শিবরাত্রিতে এখানে প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয় ভাঙ

রাত পোহালেই মহা শিবরাত্রি। বাবা ভোলানাথের বন্দনায় মাতবে আট থেকে আশি। এই রাজ্যের পাশাপাশি মহা সমারোহে নীলকণ্ঠের পুজো অনুষ্ঠিত হয় গোটা দেশজুড়ে। সপ্তাখানেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে তার প্রস্তুতি। বছরের এই একটা বিশেষ দিনে বাবার পুজোয় যাতে কোনও ত্রুটি না হয় সেদিকে সদা সতর্ক থাকে ভক্তেরা।

এই বছর শিব চতুর্দশী পড়েছে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ শুক্রবার। সেদিন নগর থেকে মফস্বল, রাজ্য থেকে শুরু করে গোটা দেশের অলিগলির মা-বোনেরা মেতে উঠবে বাবার মাথায় জল ঢালতে। প্রচলিত আছে, এদিন শিবের মাথায় জল ঢাললে যেমন পুণ্যলাভ হয়, তেমনই নাকি কুমারি মেয়েদের সকল মনস্কামনা পূর্ণ করেন তিনি।

কথিত আছে, শিব চতুর্দশী মূলত শিব-পার্বতীর বিয়ের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশের পাশাপাশি মহা শিবরাত্রি পালিত হয় পুণ্যভূমি বারানসিতেও। এখানে শিব-পার্বতীর আরাধনা করা হয় একটু ভিন্ন ভাবেই। কারণ, বাংলা সহ দেশের বিভিন্ন অংশে শিব পুজোর ভোগ হিসেবে ঠাকুরকে দুধ-ডাবের জল, মিছরি সহ নানারকম মিষ্টান্ন দেওয়ার চল রয়েছে। যা পরে প্রসাদ হিসেবে ভক্তদের বিতরণ করা হয়।

হিন্দুদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তীর্থক্ষেত্র হিসেবে সারাবিশ্বের মানুষের কাছে জনপ্রিয় একটি নাম হল বারানসি। কাশির এই শহরে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে আয়োজন করা হয় শিব পুজোর। শিবরাত্রির প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই শুরু করে দেয় এই শহরবাসী। এছাড়াও শিব রাত্রির আনন্দে মেতে ওঠে এখানে আগত হাজার হাজার তীর্থযাত্রীরা। আর এই মহা শিবরাত্রির প্রসাদ হিসেবে এখানে বাবাকে দেওয়া হয় ভাঙ। প্রথমবার শুনলে যে কেউ অবাক হতে পারে। তবে এখানের মন্দির গুলিতে শিবরাত্রির প্রসাদ হিসেবে মহেশ্বরকে দেওয়া হয় ভাঙ। ধারাবাহিক ভাবে সেই চল আজও বহমান। শুধু তাই নয়, বারানসি শহরে যে কয়টি শিব মন্দির রয়েছে সেখানে সব জায়গাতেই প্রসাদ হিসেবে ভাঙের চল রয়েছে। কথিত আছে, বাবা শম্ভু ভীষণ রাগি। তাঁর রাগ কমাতেই ভক্তেরা তাঁকে ভাঙ খেতে দেন। এছাড়াও পুজোর পরে প্রসাদি হিসেবে সেই ভাঙ ভক্তদের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।

মহা শিবরাত্রির দিন শুধু কাশীর মন্দির গুলিতে নয়, ভাঙ পাওয়া যায় স্থানীয় দোকান-বাজার সব জায়গাতেই। একটু খোঁজ করলেই এই শহরে প্রসাদি ভাঙের দর্শন মেলে সর্বত্র। শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে ভাঙ শুধু শরবত হিসেবেই নয়। ভাঙ মেলে আইসক্রিম, বরফি, কুলফি, বিস্কুট প্রভৃতির মধ্যেও।

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে ভাঙের আরও একটি পরিচয় পাওয়া যায়। সেটি হল ‘বিজয়া’। এছাড়াও ভোলানাথকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভাঙ, পান এবং ধুতুরা ফল দিয়ে পুজো করা হয়। যদিও বারানসিতে ভোলে বাবার প্রসাদ হিসেবে ভাঙ-ই প্রসিদ্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.