ধর্মাৎ হি যুদ্ধাৎ শ্রেয়ঃ অন্যৎ ক্ষত্রিয়স্য ন বিদ্যতে – বঙ্গ হিন্দু সেবা সমিতি

যা সনাতন, যা ব্যষ্টির এবং সমষ্টির পক্ষে কল্যাণপ্রদ, তাই ধর্মোচিত কার্য। আর যা ব্যক্তির নিজস্ব গুণ এবং কর্মের পক্ষে অনুকূল তাই স্বধর্ম। প্রবল ইচ্ছাশক্তি, নিজের উপর অসম্ভব শ্রদ্ধা এবং আত্মবিশ্বাস না থাকলে পরে ধর্মপালন, স্বধর্ম রক্ষা এবং স্বীয় কর্তব্য কর্ম সম্পন্ন করা যায় না। এ অতি কঠিন কাজ। আমাদের সুমহান দেশ ভারতবর্ষ দেবভূমি, তাই এখানে যুগে যুগে এরকম কতিপয় ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছে যাঁরা যুগধর্মের ঊর্ধে উঠে জীবনের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রবল প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েও আপন কর্তব্য কর্ম, স্বীয় ধর্মকার্য নিঃশব্দে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে গেছেন। তাই তাঁরা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে ভগবৎতুল্য পূজনীয় হয়ে উঠেছেন। এমনই একজন মহাপুরুষ হলেন রঘুকুলতিলক ভগবান শ্রীরামচন্দ্র। তিনি ভারতবর্ষীয় মাত্রেরই পরমারাধ্য, পরমপূজনীয় – কারণ একাধারে তিনি আদর্শ পুত্র, আদর্শ পতি, আদর্শ ভ্রাতা, আদর্শ শিষ্য, আদর্শ ক্ষত্রিয়, এবং আদর্শ রাজা। 

স্বধর্ম (স্ব-সংস্কৃতিও ধর্মেরই অঙ্গ) পালন এবং রক্ষা মনুষ্যজন্মের সবচাইতে কঠিন পরীক্ষা। তার চাইতে পরধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়া ঢের সহজ। কঠিন, দুর্গম পথকে এড়িয়ে সহজ রাস্তা ধরা মনুষ্যস্বভাবে স্বাভাবিকভাবেই আসে, তার জন্য আলাদা ক’রে আয়াস করতে হয় না। কঠোপনিষদ বলেছেন, ক্ষুরস্য ধারা নিশিতা দূরত্যয়া দুর্গম্ পথস্তৎ কবয়ো বদন্তি। অর্থাৎ, মানবজীবনের চরম উদ্দেশ্য মুক্তি বা আত্মজ্ঞান লাভের পথ ক্ষুরধার, দুর্গম – একথাই কবিরা বলে থাকেন (এখানে ‘কবি’ অর্থে বেদমন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিগণ বুঝতে হবে)। নিষ্কাম হয়ে, অর্থাৎ কর্মফলের চিন্তা না ক’রে স্বধর্ম যথাযথ ভাবে পালন করলে তবেই কর্মযোগে সিদ্ধিলাভ হয়, জন্ম-মৃত্যুর জাঁতাকল থেকে বেরিয়ে পরমার্থ মোক্ষের প্রাপ্তি ঘটে। এ বড় সহজ পথ নয়। এখানে শ্রীমদ্ভগবদগীতার সাবধানবাণী মনে রাখা দরকার : স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ। স্বধর্ম কষ্টকর হতে পারে, এমনকী জীবন দিয়ে স্বধর্ম রক্ষার মুল্য দিতে হতে পারে, কিন্তু পরধর্ম ভয়াবহ কারণ তাতে ভয়াবহ অধোগতি প্রাপ্ত হ’তে হয়, যা থেকে উদ্ধার পেতে লক্ষ লক্ষ বছর সময় লাগে। শ্রীশ্রী গীতা আরও বলেছেন, শ্রেয়ান্‌ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ – অর্থাৎ “স্বধর্ম (নিজ জাতি [অর্থাৎ জন্ম, বংশ, কুল ইত্যাদি] বা স্বভাবের অনুযায়ী কর্মসংবলিত ধর্ম) বিগুণ হলেও (অপর ধর্মের তুলনায় তাতে বাঞ্ছিত গুণের অভাব থাকলেও) সু-অনুষ্ঠিত (অনায়াসে অনুষ্ঠিত, কিংবা লৌকিক দৃষ্টিতে সুন্দর অনুষ্ঠানযুক্ত) পরধর্মের চেয়ে শ্রেয় (অধিক হিতকর)।”

সনাতনী বাঙ্গালীর আজ বড়ো দুর্দিন। একদিকে তার ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যা অন্যদিকে অর্থনৈতিক অনুন্নতি। অর্দ্ধেক মাতৃভূমি সে আগেই খুইয়েছে,  হোমল্যান্ড পশ্চিমবঙ্গেও চারদিক থেকে কোণঠাসা। এই দুরাবস্থার অবসান ঘটাবার লক্ষ্যে কাজ করার প্রত্যাশা নিয়ে জন্ম নিল আরো একটি সংগঠন- বঙ্গ হিন্দু সেবা সমিতি। শিলিগুড়ি ভিত্তিক এই সংগঠন আগামী সময়গুলোতে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা ভারতব্যাপী সনাতনী বাঙ্গালীর পুনুরুজ্জীবন এর জন্য কাজ করে যাবে বলে প্রত্যয়ী।

স্বধর্মমপি চাবেক্ষ্য ন বিকম্পিতুমর্হসি।

ধর্মাৎ হি যুদ্ধাৎ শ্রেয়ঃ অন্যৎ ক্ষত্রিয়স্য ন বিদ্যতে।।

Arnab

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.