বিধানসভায় পাশ হয়ে গেল বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাব৷ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ল ১৯৫টি, বিপক্ষে পড়ল ৬৯টি ভোট৷ বিধানসভায় এই প্রস্তাব যে পাশ হবে, তা প্রত্যাশিত ছিলই৷ আর প্রত্যাশিত ভাবেই বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করল বিজেপি৷ বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে শুভেন্দু অধিকারী, মিহির গোস্বামীদের সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তরজায় সরগরম হয়ে উঠল বিধানসভার অধিবেশন৷
বিজেপি প্রথম থেকেই বিধান পরিষদ গঠনের বিপক্ষে৷ এ দিন প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী যুক্তি দেন, বিধান পরিষদ গঠন করলে রাজ্যের কোষাগারে বাড়তি চাপ পড়বে৷ যে খরচকে অপচয় বলেই দাবি করেন কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক৷ বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষও বিধান পরিষদ গঠনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ আইএসএফ-এর বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিও বিধান পরিষদ গঠনের বিপক্ষেই মত পোষণ করেন৷ তবে বিধান পরিষদ গঠন নিয়ে রাজ্যকে তীব্র আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷
বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেন, শাসক দলের ঘনিষ্ঠ এবং নির্বাচনে মানুষ যাঁদের প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যেই আসলে বিধান পরিষদ গঠনের চেষ্টা চলছে৷ বিধান পরিষদ গঠিত হলে পাঁচ বছরে কমবেশি ৮০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলেও দাবি করেন তিনি৷ শুভেন্দু বলেন, ‘বিধান পরিষদের কোনও যৌক্তিকতা নেই৷ বিধান পরিষদ গঠিত হলে বিল পাশের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা বাড়বে, সময় বেশি লাগবে৷ ১৯৬৯ সালে যে যে কারণে এ রাজ্যে বিধান পরিষদের ব্যবস্থা অবলুপ্ত করা হয়েছিল, এখনও সেই কারণগুলি একই ভাবে প্রযোজ্য৷ তাহলে কেন ফের বিধান পরিষদ গঠনে মরিয়া রাজ্য সরকার? আসলে পিছনের দরজা দিয়ে শাসক দলের ঘনিষ্ঠদের জায়গা করে দিতেই এই চেষ্টা করা হচ্ছে৷ ‘
বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ হওয়ার পর প্রথমে রাজ্যপাল, তার পর কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রক, লোকসভা, রাজ্যসভা ঘুরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে৷ সেই প্রসঙ্গ তুলেও বিরোধী দলনেতা শাসক দলকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আপনারা এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ তাই গায়ের জোরে প্রস্তাব পাশ করেছেন৷ মনে রাখবেন, এখানে যেমন আপনারা সংখ্যাগরিষ্ঠ, লোকসভায় আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ আমাদের দলের অবস্থান স্পষ্ট, আমরা বিধান পরিষদের বিপক্ষে৷’
শুভেন্দুর আক্রমণের পাল্টা জবাব দেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি যুক্তি, সংবিধানকে মান্যতা দিয়েই বিধান পরিষদ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ উত্তর প্রদেশ, কর্নাটকের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যে কেন বিধান পরিষদ বন্ধ করা হচ্ছে না সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ বিরোধী দলনেতার যুক্তি খণ্ডনে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘পিছনের দরজার কথা বলছেন৷ তাহলে তো ভোটে হেরেও অনেকে রাজ্যসভার সাংসদ হচ্ছেন৷ সিপিএম, কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের আদর্শগত বিরোধ থাকতে পারে৷ কিন্তু তারা শূন্য হয়ে যাওয়ায় খারাপ লাগছে৷ তাদের শূন্য হয়ে যাওয়াটা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়৷ ‘ লোকসভায় প্রস্তাব আটকে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী৷ পাল্টা পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যদি এখানে কিছু পাশ করা হয়, আপনি বিরোধী দলনেতা হয়ে, বিধায়ক হয়ে বলছেন লোকসভা-রাজ্যসভায় সেটা উড়িয়ে দেবেন। এটা যদি আপনার কথা হয় তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই। বাংলার মানুষ দেখুক।শুধু রাজনীতির জন্যে বিরোধিতা করবেন না।’
রাজ্য বিধানসভার আসন সংখ্যা ২৯৪৷ সেই অনুযায়ী ন্যূনতম ৪০ এবং সর্বোচ্চ ৯৮ আসন বিশিষ্ট বিধান পরিষদ গঠন করা যাবে৷ ১৯৬৯ সালের ১ অগাস্ট সরকারি ভাবে এ রাজ্যে বিধান পরিষদ অবলুপ্ত হয়৷ ফের রাজ্য আইনসভার উচ্চকক্ষ চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন আরও দাবি করেছেন, শাসক দলের ঘনিষ্ঠদের জন্য নয়, যাঁরা সরাসরি রাজনীতিতে না থেকেও আইনসভার অংশ হতে চান, তাঁদের সেই সুযোগ করে দিতেই বিধান পরিষদ গঠন করতে চায় রাজ্য সরকার৷ সমাজের সর্বস্তর থেকে সেখানে প্রতিনিধিত্ব থাকবে বলেই দাবি করেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী৷ শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, বিধান পরিষদ গঠন নিয়ে বিরোধিতা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবে বিজেপি৷