্ভবেত্ ।
পূর্ণং ভবতু তত্ সর্বং ত্বত্প্রসাদান্মহেশ্বরী ।। ১॥
যদত্র পাঠে জগদম্বিকে মযা বিসর্গ-বিন্দ্বক্ষরহীনমীরিতম্ ।
তদস্তু সম্পূর্ণতমং প্রসাদতঃ সংকল্পসিদ্ধিশ্চ সদৈব জাযতাম্ ।। ২॥
যন্মাত্রাবিন্দুবিন্দুদ্বিতযপদপদদ্বন্দ্ববর্ণাদিহীনম্ ভক্ত্যাভক্ত্যানুপূর্বং
প্রসভকৃতিবশাদ্ ব্যক্তমব্যক্তমম্ব ।
মোহাদজ্ঞানতো বা পঠিতমপঠিতং সাম্প্রতং তে স্তবেহস্মিন্
তত্ সর্বং সাঞ্জমাস্তাং ভগবতী বরদে ত্বত্প্রসাদাত্ প্রসীদ ।। ৩॥
প্রসীদ ভগবত্যম্ব প্রসীদ ভক্তবত্সলে ।
প্রসাদং কুরু মে দেবী দুর্গে দেবী নমস্তু তে ।। ৪॥
ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু
ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু
( বিদ্রঃ আমার এই লেখা যদি কাহারো প্রতি কোনরূপ হেয় ও অবমাননা কর বলে মনে হয় আমাকে সবিনয়ে জানাবেন । ভুল হলে ক্ষমা সুন্দরদৃষ্টিতে দেখবেন । )