যেকোনো ভারতবাসীর স্বপ্নই হল ভারতবর্ষকে বিশ্বগুরুর আসনে দেখা। সুপার পাওয়ার নয়‚ বিশ্বগুরু। কারণ সুপার পাওয়ার শব্দের মধ্যে অন্যকে শাসন করার ভাব থাকে। ভারত কাউকে শাসন করতে চায় না। ভারত চায় অভিভাবক হতে‚ শান্তি সমৃদ্ধির পথ দেখাতে। তাই সে হতে চায় বিশ্বগুরু।

আর ভারতের বিশ্বগুরুর আসন যেন একরকম অলিখিতভাবে মেনেই নিল আমেরিকা। কারণ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ থামানোর জন্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাহায্য চেয়েছে।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি) যে কোনো প্রচেষ্টার বিষয়ে তিনি কথা বলতে দেব। ইউক্রেনে শত্রুতার অবসান ঘটাতে পারে এমন যেকোনো প্রচেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানাবে।” শুক্রবার. ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ থামাতে বা রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনকে রাজি করাতে প্রধানমন্ত্রী মোদির দেরি হয়ে গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন যে‚ তার মতে “যুদ্ধ থামানোর জন্য পুতিনের এখনও সময় আছে। আমরা মনে করি যুদ্ধ আজ শেষ হতে পারে… আজই শেষ হওয়া উচিত।” জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল মস্কোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সাক্ষাতের একদিন পর এই বিবৃতিটি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

আমেরিকার এই মুখপাত্র ইউক্রেনীয় জনগনের সাথে যা চলছে তার জন্য পুতিনকেই এককভাবে দায়ী করেন এবং বলেন যে পুতিন চাইলে এখনই এটি বন্ধ করতে পারেন। পরিবর্তে, তিনি শক্তি এবং বিদ্যুৎ পরিকাঠামোতে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং আলো নিভিয়ে ইউক্রেনীয়দের ভোগান্তি আরো বেশী বাড়াতে চাইছেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে‚ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। উজবেকিস্তানের সমরকন্দে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে, প্রধানমন্ত্রী মোদি পুতিনকে দ্যার্থহীন ভাষায় বলেছিলেন, “আমি জানি এটা যুদ্ধের যুগ নয়। আমরা ফোনে আপনার সাথে এই বিষয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা করেছি, যে গণতন্ত্র, কূটনীতি এবং আলোচনা দিয়ে সারা পৃথিবীতে শান্তি আসবে।”

রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদির আহ্বানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানিয়েছে এবং ইউরোপে ব্যাপকভাবে ইতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে।

এছাড়াও গত বছরের ডিসেম্বরে, জেলেনস্কি নিজে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ফোন করে ১০ দফা “শান্তি সূত্র” তে ভারতের সমর্থন চেয়েছিলেন। পিএমও থেকে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে‚ “প্রধানমন্ত্রী মোদি অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ করার জন্য তার আহ্বানকে দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন যে উভয় পক্ষেরই তাদের মতপার্থক্যের দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার জন্য আলোচনা আর কূটনীতিতে ভরসা রাখা উচিত।”

দুই সুপার পাওয়ার এর একজন অন্যজনকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারতের সাহায্য চাইছে‚ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের ঊত্থানের পথে এটা অবশ্যই একটা বিশাল বড় মাইলফলক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.