প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমন উপলক্ষ্যে এখন আলোচনায় রয়েছে যশোরেশ্বরী শক্তিপীঠ। চলুন, দেবী যশোরেশ্বরী এবং সতীপীঠটি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক!
অবস্থানওপরিচিতি: বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার ঈশ্বরীপুর গ্রামে অবস্থিত এ শক্তিপীঠ। যশোরেশ্বরী অর্থ যশোরের দেবী। তিনি এখানে যশোরেশ্বরী আর ভৈরব মাতা নামে পরিচিতা। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এই মন্দিরটি ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে একটি। এই পীঠগুলো ভারত ও ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ছয়টি পীঠ, যশোরসহ যেগুলো অবস্থিত বরিশাল, সিলেট, বগুড়া, ও চট্টগ্রাম জেলায়। ঈশ্বরীপুরের মন্দিরটি হলো সেই স্থান যেখানে দেবী সতীর হাতের তালু ও পায়ের পাতা এসে পড়েছিল।
তন্ত্রচূড়ামণিতে বলা হয়েছে—
‘যশোরে পাণিপদ্ম দেবতা যশোরেশ্বরী,/চণ্ডশ্চ ভৈরব যত্র তত্র সিদ্ধ ন সংশয়।’
অর্থাৎ যশোরে সতীর পাণিপদ্ম বা করকমল পড়েছে। দেবীর নাম যশোরেশ্বরী, ভৈরব হলেন চণ্ড।
.
ইতিহাস: কথিত আছে, দ্বাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে আনারি নামে একজন ব্রাহ্মণ এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। তিনি যশোরেশ্বরী পীঠের জন্য ১০০ দরজার মন্দির তৈরি করেছিলেন। পরবর্তীতে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাজা লক্ষ্মণ সেন এটি সংস্কার করেন এবং সর্বশেষ রাজা প্রতাপাদিত্য ষোড়শ শতাব্দীতে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন। জনশ্রুতি রয়েছে, মহারাজা প্রতাপাদিত্যের সেনাপতি এখানকার জঙ্গল থেকে একটি আলৌকিক আলোকরেখা বের হয়ে মানুষের হাতের তালুর আকারের একটি পাথরখণ্ডের উপর পড়তে দেখেন। পরবর্তীতে প্রতাপাদিত্য কালীমায়ের পূজা করতে আরম্ভ করেন এবং এই কালী মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
.
মায়ের_রূপ: যশোরেশ্বরী মাতা ভীষণদর্শন হলেও মায়ের শ্রীবদনে রয়েছে অপূর্ব এক দেবীরূপ। মন্দির বেদির ওপর প্রতিষ্ঠিত মাতৃমূর্তির শুধু মুখমণ্ডলই দৃষ্টিগোচর হয়। তাঁর কণ্ঠের নিচে তাঁর শ্রীহস্ত ও শ্রীচরণ কিছুই নজরে পড়ে না। প্রতিমার অবয়ব পুরোটাই মখমলে আবৃত। মায়ের মাথার ওপর টকটকে লাল রঙের চাঁদোয়া। কণ্ঠে রক্তজবার মালা ও নানা অলংকার। মাথায় সোনার মুকুট। লোলজিহ্বা দেবীর ভীষণা মূর্তি। মালদার জাগ্রত জহুরা কালীমাতার মুখমণ্ডলের সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে শ্রীযশোরেশ্বরীমাতার।
.
দেবীমায়ের_পূজা: সর্বসাধারণের বিশ্বাস যশোরেশ্বরী মা ভীষণ জাগ্রত। আর তাই এই সতীপীঠে কায়মনোবাক্যে পূজা করলে ভক্তের মনোবাসনা পূর্ণ হয়। মায়ের পূজায় সমবেত ভক্তগণ ফুল, ফল ও নানাধরনের মিষ্টি নিবেদন করেন। মাতৃমূর্তির সামনে সুন্দর করে কাঁসার থালা ও মাটির পাত্রে থরে থরে নৈবেদ্য সাজানো হয়।
শ্রীযশোরেশ্বরীর পূজা তন্ত্রমতেও হয়। প্রতিবছর মন্দিরে খুব ধুমধাম করে শ্যামাপূজা হয়। শ্যামাপূজায় এই মন্দিরে হাজার হাজার ভক্ত পূজা দেন, মানত করেন। বড় করে হোমযজ্ঞ হয়। মাকে নানা অলংকারে সাজানো হয়। মন্দিরের সামনে তিনদিন মেলা বসে। ছাগবলি হয়। মন্দিরের বারান্দায় হিন্দু ভক্তদের পাশাপাশি, মুসলমান ভদ্রমহিলারাও মাকে ভীষণ মান্যি করেন। মানত করতে আসেন। মানত পূরণ হলে এক জোড়া পায়রা মন্দিরের বারান্দা থেকে উড়িয়ে দেয়া হয়।
(তথ্য ও ছবি সংগৃহীত)