পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন কারণে বিজেপি প্রায় ৭-১০% ভোট হারিয়েছে।
১) তিন তালাক বিরোধী আইন পাশ করাতে বদ্ধপরিকর বিজেপিকে দেখে যে ১০-২০% মহিলা ভোটার ভোট দিয়েছিল, তারা এবার আর ভোট দেয়নি।
কারণ আইন তো পাশ হয়েই গেছে, এখন আর তা পাল্টাবে না। আরও একটা কারণ হল, মুসলিম বাড়িতে পুরুষদের একচেটিয়া প্রচার যে, বিজেপি ক্ষমতায় এলে “বাবরি মসজিদ”-এর মতো অন্য বিতর্কিত মসজিদগুলোকেও মন্দির বানাবে! তা ছাড়া CAA , NRC-র ভয়ও ছিল! বিজেপি এই কারণে ৩-৬ % মুসলিম মহিলা ভোট বিজেপি হারিয়েছে।
২) পেনশনভোগী বা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রেখে তার সুদের টাকায় যাদের জীবন চলে, তারাও অনেকে ভোট দেয়নি, কারণ বিজেপি প্রভিডেন্ট ফান্ডের এর সুদ ও ব্যাঙ্কের সুদ কমিয়েছে বলে। তার সংখ্যাও ২-৪% এর মতো।
৩) কিছু পুরনো বিজেপি কর্মী ভোট দেয়নি, অন্য দল থেকে আসা নব্য বিজেপি প্রার্থীদের বোলবোলার কারণে ! তার পরিমাণও ২% এর মতো !
৪) বিগত দশ বছরে বাঙলার সব প্রিন্ট ও টিভি মিডিয়াকে TMC কিনে নিয়েছে, তারা TMCর পক্ষে প্রচার করেছে। আর বাঙালিদের বেশির ভাগই ডিগ্রিধারী হলেও, সাজেশন মুখস্ত করে পাশ করা, তাদের সঠিক চিন্তার ক্ষমতা নেই, বোঝার ক্ষমতা নেই, কোনটা কৌশলী ফন্দি (ম্যানিপুলেশন) কোনটা নয়! তার উপর বাঙালি সুবিধাবাদীও। যে সুবিধা আছে, সেটা হারাতে চায় না, তাই সবাই সরকারি দল করে, এমন কি উদার লোকেরাও। যারা এক কালে বামপন্থী ছিল, তারাই এখন তৃণমূল। অর্থনীতির মূল্যায়ন বাঙালি করে না।
৫) বিজেপি বাংলায় বাংলা ভাষায় বাঙালিকে সব করতে দিক! বিজেপি-র নেতা সৃষ্টি হওয়ার তেমন সুযোগ বাংলায় ছিল না, তাই দিল্লি সাহায্য করেছে। এমনকি প্রার্থীর নামও বাংলায় বের করেনি। এখন নেতাও আসবে, সব পাল্টাবে।
৬) বিজেপি ভোটাররা ভীতু বলে অনেকে করোনার ভয়ে ভোট দিতে যায়নি, কিন্তু TMC তার ভোটারদের বুথমুখো করিয়েছে।
এবার দেখা যাক তৃণমূল এতো বেশি ভোট কেন পেল ?
১) মুসলিমরা একচেটিয়া শুধু তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে; তারা জানত, মোর্চা ক্ষমতায় আসবে না, কাজেই বিজেপি যদি জিতে যায়, তাদের লাভ হবে না , এই ভয়ে তারা CPIM CONG ও ISFকে ভোট না দিয়ে TMCকেই দিয়েছে। আর বাংলায় মুসলিমদের বেশিরভাগ অংশ সরকারি সাহায্য পেয়েছে করোনার সময়ে; তারা ভেবেছে, এটা মমতা দেয়, তাই সেই সুবিধা বজায় রাখতে এরা ভোট দিয়েছে TMCকে।
২) প্রায় ৫-১০% হিন্দু গরিবও সরকারি সুবিধা পাবার আশায় TMCকে ভোট দিয়েছে, যারা করোনা না হলে হয়ত বিজেপিকেই দিত!
৩) তা ছাড়া প্রশান্তকিশোরের বিজ্ঞান ভিত্তিক এনালিসিস ও পারফেক্ট ম্যানিপুলেশন-এর নিয়ম মেনে কাজ করেছে TMC
কিন্তু বাঙালি আরও গরিব হবে, আরও সরকারি সাহায্যের উপর নির্ভশীল হবে, ও একসময় মাওবাদীদের খপ্পরে পড়তে পারে– ২০১১য় আমি এটা ভবিষ্যৎবাণী করেছিলাম। এই নির্বাচনের আগেও বলেছিলাম যে, বিজেপি এবার বিরোধী দল হবে, বাকি সব দল মিলে সরকার বানাবে! সবটা অবশ্য মেলেনি!
তৃণমূল তৃতীয়বার সরকার গড়ছে। তবে তৃণমূলের পক্ষে কর্মসংস্থান করে বেকার কমাবার কোনো সুযোগ নেই। কেননা বাংলায় কেউ বিনিয়োগ করবে না। সুযোগ পেলেই বাংলা ছেড়ে পালাবে। করোনা কেটে গেলে কেন্দ্র আর ঢালাও সাহায্য দেবে কি? সবাইকে ফ্রিতে করোনার টিকাও কেন্দ্র দেবে না। বাংলা ঋণে জর্জরিত। নতুন ঋণ করে TMC কী করে মানুষকে রেশন দেবে? নতুন করে কী ভাবে সরকারি চাকরি বাড়াবে? টাকা কই ? কাজ দিতে পারবে না, রেশন দিতে পারবে না -মানুষকে কী করে শান্ত রাখবে TMC ?? কাজেই বিজেপির ক্ষমতা লাভ হবে কিনা জানি না, তবে TMC র দুর্দিন আসবেই ও দলটা হারিয়েও যাবে, TMC র জায়গায় আসবে ইসলামিক ও মাওবাদী দল ! আব্বাস ভোট না পেলেও,মুসলিমদের কাছে বিকল্প হিসাবে পরিচিত হয়ে গেছে। তবে একথা ঠিক, করোনা না হলে বিজেপি আরও অনেক বেশি ভোট পেত !
মৃণাল মজুমদার, বার্লিন, ২১:২৮, ০২.০৫.২০২১