রামলালা
এই সময় আর একটি বৈষ্ণব সাধু এসেছিলেন দক্ষিণেশ্বরে। তিনি রামচন্দ্রকে নিজের ছেলে বলে ভাবতেন। তাঁর কাছে শিশু রামচন্দ্রের, ‘রামলালার’ একটি ধাতুর মূর্তি ছিল। সেটিকেই তিনি আদর করেন, স্নান করান, খাওয়ান। লোকে দেখে ধাতুর মূর্তি; সাধুটি কিন্তু সত্যি সত্যি জীবন্ত রামলালাকে দেখতে পেতেন। শ্রীরামকৃষ্ণও তাই দেখলেন। তাই সাধুটি যখন রামলালার সঙ্গে কথা বলতেন, তাকে খাওয়াতেন, তার জন্য রান্না করতেন, শ্রীরামকৃষ্ণ কাছে বসে সব দেখতেন। দেখে তাঁর খুব ভাল লাগত। এভাবে ভগবানকে পাওয়ার পথ তিনি সাধুটির কাছে জেনে নিলেন। রামলালাও শ্রীরামকৃষ্ণকে পছন্দ করত বেশি। তাঁর কাছেই বেশি সময় কাটাত। সাধুটি রান্না করে রামলালাকে খাওয়াতে গিয়ে দেখতেন, সে সেখানে নেই। খুঁজতে খুঁজতে দেখতেন শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরে গিয়ে তাঁর কাছে বসে আছে। তখন বকতেন আর ধরে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতেন।
সাধুটি দক্ষিণেশ্বর থেকে চলে যাওয়ার সময় রামলালাকে শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে দিয়ে গেলেন। তাকে নিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ মাঝে মাঝে মুশকিলে পড়তেন। তোমরা যারা খুব দুষ্টু, তাদের নিয়ে তোমাদের মা-বাপের যেমন হয়, তেমনি। রামলালা হয়তো রোদ্দুরে ঘুরে বেড়াতে চাচ্ছে, কাঁটাবনে ঘুরে বেড়াতে বা গঙ্গায় ঝাঁপাঝাঁপি করতে চাইছে। শ্রীরামকৃষ্ণ তখন তাকে বকতেন–‘এমন করতে নেই। করলে কষ্ট হবে, অসুখ হবে’, এইসব বলতেন। তা রামলালাও তেমনি ছেলে, শুনে ভেংচি কাটত। তখন বিরক্ত হয়ে কখনো বা দু-ঘা বসিয়েও দিতেন। তখন রামলালার কি কান্না! তার কান্না দেখে তাকে বুকে ধরে শ্রীরামকৃষ্ণও অঝোরে কাঁদতেন।