কলকাতায় তখন নটী বিনোদিনীর ঢলঢলে রূপের বেশ কদর! সব পুরুষই তাঁকে ছুঁতে চায়। ছোঁয়া কী সহজ!

মুগ্ধ মাড়োয়ারি ঘরের ছেলে গুর্মুখ রায়। ৬৮ বিডন স্ট্রিটে লিজের জায়গায় তিনি তৈরি করলেন পাকা মঞ্চ। ঠিক ছিল নাম দেবেন, বিনোদিনীর নামে।

কিন্তু হল কই!

গড়ে উঠল স্টার থিয়েটার।

সকাতরে বিনোদিনী দাসী লিখছেন স্টার-কথা, ‘‘সকলে চলিয়া যাইলে আমি নিজে ঝুড়ি করিয়া মাটী বহিয়া পিট, ব্যাক সিটের স্থান পূর্ণ করিতাম।… আমার সেই সময় আনন্দ দেখে কে?…সকলে আমায় বলেন যে, ‘এই যে থিয়েটার হাউস হইবে, ইহা তোমার নামের সহিত যোগ থাকিবে।’…কিন্তু কার্যকালে উঁহারা সে কথা রাখেন নাই কেন— তাহা জানি না!’’

বিনির মনখারাপ!

সকলে ঠকিয়েছে তাঁকে!

গিরিশ জানেন কী করে দুলালির মন ভাল করতে হয়। বিনোদকে ‘সতী’ চরিত্রে রেখে লিখলেন ‘দক্ষযজ্ঞ’। নিজে সাজলেন ‘দক্ষ।’

কিন্তু বেশি দিন সুখ সইল না।

বিনোদিনীকে সর্বক্ষণের সঙ্গী হিসাবে দাবি করে স্টারে টাকা ঢেলেছিল যে গুর্মুখ রায়, সেও সরে গেল। ভেঙে গেল ‘স্টার’-এর স্বপ্ন!

এগারো হাজার টাকায় স্টার হস্তান্তরের ব্যবস্থা করলেন দলের কয়েক জনের নামে। কিন্তু নিজে মালিক হলেন না। কেন না, অনুজ অতুলকৃষ্ণকে কথা দিয়েছিলেন, থিয়েটারে যত দিন থাকবেন, কখনও নিজে মালিক হবেন না! মালিকানা বদল হলেও নাটক থেমে রইল না। কিন্তু গিরিশের ভিতরে ভিতরে অস্থিরতা যেন বেড়েই চলেছে।

বুক জুড়ে জ্বালা!

রোগে, শোকে দহিত তিনি!

মুক্তি মেলে না!

কালীঘাটে ফি সপ্তাহে শনি-মঙ্গলবার হাড়কাঠের কাছে বসে সারারাত্তির জগদম্বাকে ডাকতে থাকেন।

উচ্চারণ করেন মাতৃনাম, ‘কালী করালবদনা।’ পথের লোককে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘মুক্তি কীসে গা!’’

গিরিশের দিকে তাকিয়ে হাসছেন ঠাকুর। নাচতে নাচতেই হাসছেন!

ভাব-কোমল নৃত্য!

আর রাম দত্ত খোল বাজাচ্ছেন।

আর পরমহংস নাচছেন।

দু’হাত তুলে ঠাকুর গাইছেনও, ‘নদে টলমল করে গৌরপ্রেমের হিল্লোলে।/ নদে টলমল…।’ গাইতে গাইতেই সমাধি নিলেন ঠাকুর।

তিনি চোখ খুলতে গিরিশ ঠাকুরকে ফের জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘আমার মনের বাঁক যাবে?’’

ঠাকুর বললেন, ‘‘যাবে।’’

যেন বিশ্বাস হচ্ছে না গিরিশের! তিনি বার বার জিজ্ঞেস করছেন। ঠাকুর হেসে তিন সত্যি করলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.