চিনের লালচোখকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লাদাখে (Ladakh) বড় সাফল্য পেল ভারতীয় সেনাবাহিনী। গালওয়ান নদীর উপর উঁচু খাড়া পাহাড়ের কোলে বেইলি ব্রিজ বা অস্থায়ী ব্রিজ বানালেন সেনার ইঞ্জিনিয়াররা। এখানে সমতল জমি প্রায় নেই। খুব সংকীর্ণ গিরিখাত। ভরা গ্রীষ্মেও হিমাঙ্কের খুব কাছে তাপমাত্রা। প্রবল ঠান্ডা এবং চিনা হুমকি অগ্রাহ্য করেই সাফল্যের সঙ্গে ৬০ মিটার লম্বা এই বেইলি ব্রিজ বানাতে সক্ষম হয়েছে ভারতীয় সেনা। এর ফলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছে ভারতীয় সেনার ফরোয়ার্ড পোস্টগুলিতে ভারী যুদ্ধাস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম, রসদ, সেনা, যানবাহন সবই মসৃণভাবে যাতায়াত করতে পারবে। নদীখাতের উপর কয়েকটি কংক্রিটের পিলারের উপরের এই বেইলি ব্রিজটি বসানো হয়েছে।
বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে সবরকমভাবে সাহায্য করা হয়েছে ব্রিজটি তৈরি করতে। চার লেনের এই ব্রিজটি গালওয়ান নদী ও শায়ক নদীর সংযোগস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে, ১৪ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্টটি যেখানে ১৫ জুন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল দুই দেশের সেনাদের মধ্যে, সেখান থেকে নয়া ব্রিজটি মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে। শায়ক ও গালওয়ান, দুই নদী যেখানে মিশছে সেখানে রয়েছে ভারতীয় সেনার একটি বেস ক্যাম্প। এর নাম ‘১২০ কিলোমিটার বেস ক্যাম্প’। এই ক্যাম্পের সঙ্গে ভারতীয় সেনার বাকি ফরোয়ার্ড পোস্টগুলির মসৃণ যোগাযোগ রাখতে এই ব্রিজটি লাইফলাইন হিসাবে কাজ করবে। অন্যদিকে, দারবুক থেকে দৌলতি বেগ ওল্ডি পর্যন্ত ২৫৫ কিলোমিটার লম্বা রাস্তা রয়েছে তার কৌশলগত রক্ষাকবচ হিসাবেও এই ব্রিজটি দারুণ কাজ করবে। অর্থাৎ ওই রাস্তার কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে সদ্য নির্মিত ব্রিজটি। লাদাখের বিভিন্ন শৈলশিরা দিয়ে সেনা যানগুলি অস্থায়ী পথ তৈরি করে চলাচল করছে। সেনা শিবির গুলি দুর্গম এবং অনেক উঁচুতে রয়েছে। ফলে বাড়ছে ঝক্কি এবং ঝুঁকি। এই হয়রানি স্থায়ীভাবে কমিয়ে দিল এই বেইলি ব্রিজ (Bailey Bridge)। এমনটাই মত কৌশলগত বিশেষজ্ঞদের।
এই ব্রিজ তৈরির কর্মসূচি বাতিল করতে বার বার হুমকি দিয়েছিল লালফৌজ। সেনা পর্যায়ের বৈঠকেও তারা ব্রিজ বন্ধ রাখতে ভারতকে হুমকিও জানিয়েছিল। কিন্তু ভারত বিন্দুমাত্র এসব তোয়াক্কা করেনি। চিনাদের চোখরাঙানি উড়িয়ে দিয়েই গালওয়ানে ব্রিজ তৈরির কাজ শেষ করল বিআরও এবং সেনার ইঞ্জিনিয়াররা। চিনা সেনা ও চিনের বিদেশমন্ত্রকের বক্তব্য ছিল, ‘গোটা গালওয়ান নদী উপত্যকাটাই চিনের। সেখানে ভারতীয় সেনার ব্রিজ তৈরির চেষ্টা বেআইনি।’ যদিও ভারত আগেই এই দাবি খারিজ করে দিয়েছিল। এক ভারতীয় সেনা অফিসার জানিয়েছেন, “আমরা ঠিকই করেছিলাম, যুদ্ধ হলে হবে। কিন্তু নিজেদের জমিতে ব্রিজ তৈরির কাজ থামাব না। দরকার পড়লে এই এলাকায় আরও বেইলি ব্রিজ তৈরি হবে কংক্রিটের পিলার ফেলেই।”