স্ত্রী নয় দলের পাশেই দাঁড়ালেন সৌমিত্র খাঁ। আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে দুষলেন স্ত্রীকেই। মঙ্গলবার ভোটের দিন দু’দফায় আক্রান্ত হন আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী সৌমিত্রর স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল খাঁ। সৌমিত্র মঙ্গলবার অভিযোগ করেন, সুজাতা এলাকার মানুষকে হুমকি দিয়েছিলেন। স্থানীয় মানুষ তারই জবাব দিয়েছে।
ঘটনার পর আনন্দবাজার ডিজিটাল-কে বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ বলেন, ‘‘বছরের পর বছর স্থানীয় মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি তৃণমূল। গত পঞ্চায়েত ভোটে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। গত লোকসভা ভোটেও কিছু জায়গায় নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা গিয়েছিল। সেখানে বিজেপি জিতেছে। লোকসভা নির্বাচনে আরামবাগের মানুষ, বিজেপি-র পক্ষেই ভোট দিয়েছিল। দিনের পর দিন ভোট দিতে না পেরে মানুষের মনে সঞ্চিত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তৃণমূলের অত্যাচারের জবাব দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।’’ এখানেই থেমে না থেকে আক্রান্ত হওয়ার জন্য তৃণমূল প্রার্থীর দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলেন তিনি। সৌমিত্র বলেন, ‘‘কোনও প্রার্থীর আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নিশ্চয়ই উদ্বেগের। কিন্তু প্রার্থীরও কিছু দায়দায়িত্ব থাকা উচিত। তৃণমূল প্রার্থী ওইসব জায়গা গিয়ে সাধারণ ভোটারদের হুমকি দিয়েছিলেন বলেই আমি জেনেছি। যাঁরা ২০১১ সালের পর ভোট দিতে পারেননি তাঁদের তো ক্ষোভ থাকবেই। সেই ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়েছে তৃণমূল প্রার্থীর হুমকিতে। আর তার জেরেই তাঁকে হেনস্থা হতে হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকালে আরামবাগের আরাণ্ডির মহল্লাপাড়া এলাকায় একটি বুথ থেকে অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সুজাতা। তৃণমূলের অভিযোগ, গিয়েই বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। আর সুজাতার অভিযোগ, “এখানকার তৃণমূলের ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে বিজেপি। বুথ দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। শেষ কয়েক দিন ধরেই এই সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমি আসার পর আমার সঙ্গে তৃণমূলের ভোটাররা ভোট দিতে বেরিয়ে পড়েছেন।’’ তারপরেই তাঁকে আক্রান্ত হতে হয়। দুপুরের দিকে আরও একটি বুথের পরিস্থিতি দেখতে গেলে তাঁকে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ। সে বার তাঁর মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করা হয় বলে অভিযোগ।
চলতি বছর ২১ জানুয়ারি আচমকাই বিজেপি ছে়ড়ে তৃণমূলে যোগ দেন সৌমিত্র-র স্ত্রী সুজাতা। গেরুয়া শিবির থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জোড়া ফুল শিবিরে সুজাতার যোগ দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন সৌমিত্র খাঁ ৷ বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা করতে করতেই ফুঁপিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি ৷ ২২ জানুয়ারিই স্ত্রী-কে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিস পাঠান তিনি। তারপর থেকেই রাজ্যজুড়ে তৃণমূলে হয়ে প্রচারে নেমে স্বামী-সহ তাঁর দলকে আক্রমণ করেন সুজাতা। ৫ মার্চ কালীঘাটে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার দিন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরামবাগ থেকে প্রার্থী করেন সুজাতাকে। দু’বারের বিধায়ক তথা দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরাকে সরিয়ে প্রার্থী করা হয় সৌমিত্র জায়াকে। প্রচারে নেমেও প্রথম দিকে সে ভাবে আরামবাগের কর্মীদের সহযোগিতা পাননি তিনি। পরে অবশ্য বিদায়ী বিধায়ককে পাশে নিয়েই ভোটপ্রচার শুরু করেন সুজাতা। কিন্তু ভোটের দিন দু’বার আক্রান্ত হলেও, স্বামীর সহানুভুতি বা সমর্থন কোনওটাই পেলেন না স্ত্রী।