খন্ডন ভব বন্ধন জগবন্দন বন্দি তোমায়

যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণ, কলির দেবতা। অসংখ্য ভক্তর পাপ ধারণ করে দুরারোগ্য কর্কট রোগে আক্রান্ত, তিনি নীলকন্ঠ। ১৮৮৫ সাল শেষ হয়ে আসছে, কেউ জানেনা সে একা যাবে না। শুধু একজন ছাড়া। তিনি জানেন লীলা সময় শেষ হয়ে এসেছে, কাজ বুঝিয়ে দিয়েছেন, এবার বিশ্রাম। শুধু একটা কাজ বাকি- একটাই। ভক্ত গিরিশ জানতে চেয়ে ছিলেন ‘তুমি কে?’ এই উত্তর দিয়ে যেতে হবে। তারপরে ছুটি।

 কাশীপুর উদ্যানবাটী- ১৮৮৬ সাল, পয়লা জানুয়ারি। অজস্র ভক্ত সমাগমে উদ্যানবাটীর উদ্যানে প্রাণের লহরী ছুটেছে। নরেন্দ্রনাথ অন্যান্য ভক্তরা রাত জেগে অসুস্থ ঠাকুরের সেবা করেছেন। তারা  ক্লান্তি দূর করছেন‌। হঠাৎ ভক্তরা হতবাক বিস্ময় দেখলেন এক জ্যোতি পুঞ্জ উদ্যান প্রাঙ্গণে উপস্থিত। ঠাকুর নেমেছেন। পশ্চিমের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসেছেন এগোচ্ছেন দক্ষিণের ফটকের দিকে। মাথায় সবুজ কান ঢাকা টুপি। পশ্চিমে গাছের ছায়ায় বসে গিরিশচন্দ্র অতুলচন্দ্র প্রমূখ ভক্তরা। তারা প্রণাম করবেন ঠাকুরকে, উঠে এলেন।  ঠাকুরের দৃষ্টি গিরিশের উপর স্থির, গিরিশ পায়ের কাছে বীরাসনে উপবিষ্ট, হাত জোড়, দৃষ্টি বিহ্বল, অঙ্গ শিহরিত হচ্ছে। ভাবগম্ভীর গলায় রামকৃষ্ণ প্রশ্ন করলেন গিরিশ ‘কে আমি?’ চন্ডাল রাগী, মদ্যপ ভক্ত গিরিশ আর পারলেন না, শব্দ ভাষা হারিয়ে গেল। অনেক প্রচেষ্টায় বললেন ‘ব্যাস বাল্মিকী পারেননি ঠাকুর, আমিও পারলুম না’। ঠাকুর ঘুরে দাঁড়ালেন। কাজ শেষ, এবার ‘হাটে হাড়ি ভাঙ্গা’ র পালা। পুঞ্জ পুঞ্জ আলো ঘিরে ধরেছে প্রভুর শ্রীঅঙ্গ অননুভূতপূর্ব ভক্তির স্রোতে ভেসে গেল ভক্তকুল। 

উদ্যানে কল্পতরু,  এই রূপ কেউ কখনো দেখেনি। সকলে প্রণাম করছেন। ঠাকুর তদ্গত। অভূতপূর্ব এক মুদ্রায় দাঁড়িয়ে আছেন। অন্তরের অন্তস্থল থেকে উচ্চারিত হলো এক আশীর্বাণী ‘তোমাদের চৈতন্য হোক’: কল্পতরু- শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস কৃপা কল্পতরু।

~ অর্পণ কৃষ্ণ মিত্র।

তথ্যসূত্রঃ- পরম প্রসঙ্গ, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।

শ্রীরামকৃষ্ণ জীবনী, স্বামী তেজসানন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.