প্রথমে অর্থনীতি থেকে শুরু করি l মুদ্রাস্ফীতিকে অটলজির মতো মোদীজিও কোনদিন বাড়তে দিতে রাজি ছিলেন না l কারণ মুদ্রাস্ফীতি একজন মানুষের সারা জীবনের পরিশ্রমকে কয়েক বছরেই মূল্যহীন করে দিতে পারে l ইন্দিরা গান্ধীর সোভিয়েত অর্থনীতির (Economy) মডেল কিভাবে 33% পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতি এনে দিয়ে ছিল তা আমরা জানি l যার ফলশ্রুতিতে একদিকে, মানুষের সারাজীবনের সঞ্চয়ের অর্থের মূল্য এক বছরে প্রায় 25% কমে যায় l অর্থাৎ ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা দাম এক বছরেই অনেকটা কমে যায় l অন্যদিকে বেকারত্ব সেই বছর ছিল সর্বোচ্চ l 2019 সাধারণ নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধী যে 45 বছরের বেকারত্বের রেকর্ড ভাঙার যে গল্প বলেছিলো, এটা সেই রেকর্ড l
কিন্তু প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন বাম ছাত্রনেতা তথা আজকের নোবেল লরিয়েট অর্থনীতিবিদ শ্রী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, রঘুরাম রাজন, JNU এর অধ্যাপিকা জয়তী ঘোষ এবং অন্যান্য কলকাতা ও যাদবপুরের অধ্যাপকরা অনেক দিন ধরেই টাকা চাপিয়ে গরিবদের দেবার কথা বলছেন, যাতে ভারত সরকার বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি l এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, বাম অর্থনীতিবিদদের জনসংযোগ ও বিপণন পদ্ধতি অনেকটা বহুজাতিক নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানির মতো l এঁরা এবং এঁদের অনুসরণকারী রাজনৈতিক দল, গনসংগঠন, সংবাদমাধ্যম ও সমর্থকরাও একই সঙ্গে একই বক্তব্য ম্যাসাচুসেটস, হার্ভার্ড থেকে JNU, ISI, JU সর্বত্র একই বক্তব্য রাখেন l ফেব্রুয়ারীতে MIT র ডঃ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দোপাধ্যায়, JNU এর ডঃ জয়তী ঘোষ (Dr. Jayati Ghosh) , ISI কলকাতার ডঃ অভিরূপ সরকার থেকে কলকাতা পুরসভার একজন কাউন্সিলর একসুরে টাকা ছাপিয়ে জনগণকে বিতরণের জন্য জনমত তৈরি করতে থাকেন l দেশে লোকডাউন শুরু হতেই এই চাপ বাড়তে থাকে l
ওদিকে, সরকার গঠন হতেই 2014 তে মোদীজি জনধন একাউন্ট খুলে তা আধার নম্বরের সঙ্গে জুড়ে দেন l এরপর বিভিন্ন বীমা, উজালা যোজনা, কৃষি যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত ইত্যাদি সামাজিক প্রকল্পের থেকে উনি প্রকৃত গরিবদের সঠিক তথ্য ও সংখ্যা সরকারের খাতায় তুলে নেন l (দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বাংলার মানুষ এই প্রকল্পগুলি থেকে বঞ্চিত হয় রাজ্য সরকারের উদাসীনতা l )
মার্চ 2020 লোকডাউন হতেই নির্মলাজী, সরাসরি ওই খাতায় প্রায় 80 কোটি মানুষকে সরাসরি টাকা পাঠানো শুরু করেন তাঁদের জনধন একাউন্টএ 100 দিনের কাজ, কৃষি যোজনা, উজালা, আয়ুষ্মান ভারত ইত্যাদি প্রকল্পে l এছাড়া বিনামূল্যে গরিবদের খাদ্য পাঠাতে থাকেন, যা তাঁর বিরোধীদের কাছে একটা গুগলির মত l কিন্তু এই টাকা পাঠাতে উনি একটা টাকাও ছাপাননি l নির্মলাজীর ঘোষণার ঠিক পরের দিন, RBI গভর্নর ব্যাংকের সুদ ও বিভিন্ন মোরাটোরিয়াম বিষয়ক কিছু পরিবর্তন এনে 1.7 ট্রিলিয়ন টাকার সংস্থান করে দেন সরকারকে l এর ফলে টাকা চলে গেল গরিবের ঘরে, কিন্তু টাকার দাম কমলো না l
এবার, বামপন্থী অর্থনীতিবিদরা অনেক ভেবে আরও একটি নতুন আকাশবাণী শোনালেন l ওনারা জানতেন পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যা কেন্দ্রকে বিপদে ফেলতে পারে l দেশের সব পরিযায়ী শ্রমিককে বাড়ি ফেরাতে গেলে কয়েক দিনের মধ্যে অতিমারীতে ছেয়ে যাবে l আর না পাঠালে তারা কাজ হারিয়ে, আশ্রয় হারিয়ে বিপদে পড়বে l তাই শুরু করলেন পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী l
কিন্তু এই মুহূর্তে মূল প্রশ্ন, যে রাজ্যের গত 43 বছরের সব অর্থমন্ত্রীই বিদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি, যে রাজ্য গত 30 বছরে দুজন অর্থনীতির নোবেল লরিয়েট দিলেন, সে রাজ্য থেকে কটা ট্রেন অন্য রাজ্যে যাচ্ছে শ্রমিক নিয়ে l শ্রমিক স্পেশাল বা মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায় করোনা স্পেশাল একমুখী কেন?
পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে লিখতে গিয়ে প্রথমেই আমার মনে পরে যাচ্ছে নীল চাষের সময় বাংলার কৃষকদের নিয়ে গর্জে ওঠা সেই দুই প্রবাদপ্রতিম মানুষের কথা l প্রথমজন, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দ্বিতীয়জন, দীনবন্ধু মিত্র l অথচ, গত 43 বছর এই বাংলা থেকে কাজ হারিয়ে যারা, ‘দাদন ‘ নিয়ে, গুজরাট, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ ভারতে গিয়ে বঞ্চিত, নিপীড়িত, শোষিত হয়েছেন যে শ্রমিককুল, তাদের হয়ে আজকের কোন মূলস্রোতের সংবাদপত্র লিখেছে? যারা শ্রমিকপ্রেমী ও উদার বলে নিজেদের বরাবর দাবী করে এসেছেন তাঁদের ভূমিকা কি ছিল?
যে নরেন্দ্র মোদীকে এই চীনের ল্যাবরেটারী থেকে পালানো ভাইরাসের জন্য উদ্ভূত সবকিছুর জন্য দ্বায়ী করা হচ্ছে, তিনি MGNREGA র মজুরি প্রথম দিনই বাড়িয়েছেন গরিবদের হাতে অর্থ তুলে দেবার জন্য এবং নির্মলাজী ঘোষণা করেছেন, লোকডাউন 3.0 র পর যেসব শ্রমিক ফিরে এসেছেন, তাদেরও এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে l
কিন্তু শ্রমিকপ্রেমী পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকরা আজ পরিযায়ী কেন? কবে থেকে আমরা পরিযায়ী? ছোটো শহর ও গ্রামের অর্থনীতির ভেঙে পড়লো কিভাবে? দেশভাগের পরেও জলসম্পদ, খনিজ সম্পদ, শিল্পাঞ্চল, শিক্ষাঙ্গন কোন কিছুরই তো অভাব ছিল না? দেশের 40% জিডিপি দিত এই রাজ্যে l তাহলে কি হল? এই প্রবন্ধে শুধু জেলার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ইতিহাসের একটা সংক্ষিপ্ত তথ্য দি l
বামপন্থীরা দাবী করতেন, গ্রামোন্নয়নে নাকি রাজ্য এক নম্বরে এবং সেই জন্যই নাকি পুরো গ্রামবাংলা জ্যোতিবাবুকে দশকের পর দশক ভোট দেয় l গ্রাম মানেই স্বর্গ l কিন্তু যখন নব্বইয়ের দশক থেকেই, 40% অদক্ষ শ্রমিক পাঠায় আমাদের রাজ্য l অদক্ষ শ্রমিক মানে এমন শ্রমিক যাদের দিয়ে যেকোন কায়িক শ্রম করানো যায় l অদক্ষ শ্রমিকদের অবস্থা অনেকটা সার্কাসের বাঘ সিংহ কিংবা বাদর খেলার বেঁধে রাখা বাদরদের চেয়ে একটু ভালো, কারণ এরা অন্ততঃ কথা বলতে পারে,যদিও কেউ শোনে না l দাদন দিয়ে নিয়ে যায় এদের দালালরা l এদের চলতি কোথায় ‘মালদা লেবার’ বলা হয় l দিনের শুরুতে কাজ শুরুর আগে নির্মাণ সংস্থার ইঞ্জিনিয়াররা বলে, “তিন লরি কংক্রিট, দুই ব্যাগ চুন, তিন ড্রাম জল ও 15 টা ‘মালদা’ চাই“ l এদের PF কাটা হয় অন্য নামে l এখানে ব্যাপারটা একটু বিস্তারে বোঝানো প্রয়োজন l মূল ক্লায়েন্ট কোম্পানি তার ঠিকাদারদের ন্যূনতম ছয় মাসের জন্য শ্রমিক আনার অনুমতি দেয় l কিন্তু ঠিকাদাররা দাদন দেয় 50 দিনের l দাদন বলতে সেই শ্রমিকপ্রথা যা নীলকর সাহেবরা এদেশে চালাতো নীল চাষের সময় l 50 দিন পর দালালরা আগের শ্রমিকদের পরিচয়পাত্রেই নতুন শ্রমিকদের প্লান্টে ঢুকিয়ে দেয় l লক্ষ লক্ষ মানুষের এই কর্মযোগ্যে এই ভয়ঙ্কর শ্যামবর্ণ মানুষগুলির ফটো দেখে চেনা দুস্কর ,পরিচয়পাত্রের মানুষ আর সামনের জন এক নাকি l এর ফলে, কালামের PF জমা পরে সালামের খাতায় l আর দুজনেই আদৌ জানে না যে তাদের নামে আদৌ কোন PF জমা পড়ছে l এরপর 50 দিন পর এলো মাহাতো l কাজ করছে সেই সালামই খাতায় কলমে l কিন্তু PF পায়না কেউই l এরা তো জানেই না যে সরকারের ঘরে এদের নামে প্রভিডেন্ড ফান্ড জমা পড়ছে l আর ওই বাকি মজুরি তিন ঠিকেদারের হাত ঘুরে শ্রমিকের হাতে আসে মাত্র 30 টাকা l গত 43 বছরে এমন একদিন পাওয়া যাবে না সম্ভবত, যেদিন হাওড়া থেকে পশ্চিম বা দক্ষিণগামী বা সেই স্থান থেকে হাওড়াগামী ট্রেনের অসংরক্ষিত কামরায় এমন একজনও শোষিত, নিপীড়িত, লাঞ্ছিত অসহায় শ্রমিকরা যাতায়াত করেনি l
কিন্তু গণশক্তি বা আনন্দবাজারে একটা প্রতিবেদন পড়েছে বাঙালী এদের নিয়ে? এই শ্রমিকরা অধিকাংশই তো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের l কিন্তু বাংলায় সংখ্যালঘুদের স্বঘোষিত ত্রাতা তৃণমূল কংগ্রেসের পত্রিকা জাগোবাংলায় বিশিষ্ট শ্রমিকনেতা সুব্রত মুখার্জী, পূর্ণেন্দু বোস, দোলা সেন বা শোভন চাটুজ্জেরা একটা লাইন এদের জন্য কোনদিন লিখেছেন? সলিল চৌধুরী একটা গান বেঁধেছেন এদের জন্য? উৎপল দত্ত বা রূদ্রপ্রসাদ বা ব্রাত্য বসু একটা নাটক লিখেছেন? কৌশিক সেন বা চন্দ্রিল ভট্টাচাৰ্য টিভিতে গলা তুলেছেন এদের জন্য? মৃনাল সেন, অপর্ণা সেন কোন ছবি বানিয়েছে এদের দুঃখ নিয়ে? MIT র আব্দুল লতিফ জামিল পভার্টি অ্যাকশন ল্যাবে নোবেল লরিয়েট অ্যাকশন ল্যাবে অভিজিৎ ব্যানার্জী সারা জীবন লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকা নিয়ে এতো কাজ করেছেন l কিন্তু তার নিজের ‘ ত্যাগ করা’ মাতৃভূমির কোটি কোটি অভাগা মানুষের দশকের পর দশকের এই দুর্দশা বিশ্বকে শুনিয়েছেন একবারও ? তাহলে এখন কেন? এই অভাগাদের সঙ্গে তো প্রতিদিন দেখা হয় আপনাদের l রাস্তা, মেট্রো রেল প্রকল্প থেকে আমার আপনার মতো শিক্ষিত-ভদ্রলোকদের বিলাসবহুল আবাসনের নির্মাণে সময় ঘামের সঙ্গে রক্ত ঝরাতে কোনদিন দেখেননি অভিজিৎবাবুরা?
এখন প্রশ্ন, এরা অন্য রাজ্য যাচ্ছে কেন? আগে এরা যেত পশ্চিম আর দক্ষিণের উন্নত রাজ্যে l এখন কাশ্মীরেও আপেল কুড়োতে যাচ্ছে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে l ভাবা যায়? এর অর্থ, কাশ্মীরের মতো রাজ্যে দৈনিক মজুরি ও সুযোগ পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অনেক বেশী l তাহলে যাদবপুর বা JNU এর অতিবামপন্থী ছাত্ররা কাশ্মীরের জন্য না কেঁদে তাদের পশ্চিমবঙ্গের জন্য কাঁদে না কেন?
এখানে, আমাদের রাজ্যের কাজের সুযোগ নিয়ে আমাকে আলোচনা করতে হয় l এব্যাপারে শিল্পহীন পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) ছোট শহর ও গ্রামের অর্থব্যাবস্থার ব্যাপারে আলোচনা প্রথমে যাক l
- সেচ : সেচ প্রথম রাস্তা যা গ্রামের অর্থনীতিকে বাচাতে পারে l কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে যেহেতু সেচ দপ্তর বাম আমলে RSP র হাতে ছিল, সেই জন্য অসীমবাবু সেচের পিছনে খরচা করতেন না l আমাদের রাজ্যে জলসম্পদ উদ্বৃত্ত l কিন্তু সেই জল ক্ষেতে পাঠাতে হবে তো? এব্যাপারে আমাদের দুইজন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা না করলেই নয়, যারা সেচের জন্য গোটা ছয়েক ড্যাম/ ব্যারেজ দিয়ে গেছেন আমাদের l বিধান রায় ও প্রফুল্ল সেনের দৌলতে পশ্চিমবঙ্গ বেশ কোটি জেলাপ্রকল্পে কেন্দ্রের পূর্ণ সহযোগিতা পায় l যেমন, তিস্তা, জলঢাকা, মহানন্দা, ডিভিসি, কংসাবতী ( মুকুটমণিপুর ), রূপনারায়ণ, ফারাক্কা ইত্যাদি ( যা গুজরাট পায় নি) l কিন্তু বামসরকার এসে ড্যাম / ব্যারেজ থেকে ক্যানেল বানিয়ে ক্ষেতে জল পাঠানোর প্রকল্প বন্ধ করে দেয় l ফলে যে জমিতে বছরে চার বার চাষের কেন্দ্র এতো টাকা খরচা করে এতো বড় বড় প্রকল্প বানালো, সেখানে হতভাগা চাষীকে থাকতে হয় সেই বর্ষার ভরসাতেই l যে জেলায়, ভূগর্ভস্থ জলস্তর উপরে সেখানে মানুষ যথেচ্ছ ভাবে জল তুলে চাষ করে নিজেদের পানীয় জলকে আর্সেনিক, ফ্লোরিনে ভরিয়ে দিল l আর যেখানে সেই সুযোগ নেই সেখানে চাষের মরসুমের শেষে একটাই রাস্তা l দাদন নিয়ে পরিযায়ী হয়ে যাও l
এর মধ্যে নয়ের দশকে তিস্তার জন্য মাঝে একবার কাজ শুরু হয় l কিন্তু সিপিএম সমর্থিত ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন নিজেদের আনুগত্য প্রমানে কিছু সৎ ইঞ্জিনিয়ারের নামে মিথ্যে FIR করে l IPS নজরুল ইসলাম কোন সত্যাসত্য বিচার না করে ইঞ্জিনিয়ারদের ধরপাকড় শুরু করে এবং জেলে অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় নামে একজন আপাদমস্তক সৎ ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যু হয় l ভয়ে, কাজ বন্ধ হয়ে যায় l এরপর 2009 লোকসভা ভোটে হেরে, অসীম দাশগুপ্ত আবার তিস্তা প্রকল্পে হাত দেন l সেবার কেন্দ্র প্রায় 1700 কোটি টাকা দেয় AIBP ফান্ড থেকে l কিন্তু 2011 তে তৃণমূল সরকার জমির দোহাই দিয়ে 95% টাকা ফিরিয়ে দেন l এছাড়াও উত্তরবঙ্গের কিছু জীবনদায়ী পরিকাঠামো প্রকল্প তথা NH 34 জাতীয় সড়ক, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ ব্রিজ ও রায়গঞ্জ AIIMS উনি বন্ধ করে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেন আজকের বাংলার সরকার, যার জন্য উত্তরবঙ্গ তৃণমূলকে একটি আসনও দেয়া নি 2019 এ l
- ফসলের বাজার ও রাজনৈতিক ফোঁড়ে : এবার আসি চাষের কাজে আয় l যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিবাম ছাত্ররা গত কয়েক দশক বিদেশী বিনিয়োগের বিরোধিতা করে নরসিমা রাও, অটলবিহারি বাজপেয়ীর মুণ্ডপাত করে এসেছে l অথচ, 2013 তে যখন তৃণমূল কংগ্রেস যখন খুচরো ব্যবসায় বিদেশী বিনিয়োগের বিরোধিতা করে কেন্দ্রের সরকার ছেড়ে বেরিয়ে এলেন, তখন সব বামপন্থী দল এর মমতাকে সমর্থন করে l পাশ করেই যাদবপুরের কমরেডরা মাইক্রোসফট, ইন্টেল, সিসকো, সান মাইক্রোসিস্টেম ইত্যাদি মার্কিন কোম্পানিতে যোগ দেন এবং দেশ ছাড়েন l তাহলে প্রশ্ন হল, তুমি তোমার বিদ্যা যদি বিদেশী কোম্পানিকে বেঁচতে পারো, আমাদের গরিব চাষীদের জন্য কেন সেই রাস্তা আটকে দেবে? আসলে জ্যোতিবাবু থেকে মমতা ব্যানার্জী সবাই চেয়ে এসেছে, চাষীরা তাদের ফসল কিছু বিশেষ লাইসেন্সপ্রাপ্ত রাজনৈতিক ফড়েদের বেচুক l ফলে, কৃষিতে লাভের মুখ দেখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে এই রাজ্যে l কৃষিশ্রমিকদের কাছে বাংলায় চাষ করার চেয়ে কাশ্মীরে আপেল কুড়োনোই লাভজনক মনে হয় l 1991 তে দেশের পুরো অর্থব্যাবস্থাকে নরসিমা রাও শৃঙ্খলমুক্ত করেন l কিন্তু বাদ রেখেছিলেন কৃষিকে l গত সপ্তাহে গুজরাটের সেই চাওয়ালা লাইসেন্স রাজের শৃঙ্খল থেকে দেশের কৃষকদের মুক্ত করলেন l
- ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প : এক্ষেত্রে মূল সমস্যা চারটি l এক, এদের বাজার নেই l কারণ এদের ক্রেতা মূলত বড় কর্পোরেট কিংবা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা l কিন্তু বাংলায় দুটিরই হুগলী নদীতে সলিল সমাধি করে এসেছেন বঙ্গেশ্বর জ্যোতি বসু l যেটুকু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় আছে, তা পেতে রাজনৈতিক আনুগত্য অবশ্যাম্ভাবী l তাঁর উপর সড়ক নেই, পরিকাঠামো নেই, জল নেই, বিদ্যুতের দাম সর্বোচ্চ l সরকারি সাহায্য কিছু বিশেষ লোকের জন্য l মোদীজি মুদ্রা লোনের ব্যাবস্থা করেছেন স্বাধীনতার 70 বছর পর l এতদিন মহাজনের থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে ফড়েদের বেঁচে এদের হাতে কিছুই থাকতো না l কিন্তু রাজ্যে জনধন, আয়ুষ্মান উজালার মতো এক্ষেত্রেও রাজ্যের অন্তর্ঘাতমূলক রাজনীতির স্বীকার হয় রাজের গরিব l
- ছোটো শহরের অর্থনীতি পুরো ভেঙে পড়া : দেশ স্বাধীনতার পর ডঃ বিধান রায়ের দৌলতে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে বেশ কটি শিল্প নগরী উপহার দেয়, যা গুজরাটের মতো রাজ্যের কপালে জোটেনি l সল্টলেক, খড়্গপুর, কল্যাণী, দুর্গাপুর, হলদিয়া l একসময়, সদর শহরের জীবনযাপন এতো সুন্দর ছিল, যে উত্তমকুমারের সময় বহু ছবি এই ছোটো শহরগুলির উপর ছিল, কারণ সেখানে মানুষ একটা সুন্দর জীবন কাটাতো l সরকারি কর্মচারী, ডাক্তার, অধ্যাপক, ইঞ্জিনিয়াররা এখানকার অর্থনীতি সচল রাখতো বাড়ি ভাড়া, পড়াশুনা ইত্যাদি খাতে খরচা করে l জ্যোতিবাবু ইংরেজি তুলে, বিদ্যালয়ে রাজনীতি অনুপ্রবেশ ঘটালে ও চিকিৎসা ব্যাবস্থার বারো বাজালে, এই সরকারি কর্মীরা তাদের সন্তানদের কলকাতার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করে, নিজেরা ছোটো শহরগুলিতে সরকারি মেসে থাকা শুরু করে l এতে তাদের মাইনের অধিকাংশ তারা কলকাতায় খরচা করতে থাকে l ছোট শহরের অর্থনীতি মার খায় l তার উপর শিল্পের মৃত্যু l এখানেই স্থানীয় বাজার ভেঙে পরে l মমতা ব্যানার্জী সেই ব্যাবস্থার যে কোন উন্নতি করেছেন, সে দাবী তার নিজের দলের সবচেয়ে অনুগত কর্মীরাও করে না l ফলে জেলা অর্থনীতি সেই তিমিরেই l
এবার আশি পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্যের ব্যর্থতায় l গত নয় বছর শুধুমাত্র রাজ্যের কোন সঠিক পুনর্বাসন (R & R) নীতি না থাকায়, রাজ্য প্রায় তিন লক্ষ কোটির কাছাকাছি বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়েছে, যা এই রাজ্যের কর্মসংস্থানের অবস্থা রাতারাতি বদলে দিতে পারতো l এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য
- অমৃতসর কলকাতা শিল্প করিডোর
- দিল্লি কলকাতা ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডোর
- চারটি স্মার্ট সিটি
- 42 টি স্মার্ট ভিলেজ
- সাগর ও কুলপির গভীর সমুদ্র বন্দর
- রাজের সব জাতীয় এবং রাজ্য সড়ক সাম্প্রসাসন
- জোকা- বি বি দী বাগ মেট্রো
8 গড়িয়া এয়ারপোর্ট মেট্রো
- দমদম বারাকপুর কল্যাণী মেট্রো
- দমদম বারাসাত মেট্রো
- দমদম দক্ষিনেশ্বর মেট্রো
- ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো
শিল্পক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ধাক্কা সফটওয়্যার শিল্পের পতন l রাজ্যের SEZ ও FDI বিরোধী নীতির জন্য কোন সফটওয়্যার শিল্প আসেনি l যারা ছিল, তারাও পালাচ্ছে l সল্টলেক সেক্টর 5 এবং নিউটাউন এর বহু অফিস খালি পড়ে রয়েছে এখনো l বহু শিক্ষিত হয় চাকরি হারাচ্ছে নয় রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে l
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দাবী করেন, ওনার সরকার,
- এক কোটি লোককে চাকরি দিয়েছেন l উনি দাবী করছেন,
2 100 দিনের কাজে পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বরে l
- রাজ্যের নয় কোটি মানুষ নাকি 2 টাকা কেজি চাল পায় l
তাহলে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক সরবরাহে সবার উপরে কেন? দারিদ্র এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যে বাঙালী আজ কাশ্মীরের জাল্হাদদের বন্দুকের ভয় উপেক্ষা করে সেখানে আপেল কুড়োতে গিয়ে খুন হচ্ছে l আর এই সার্বিক ব্যর্থতা ঢাকতেই তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিম একসাথে, প্রথম দিন থেকেই এই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে সরব হয়েছে কেন্দ্রকে l কারণ তিনি জানেন, বেড়াল যেকোন দিন ঝুলি থেকে বেরিয়ে মালিকেকেই আক্রমণ করবে l তার আগেই কুম্ভীরাশ্রু দেখিয়ে যদি অপদার্থতা, ব্যর্থতা ও নির্মমতার তেতাল্লিশ বছরের ইতিহাসকে বিকৃত করে, পুরো দ্বায়িত্ব নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) ও অমিত শাহএর (Amit Shah) উপর চাপানো যায় l কারণ এই পরিযায়ীদের অধিকাংশই তাদের বরাবরের টার্গেট ভোটার l
শেষে বলি, করোনা-উত্তর পৃথিবী অন্য রূপে ধরা দেবে l দেশের সব রাজ্য কেন্দ্রের নতুন নীতির সঠিক ব্যাবহার করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, কৃষি, প্রযুক্তিতে প্রচুর বিনিয়োগ করবে l আমরা কম্পিউটার বা উদার অর্থনীতির বিরোধিতা করে যে বিপদ আগে ডেকে এনেছি, তা যেন আবার না ডেকে আনি l নাইলে একসময়ের দেশের আর্থিক ভরকেন্দ্রকে গাইতে হবে সেই মান্না দের বিখ্যাত গানের কলি, ‘….রাজপ্রাসাদে নিশুতি রাত গুমড়ে কাঁদে….. ‘ সেদিন l
লেখক : কৌটিল্য