১। চোরাগোপ্তা সাম্প্রদায়িকতা
২। হিমশৈলের চূড়া
৩। কয়েকটি ঐতিহাসিক প্রশ্ন
৪. ধর্ম যখন উপলক্ষ্য
৫। সত্যের মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা
৬। ইতিহাসবিদ বনাম ইতিহাস
৭। নভেম্বর-৯ ইতিহাস পরিবর্তন করবে
৮। শিল্যান্যাস থেকে “বার্লিনের পাঁচিল” পর্যন্ত
৯। রাম-জন্মভূমি মন্দির সংক্রান্ত মুসলিম বিবৃতি
১০। বোবা সাক্ষী কথা বলুক
উপসংহার
১৯৯০ সালে ভয়েস অফ ইণ্ডিয়া এই বইটি প্রকাশ করে। হিন্দুত্ববুক্সের সাথে যৌথ উদ্যোগে এই বইটি পাঠকদের সামনে নিয়ে আসল বঙ্গদেশ। অনুবাদ করেছেন অঙ্কুশা সরকার।
আগের পর্ব [১] – [২] – [৩] – [৪] – [৫] – [৬] – [৭] – [৮]
নবম অধ্যায় : রাম-জন্মভূমি মন্দির সংক্রান্ত মুসলিম বিবৃতি
হর্ষ নারায়ণ
১৯৬০ সালে কংগ্রেস সরকার কর্তৃক ফৈজাবাদ জেলা গেজেটিয়ার সঙ্কলিত ও প্রকাশিত ব্রিটিশ সরকারের সমস্ত তথ্যগুলি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করে যে, অযোধ্যার তথাকথিত বাবরী মসজিদটি রামজন্মস্থান মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপরে দাঁড়িয়ে আছে, যা ১৫২৮ সালে বাবরের আদেশে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।
জেএনইউর ইতিহাসবিদ এবং স্বঘোষিত ‘ধর্মনিরপেক্ষ সৈয়দ শাহাবুদ্দিন এবং অন্যান্য নেতারা এই বিষয়টির বিরোধিতা করতে গিয়ে বলেছেন যে ব্রিটিশরা তাদের ‘বিভাজন ও শাসন’ নীতি অনুসরণ করে একটি মনগড়া কাহিনী তৈরি করেছে। সৈয়দ শাহাবুদ্দিন এবং বহু মুসলিম পণ্ডিতরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যান এবং দৃঢ় ভাবে দাবি করেন যে বাবর বা অন্য কোন মুসলমানই কোনও মন্দির স্থানচ্যুত করে একটি মসজিদ তৈরী করেননি, কারণ এ জাতীয় মসজিদটি মসজিদই হবে না অর্থাৎ শরীয়ার দৃষ্টিতে তা মহত্ত্ব হারাবে, মুসলমানরাই এই ধরনের কাঠামো ধ্বংস করে দেবেন। এই ধারণাটি মাথায় রেখে সৈয়দ শাহাবুদ্দিন ঘোষণা করেন যে, বাবরি মসজিদটি যদি কোনও মন্দিরকে বাস্তুচ্যুত করে নির্মিত হয়ে থাকত তবে তা তিনি নিজের হাতে টেনে নামিয়ে হিন্দুদের হাতে তুলে দিতেন। তাঁর এই চ্যালেঞ্জকে আমি সৌজন্যতার সঙ্গেই গ্রহণ করছি, আমার নিজের জন্য ছাড়াও অন্য সবার জন্য যারা সত্যকে রাজনীতির উর্ধে রাখেন।
প্রথমেই ধরে নেওয়া যাক, বাবরি মসজিদটি কোনও মন্দিরকে বাস্তুচ্যুত করেনি এবং তার আশেপাশে ও ভেতরে কোথাও কোনো মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের অংশমাত্র পাওয়া যাবে না। একই যুক্তিতে আমি কি এ প্রশ্ন করতে পারি : যে সমস্ত মসজিদের আশেপাশে ও ভেতরে নিশ্চিতভাবে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে সেগুলি সৈয়দ শাহাবুদ্দিন নিজ হাতে ভেঙে দেবেন? এটি সাধারণ জ্ঞান যে মসজিদগুলির বেশিরভাগই মুসলিম হানাদারদের দ্বারা দখলকৃত বা আহৃত জমিতে দাঁড়িয়ে আছে। পবিত্র ধর্মস্থান ‘কাবা’ নিজেই বা কী?
সৈয়দ শাহাবুদ্দিন আব্দুর রহমান, সম্প্রতি এক দুর্ঘটনায় মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি মুসলিম ঐতিহাসিকদের পরিবর্তিত অবস্থানটি এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন : “এটা মনে করা যায় যে কোনো কোনো মসজিদ কিছুটা মন্দিরের কাছাকাছি বা অদূরে নির্মিত হয়েছিল, যেই মন্দিরগুলি কোনো বিশেষ কারণে ধ্বংস হয়ে যায়, তবে কখনোই কোনোভাবেই কোনো মসজিদ কোনো মন্দিরের জায়গায় বা মন্দির ভেঙে তৈরী হয়নি।” (তাঁর রচিত ‘বাবরি মসজিদ’ শীর্ষক গ্রন্থ, তৃতীয় মুদ্রণ, আজমগড়, দারুল মুসান্নাফিন শিবলি একাডেমি, ১৯৮৭, পৃষ্ঠা ১৯ দেখুন)
এটি সত্য যে শরিয়তের রায় অনুসারে, দখল করা বা অবৈধভাবে অধিগ্রহণকৃত জমির উপর কোনও মসজিদ নির্মাণ করা যায় না। (ফতোয়া-ই আলমগিরি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২১৪)। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এই নিয়ম কি জেহাদের মধ্যে দিয়ে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেও সত্য? উত্তরটি একটি জোরালো ‘না’ হতেই হবে। নবী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে সমস্ত ভূমি ঈশ্বরের বা রাসূলের (আলামু আন-ইল-আরজা লীল্লাহ-ই ওয়া রাসুল-ই-হাই) এবং স্পষ্টতই রাসূলের মাধ্যমে তার অধিকার আসে মুসলমানদের কাছে (বুখারী, দ্বিতীয় কিতাব, আল জিবাদ হলেন- সিয়ার, হাদিস ৪০৬)। কবি ইকবাল স্পেনের মহান বিজয়ী তারিকের মুখে একটি ফার্সী শ্লোকের মধ্যে এই শব্দগুলি লিখেছেন: “হার মুল্ক মুলক-ই মাস্ত কী মুল্ক-ই খুদা-ই মাস্ত” – অর্থাৎ “সমস্ত ভূমি মুসলমানদের, কারণ এটি তাঁদের ঈশ্বরের। চতুর্দশ শতাব্দীর ধর্মতত্ত্ববিদ ও আইনবিদ ইবনে তাইমিয়াহ যুক্তি দিয়েছিলেন যে জেহাদ কেবলমাত্র মুসলমানদের জমিগুলি পুনরুদ্ধার করে মাত্র, যেগুলি যথাযথভাবে তাদেরই। এই যুক্তিদ্বারা কোনোভাবেই মুসলমানরা অন্যের জমি বলপূর্বক দখল করতে পারে না। সুতরাং, শরীয়ার পক্ষ থেকে যুক্তিটি দাঁড়ায় না।
এখন, আমি ব্রিটিশদের প্রভাবের ক্ষেত্র ছাড়িয়ে কিছু খাঁটি মুসলিম সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে দেখাবো কীভাবে বাবরি মসজিদ একটি হিন্দু মন্দির-রামজন্মস্থান মন্দিরকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে বাস্তুচ্যুত করেছে।
প্রথমে, একটি পরোক্ষ প্রমাণ দেওয়া যাক। ‘বৈরাগিয়ন-ই জন্মস্থান’-এর বিরুদ্ধে আইনী কার্যক্রম শুরু করার জন্য জনৈক মুহাম্মদ আসগর, খতিব এবং মুয়াজ্জিন ৩০ নভেম্বর, ১৮৫৮ সালে একটি আবেদন করেন। সেখানে বাবরী মসজিদটিকে ‘মসজিদ-ই জন্মস্থান’ রূপে অভিহিত করেন। উঠোনের নিকটবর্তী খিলান এবং মসজিদের চৌহদ্দিকে ‘মাকাম জন্মস্থান কা’ নামে অভিহিত করা হয়।
এবার আসা যাক আপত্তির কথায় : বৈরাগীরা উঠোনে একটি বেদি উত্থাপন করেছিল যা আবেদনকারীরা ভেঙে ফেলতে চেয়েছিল। আবেদনকারীরা উল্লেখ করেছে যে : জন্মস্থানের জায়গাটি কয়েকশ বছর ধরে এলোমেলো হয়ে পড়ে রয়েছে এবং হিন্দুরা সেখানে পূজা করত (মাকাম জন্মস্থান কা সদ-হা বড়স সে পরশী পারা রাহতা থা। এহি হিন্দু পূজা করতে থে)। সৈয়দ শাহাবুদ্দিন আবদুর রহমান, পূর্বোক্ত বইটির পৃষ্ঠা ২৯-৩০ দেখুন।
মসজিদটির চৌহদ্দিকে ‘জন্মস্থান’ রূপে উল্লেখ, সেখানে হিন্দুদের পূজা করা, এর দ্বারা বোঝা যায় যে সেখানে হিন্দুদের ধর্মস্থানের সঙ্গে নিশ্চয়ই কিছু যোগসূত্র অবশ্যই ছিল (না হলে হিন্দুরা অহেতুক কোনো মসজিদে গিয়ে কেনই বা পুজো করবে?)। বাবর বা অন্য কারোর নির্দেশেই এটি মসজিদে পরিবর্তন করা হয়।
এই অবস্থায় মন্দিরের উঠোনটি ছাড়া আর কোথাও পুজো করাটা হিন্দুদের বিকল্পের মধ্যে ছিল না। কোনোরকম সঠিক মন্দির ছাড়াই তাঁরা কেন উপাসনা চালাচ্ছিলেন? একমাত্র কারণ হলো এটি একটি পবিত্র স্থান।
জেহাদের ব্যর্থতা
আমার দ্বিতীয় দলিল হাদীকা-ই শুহদা, একজন মির্জা জান দ্বারা রচিত। তিনি ১৮৫৫ সালে ওয়াজিদ আলী শাহের শাসনকালে আমির আলী আমেতাওয়ির নেতৃত্বে জিহাদের একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ও একজন প্রত্যক্ষদর্শী। জেহাদটি হনুমানগড়ি (বাবরী মসজিদ থেকে কয়েকশ গজ দূরে) হিন্দুদের কাছ থেকে পুনরায় দখল করার জন্য সংগঠিত হয়। জেহাদ ব্যর্থ হওয়ার ঠিক পরে বইটি লেখা হয়েছিল এবং পরের বছরে সেটি লখনৌ থেকে প্রকাশিত হয়। রইস আহমদ জাফারি ‘ওয়াজিদ আলী শাহ ঔর উন-কা আহদ’ শীর্ষক তাঁর বইয়ে (লখনৌ: কিতাব মনজিল, ১৯৫৭) এটি নবম অধ্যায় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তবে তিনি যা কিছু অপ্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করেছিলেন তা বাদ দিয়ে দেন এবং কেন তা বাদ দিয়েছেন সে বিষয়ে মন্তব্য থেকে বিরত থাকেন। এখন, দেখা যাক আমরা আমাদের অনুসন্ধান থেকে কী তথ্য সংগ্রহ করেছি : মির্জা জান লিখেছেন যে, “সৈয়দ সালার মাসুদ গাজীর শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে যেখানেই তারা হিন্দুদের মন্দিরগুলি দেখতে পেয়েছিলেন, সেখানেই মুসলিম শাসকরা মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। তারা মুয়াজ্জিনদের, শিক্ষক এবং স্টোর-স্টুয়ার্ডদের নিযুক্ত করেছিলেন ও ইসলামকে প্রবলভাবে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, এবং কাফিরদের পরাজিত করেছিলেন।”
একইভাবে, তাঁরা ফয়জাবাদ ও আবধকেও তিরস্কারের অভিশাপ থেকে মুক্ত করেছিল, কারণ এটি ছিল রামের পিতার এক উপাসনাস্থল ও রাজধানী। যেখানে মহান মন্দিরটি দাঁড়িয়েছিল (রামজন্মস্থানের), সেখানে তাঁরা একটি বড় মসজিদ তৈরি করেছিলেন এবং যেখানে একটি ছোট মণ্ডপ ছিল, সেখানে তাঁরা একটি মসজিদের শিবির স্থাপন করেছিল (মসজিদ-ই মুক্তাসার-ই কানতি)। জন্মস্থানের মন্দিরটি রামের অবতারের প্রধান স্থান, এটির পাশে ছিল ‘সীতা কি রসোই’। মুসা আশিকানের পৃষ্ঠপোষকতায় ৯২৩ হিজরিতে (১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে) রাজা বাবর সেখানে একটি উঁচু মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন! মসজিদটি এখনও ‘সীতা কি রসোই’ মসজিদ রূপে অনেক জায়গায় পরিচিত। সেই মন্দিরটিও তার পাশেই বিদ্যমান (অউর পাহলু মেঁ ওহা দায়ের বাকী হাই) (পৃষ্ঠা ২৪৭)।
এটা মনে রাখতে হবে যে মির্জা জান পুরনো নথিগুলির (কুতুব-ই সাবিকাহ) এবং সমসাময়িক বিবরণের ভিত্তিতে এই সমস্ত লেখার দাবি করেছেন।
আমার তৃতীয় দলিলটি মুরাক্বাহ-ই খুসরবির একটি অধ্যায় যেটি শেখ আজামত আলী কাকোরভি নামি (১৮১১-১৮৯৩) দ্বারা লিখিত ‘তারিখ-ই আবধ’ নামে পরিচিত। যিনি ওয়াজিদ আলী শাহের শাসনকালে ঘটেছিল এমন অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। কাজটি ১৮৬৯ সালে শেষ হয়েছিল, তবে এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে সেটি অপ্রকাশিত ছিল। এটির একটি মাত্র পাণ্ডুলিপি বিদ্যমান এবং তা লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠাকুর লাইব্রেরিতে রয়েছে। ফখরুদ্দিন আলী আহমদ মেমোরিয়াল কমিটি, ইউপি, লখনউয়ের আর্থিক সহায়তায় ডক্টর জাকী কাকোরাভি এটি প্রকাশ করার জন্য এর একটি প্রেস-কপি প্রস্তুত করেছিলেন। কমিটি ‘হনুমানগড়ির পুনরায় দখলের জন্য বৈরাগীদের বিরুদ্ধে জেহাদ’ অধ্যায়কে প্রকাশ থেকে বাদ দেয়।
ফলে ডক্টর কাকোরাভি ১৯৮৬ সালে এই অধ্যায়টি ছাড়াই বইটি প্রকাশ করেছিলেন। পরে অধ্যায়টি আলাদাভাবে প্রকাশিত হয়েছে ১৯৮৭ সালে ‘আমির আলী শহীদ ঔর মারকাহ-ই হনুমানগড়ি’ শিরোনামে, মার্কাজ-ই আদাব-ই উর্দু ১৩৭, শাহগঞ্জ, লখনউ-৩ থেকে।
এটি অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, আমাদের অমনোযোগী ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ এবং ইতিহাসের ক্ষীয়মান অনুভূতি বোধের জন্য ভারতীয় ইতিহাসের এরকম মৌলিক উৎসগুলি বিলুপ্তির পথে। ডক্টর কাকোরাভি নিজেই এই বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত দুঃখপ্রকাশ করেছেন (পৃষ্ঠা ৩)।
লেখক শেখ মুহাম্মদ আজামত আলী কাকোরাভি ‘মন্দির ধ্বংস’ বনাম ‘জন্মস্থান মন্দিরের অনুপস্থিতি’ এই বিষয়ে কিরূপ আলোকপাত করছেন তা একবার দেখা যাক?
তাঁর বইয়ের প্রারম্ভিক অনুচ্ছেদটি মির্জা জানের হাদিকাহ-ই শুহদা থেকে উদ্ধৃত অনুচ্ছেদের অনুরূপ। আমি অনুচ্ছেদটি নীচে প্রায় লেখকের নিজস্ব কথায় তুলে ধরছি : পুরানো নথিপত্র অনুসারে, মুসলিম শাসকগণের মধ্যে প্রথম থেকেই মসজিদ, মঠ এবং ইঁটগুলি নির্মাণ, ইসলাম প্রচার এবং অ-ঐসলামিক অনুশীলন স্থাপনে বিধিনিষেধ জারি একটি নিয়মের মত ছিল। সেইমতো, তারা মথুরা, বৃন্দাবন ইত্যাদি জায়গা (যেখানে কাফেররা অনেক বেশি সংখ্যায় বর্তমান ছিল) থেকে অ -ইসলামের আবর্জনা পরিষ্কার করেছিল। বাবরী মসজিদটি সৈয়দ মুসা আশিকানের পৃষ্ঠপোষকতায়, নির্মিত হয়েছিল ৯২৩ হিজরী সনে, ফৈজাবাদ-আবাধের জন্মস্থান মন্দিরে যা রামের পিতার একটি দুর্দান্ত পূজার জায়গা এবং রাজধানী ছিল। (পৃষ্ঠা ৯)। হিন্দুদের মধ্যে এটি “সীতা কি রসোই” (পৃষ্ঠা ১০) নামে পরিচিত ছিল। হস্তলিপিটির খারাপ অবস্থার জন্য এই প্যাসেজটির কিছু ফাঁক রয়েছে, যা আমি পূরণ করার চেষ্টা করেছি। ডক্টর কাকোরাভি মহান উর্দু ঔপন্যাসিক ফাসানাহ-ই ইব্রতের প্রথম দিকের একটি অংশ বইটিতে যুক্ত করেছেন। এটি মির্জা রজব আলী বেগ সুরুর (১৭৮৭-১৮৬৭), যা আমাদের চতুর্থ দলিলটি প্রদান করে।
এতে বলা হয়েছে যে যেখানে ‘সীতা কি রসোই’ অবস্থিত সেখানে একটি দুর্দান্ত মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। বাবরের শাসনকালে হিন্দুদের মুসলমানদের সমকক্ষ হওয়ার সাহস ছিল না। সৈয়দ মীর আশিকানের পৃষ্ঠপোষকতায় ৯২৩ (?) হিজরী তে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। পরে আওরঙ্গজেব হনুমান গড়ির উপর একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন, বৈরাগীরা মসজিদটির একটি জায়গায় একটি মন্দির স্থাপন করেছিলেন। তারপরে বাবারি মসজিদে যেখানে “সীতা কি রসোই” অবস্থিত, সেখানে খোলামেলাভাবে মূর্তিগুলির উপাসনা করা শুরু করেছিল (পৃষ্ঠা ৭১-৭২) লেখক যোগ করেছেন যে: পূর্ববর্তী সময়ে এটি শাইখ আলী হাজিনের পর্যবেক্ষণ ছিল
বি -বিন করমাত-ই বুটখানঃ ই মারা আই শাইখ!
কি চুন খারব শওয়াদ খানাহ-ই খুদা গার্দেদ
যার অর্থ: হে শেখ! কেবল আমার মূর্তির ঘরের অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করুন, যা অবমাননাকর বা ধ্বংস হয়ে গেলে ঈশ্বরের ঘর (মসজিদ) হয়ে যায়। সুতরাং, পূর্বের অর্থ এই যে মসজিদগুলি নির্মাণের জন্য মন্দিরগুলি ভেঙে ফেলা হয়েছিল, লেখক সুরুর শোক প্রকাশ করেছেন যে সময়ের এতটাই পরিবর্তন হয়েছে যে এখন মসজিদটি মন্দির নির্মাণের জন্য ভেঙে ফেলা হয়েছিল (হনুমানগড়ির উপরে) (পৃষ্ঠা ৭২)
যুক্তিটির সমর্থনে
উপরোক্ত চারটি তথ্যপ্রমাণ আমাদের একটি নিশ্চিত সত্যের দিকে পথনির্দেশ করে :
১. হিন্দু ধর্মকে আঘাত করার ও ইসলাম প্রচারের জন্য মুসলিম শাসকরা মন্দিরগুলি ভেঙে ফেলেন, বড় মন্দিরগুলির জায়গায় বড় মসজিদ এবং ছোট মন্দিরগুলির জায়গায় ছোট মসজিদ তৈরী হয়।
২) অযোধ্যায় ‘জন্মস্থানের মন্দির’ নামে একটি মন্দির ছিল, সেখানে রামের জন্ম হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়, এটির সংলগ্ন স্থান ‘সীতা কি রসোই’ নামে পরিচিত, অংশ ছিল, যা সম্ভবত মূল মন্দিরটিরই অংশ ছিল।
৩) মথুরা, বৃন্দাবন প্রভৃতি স্থানেও মসজিদ দ্বারা মন্দিরগুলি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। ১৫২৮ সালে সৈয়দ মীর মুসা আশিকানের পৃষ্ঠপোষকতায় তথাকথিত বাবরি মসজিদটি নির্মিত হয়, ‘জন্মস্থানের মন্দির’ কে তার নিজস্ব জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়ে। এর নির্দিষ্ট কিছু ধ্বংসাবশেষ কমপক্ষে ১৮৫৫ সাল পর্যন্ত সেস্থানে ছিল।
৪) বাবরি মসজিদটিকে ১৮৫৫ সালের অনেক আগে থেকেই ‘মসজিদ-ই জন্মস্থান’ এবং ‘মসজিদ-ই সীতা কি রসোই’ বলা হত।
৫) বাবরি মসজিদ দ্বারা জন্মাস্থান মন্দির প্রতিস্থাপনের পরেও হিন্দুরা দীর্ঘকাল ধরে রাম জন্মাস্থানে পূজা চালাচ্ছিলেন।
পূর্বোক্ত তথ্যগুলি খাঁটি মুসলিম নথিপত্র থেকে পাওয়া এবং বহুল-ত্রুটিযুক্ত ব্রিটিশদের ‘বিভাজন ও শাসন’ নীতির সঙ্গে এর কোনো যোগাযোগ নেই।
এই সিদ্ধান্তগুলি অপ্রতিরোধ্য এবং এটিকে রামজন্মস্থান ‘মন্দিরের অনুপস্থিতি বনাম ধ্বংসসাধন’ সংক্রান্ত বিতর্কের নিশ্চিত প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করা যেতেই পারে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ফেব্রুয়ারী ২৬, ১৯৯০