‘যেও না নবমীনিশি’ বলে কবি আকুল হন বটে, কিন্তু বোধনের পরে স্বাভাবিক নিয়মেই তো আসবে বিসর্জনের লগ্ন। এসেছেও। আজ, মঙ্গলবার দশমীতে মোটামুটি দুপুরের পর থেকেই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর্ব। প্রথমে মূলত বাড়ির পুজোগুলির বিসর্জন, পরে বারোয়ারি। তাই জেলায়-জেলায়, মহল্লায়-মহল্লায়, পাড়ায়-পাড়ায় আজ বিষাদের সুর।
প্রতিমা নিরঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে হাওড়া রামকৃষ্ণপুর ঘাট-সহ অন্যান্য ঘাটেও। ঘাটগুলিতে রয়েছে কড়া নিরাপত্তা। পুরসভার কর্মীরা উপস্থিত রয়েছেন। প্রতিমা জলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা তুলে নেওয়া হচ্ছে। ফুল ও অন্যান্য আবর্জনা গঙ্গায় ফেলতে দেওয়া হচ্ছে না।
চুঁচুড়া অন্নপূর্ণাঘাটেও প্রতিমা নিরঞ্জন চলছে। বারোয়ারি ও বাড়ির প্রতিমা আসছে নিরঞ্জনে। দুপুর থেকেই পর পর ঠাকুর দাঁড়িয়ে। এই ঘাটে আজ ৩৪টি প্রতিমার নিরঞ্জন হবে। রয়েছে কড়া পুলিসি নিরাপত্তা। ঘাটে রয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক ও প্রশাসনের কর্তারা। হুগলি চুঁচুড়া পুরসভা এলাকার আটটি ঘাটে চলছে নিরঞ্জন। এছাড়াও জেলার অন্যান্য গঙ্গার ঘাটগুলিতেও চলছে নিরঞ্জনপর্ব। প্রতিমা গঙ্গায় বিসর্জনের আগে ফুল বেলপাতা পুরসভার নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হচ্ছে। প্রতিমার কাঠামোও গঙ্গা থেকে তুলে ফেলা হচ্ছে।
ভাসান শুরু রানাঘাটেও। সেখানেও উৎসবের শেষলগ্ন এসে উপস্থিত। আজ বিকেলবেলা থেকেই সেখানে শুরু হয়ে গিয়েছে ভাসান। নদীয়ার রানাঘাটের বাড়িরপুজোগুলির একে একে ভাসানপর্ব চলছে চূর্ণী নদীতে। ক্রমে আসবে বারোয়ারি।
ওদিকে সকাল থেকেই শিলিগুড়ি লালমোহন মৌলিক নিরঞ্জনঘাটে চলছে প্রতিমা নিরঞ্জন। এখানেও মূলত বাড়ির পুজোগুলিরই নিরঞ্জন চলছে। ঘাট জুড়ে প্রশাসনের রয়েছে একাধিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাপনা। রয়েছে পুলিসি প্রহরা।
জলপাইগুড়ির বৈকন্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো ৫১৪ বছরের। এই পুজোয় রাজপরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি বহু সাধারণ মানুষও বিজয়া দশমীর নিরঞ্জন-উৎসবে অংশ নেন, মহিলারা মাতেন সিঁদুর খেলায়। আজও সেখানে সকাল থেকে সকলে ভিড় জমিয়েছেন। বেলা যত বেড়েছে রাজবাড়ি-চত্বরে বিসর্জন উপলক্ষে ভিড় তত বেড়েছে। রাজপরিবারের রীতি অনুযায়ী, মা’কে রথে করে বিসর্জন ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। রীতি, ভাসানের দিনে দুপুর নাগাদ বন্দুক থেকে গুলি ছুড়ে বিসর্জন-পর্ব শুরু হয়। তবে এ বছর তা করা হয়নি। রাজপরিবারের সদস্যরা রথের দড়ি টেনে প্রতিমা নিরঞ্জনের সূচনা করেন এবার। দুপুরেই তাঁরা রথের দড়ি টেনে রাজবাড়ির পুকুরে মাকে বিসর্জনে নিয়ে যান।
বিসর্জন-পর্ব শুরু দার্জিলিংয়েও। সেখানেও চলছে সিঁদুরখেলা। এখানে দার্জিলিং ও কার্শিয়াংয়ে বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের পুজো খুবই প্রাচীন। বহুজনের অংশগ্রহণে সেখানেও জমে উঠেছে নিরঞ্জনের ক্রিয়াকর্ম।