1966 সালের ঘটনা। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন।ধর্মের প্রতি বিশ্বাস জাগলো তাঁর।আশীর্বাদ চাইতে সোজা পৌঁছালেন স্বামী করপাত্রি মহারাজের কাছে। সরল সাদা-সিধে এই মানুষটি আশীর্বাদ করলেন প্রাণভরে,যাতে শ্রীমতি গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন ।কিন্তু একটা ছোট্ট আবদার করে বসলেন। ক্ষমতায় এলে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী যেন ‘গো-হত্যা’ নিষিদ্ধ করেন,এই আবদার করলেন করপাত্রি জী। ইন্দিরা গান্ধী কথা দিয়েছিলেন যে ক্ষমতায় এলেই প্রথমে তিনি ‘গো-হত্যা’ নিষিদ্ধ আইন সংসদে পাশ করাবেন। ক্ষমতায় আসলেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। ভুলে গেলেন অঙ্গীকার।করপাত্রি জী বারবার মনে করাতে লাগলেন ইন্দিরা দেবীকে তাঁর অঙ্গীকারের কথা। কিন্তু ইন্দিরা দেবী কোন মতেই শান্তি-প্রিয় বিশেষ সম্প্রদায়ের ভোটব্যাঙ্ক হারাতে চাইলেন না। এইভাবে শ্রীমতি গান্ধী একজন সাধু মহারাজের আশীর্বাদ ছলনার দ্বারা প্রাপ্ত করলেন। ভদ্রমহিলার এই কুৎসিত রূপ দেখে করপাত্রি জী এক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করলেন। ‘গো-হত্যা’ নিষিদ্ধের জন্য আইন প্রনয়নের দাবীতে 1966 সালের 7 ই নভেম্বর গোপাষ্টমীর দিন করপাত্রিজীর নেতৃত্বে লক্ষ লক্ষ নিরস্ত্র সাধু-সন্ন্যাসী সংসদ অভিমুখে হাঁটতে শুরু করলেন। শ্রীমতির অর্ডার মতো সেদিন সাধুদের বুকে গুলিবর্ষণ শুরু হল। ভারতবর্ষের নপুংশক প্রশাসন সেদিন বীরত্ব দেখালো। নিরস্ত্র কে হত্যা করার মজাই অন্যরকম। ইন্দিরার ক্লীব পুলিশ ঝাঁঝরা করে দিল কয়েক হাজার সাধুর দেহ। সঠিক পরিসংখ্যান এখনো অধরা। খুন করা হলো সন্ন্যাসীদের ভারতের মাটিতে। ধান্দাবাজ বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা চুপ থাকল সেদিন।স্বামী করপাত্রিজী মহারাজ হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলেন। যাঁরা গো মাতার পূজা-অর্চনা করেন তাঁদের কাছে গোপাষ্টমী তিথির গুরুত্ব অনেক। ঐদিন গো মাতার বিশেষ পূজা অর্চনা করা হয়।অভিশাপ দিলেন স্বামী করপাত্রি জী মহারাজ। বললেন “এই গোপাষ্টমীর দিন যেভাবে ইন্দিরা গান্ধী সাধু সন্তদের খুন করলেন ঠিক একই রকমভাবে অন্য এক গোপাষ্টমীর দিন বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু হবে”। বহু বছর পার হয়ে গেল।1984 সালের 31 শে অক্টোবর গোপাষ্টমীর দিন।ইন্দিরা গান্ধী তাঁর শাস্তি পেলেন। বুলেট ঝাঁঝরা করে দিল ইন্দিরা গান্ধীর শরীর।
ইন্দিরা দেবীর পার্টি এখনো ওই একই পন্থাই অবলম্বন করে চলেছে।অর্থাৎ ভোটের সময় বক-ধার্মিক সেজে, কোট এর ওপর পৈতা পরে ছলনা করে ভোট নিয়ে-আবার পুরানো স্বরূপ ধারন করা।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের খাবারের ওপর বা প্রাণী হত্যার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিশ্বের 56 টি দেশে শুকরের মাংস নিষিদ্ধ।কমিউনিস্ট মহানায়ক ফিদেল কাস্ত্রোর দেশ কিউবাতে ও গোমাংস নিষিদ্ধ রয়েছে। কারণ অত্যাধিক গো- মাংস খাওয়ার ফলে কিউবাতে দুধের আকাল দেখা দেয়। সম্প্রতি UAE ও একইভাবে মাংস খেতে গিয়ে দুধের আকাল অনুভব করে।এবং উরুগুয়ে হতে বিশেষ জাহাজে করে 4500 দুগ্ধদায়ী গাভী নিজের দেশে নিয়ে আসে। এরকম বহু খবর পাওয়া যাবে একটু চোখ কান খোলা রাখলেই। তাছাড়াও বহু দেশে অনেক ধরনের মাংসের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সারা পৃথিবীতে। মাংসের থেকে দুধের প্রয়োজন শতগুণ বেশি।বিশেষত শিশুদের পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম। তবুও ভারতবর্ষের কিছু স্বঘোষিত সিনেমা নাটক করা বুদ্ধিজীবী ও বিদেশ থেকে আগত রাজনীতির কারবারিরা ভারতে গো-হত্যা নিষেধ এর ব্যাপারে স্বেচ্ছা উদাসীন ব্রত নিয়েছেন বিগত কয়েক দশক ধরে। ‘গো-হত্যা’ প্রসঙ্গে আমাদের ভারতের সংবিধান কি বলছে? সংবিধানের 48 নম্বর ধারায় বলা হয়েছে- “Organise agriculture and animal husbandry on modern and scientific lines and shall,in particular, take steps for preserving and improving the breeds,and prohibiting the slaughter, of cows and calves and other milch and draught cattle. “
অর্থাৎ সংবিধানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে- গবাদি পশু, গরু, বাছুর এদেরকে হত্যা হতে রক্ষা করতে হবে ও সংরক্ষণ করতে হবে। অথচ কি অদ্ভুত ব্যাপার ভারতের ও বাংলার সিনেমা নাটক করা বুদ্ধিজীবীরা এ বিষয়ে চুপ।এঁরাই আবার সামান্য বিষয়ে পান থেকে চুন খসলেই বলতে থাকেন -“সংবিধান খতরে মে হ্যায়”। সম্প্রতি আবার শুরু হয়েছে প্রকাশ্যে গো-মাংস ভক্ষণ এবং তার প্রচার প্রসার।এবং তার সাথে সাথে সোশ্যাল মিডিয়াতে বেদ-বেদান্তের নাম করে মিথ্যা প্রচার। যে বেদে নাকি গো-মাংস খাবার নিদান আছে। কি ভণ্ডামি! একবার ভাবুন। মুশকিল হলো অন্য জায়গায়।অনেকেই আছেন যাঁরা বেদ-বেদান্তের নাম শুনলেই পালানোর রাস্তা খোঁজেন আর তাঁদের এই বেদ-বেদান্ত পাঠের অনীহা বা বিমুখতার ফায়দা নিয়ে চলেছে কিছু নাটুকে বুদ্ধিজীবী ও বিদেশী আগমার্কা রাজনৈতিক দলগুলি। ভারতবর্ষের বেশকিছু রাজ্যে গো-হত্যা ও গো-মাংস নিষিদ্ধ হলেও অনেক রাজ্যেই এখনো প্রকাশ্যে গরু জবাই ও রাস্তার ধারে ঝুলিয়ে রেখে গো-মাংস বিক্রি হচ্ছে। সংখ্যাগুরু হিন্দু সমাজের মানুষের আস্থাকে জঘন্য ভাবে অপমান করা হয়ে চলেছে দিন প্রতিদিন।আর এই কাজে পরিকল্পিতভাবে হাত লাগিয়েছে কিছু রাজনৈতিক দল। এবং সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হিন্দু আস্থাকে অপমান করে গো-মাংসের প্রচার-প্রসার চলছে অবাধে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আস্থা কে অবজ্ঞা করার এই জঘন্যতম ব্যবসা একমাত্র ভারতবর্ষেই সম্ভব। গো-মাংস যাঁরা খান তাঁরা তা না খেলে যে বাঁচবেন না এমন কিন্তু নয়, তাছাড়া যাঁদের এই খাবার খুব প্রিয় তাঁদের প্রপিতামহের দেশে ও তেমন কোনো ‘বিশেষ আগ্রহ’ নেই এই মাংসের প্রতি। আছে ভারতবর্ষে। আস্থাকে পদদলিত করার আনন্দ যে আলাদা। এবার আসা যাক সেকুলার মুখোশধারী কিছু ভন্ড রাজনৈতিকের কথায়। সম্প্রতি একটি খবর খুবই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। বাংলাদেশের ধর্মকে আফিম বলা কমিউনিস্ট (বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল) নেত্রী ডক্টর মনিষা চক্রবর্তী এবছর ঈদে পাঁচটি গরু জবাই করেছেন এবং তার মাংস ও তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিতরণ করেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে।Daily Hunt ,East Coast Daily, 05/08/2020 এর খবর অনুযায়ী-“A Communist Party leader in Bangladesh has slaughtered 5 cows to distribute beef.As per reports in OPINDIA ,a communist leader in Bangladesh named Dr. Manisha Chakraborty and her fellow comrades had slaughtered 5 cows to distribute beef during the occasion of Bakr Eid in Barisal,Bangladesh. Dr. Manisha Chakraborty is he member secretary of the district committee of Bangladesh Samajtantrik Dal (Bangladesh Socialist Party).She has shared on Facebook a post in which she describes the reason behind her act.” Aikhana panchti goru kurbani daowa hoyeche o seta ke process kora hoyeche (We have sacrificed 5 cows and processed the meat),” Dr. Manisha was heard as saying in the video.”Last year,we had fed around 5000 families. We have raised funds to purchase 5 cows and sacrifice it our selves.We thank everyone who helped us in doing this.” Agami kurbani te 30 ta ward e minimum 30 ta goru kurbani dibo (Next year ,on Eid ,we will sacrifice of minimum of 30 cows to feed the people in 30 words of the district)”.
কিছু বুঝলেন পাঠক বন্ধুরা ? মনীষা দেবীর কমিউনিস্ট দল যা কিনা ধর্মকে আফিম বলে মনে করেন এবং ধর্মনিরপেক্ষতায় বা ধর্মহীনতায় বিশ্বাস করেন, সেই দল ধর্মীয় উৎসবে কুরবানী দিচ্ছেন।এবং তিনি এও বলেছেন এ বছর পাঁচটি গরু জবাই হয়েছে আগামী বছর 30 টি গরু জবাই করবেন তিনি। মনীষা দেবীর দেশে অনেকেই শুকরের মাংস খেতে ভালোবাসেন বা পছন্দ করেন, মনিষা চক্রবর্তী কি পারবেন তাঁদের জন্য বাংলাদেশে সেই ব্যবস্থা করতে? কোনদিনই তা পারবেন না।ধর্মের সঠিক ব্যবহার কমিউনিস্টদের এর থেকে ভালো আর কেউ জানে বলে মনে হয় না।একেই বলে জোর গলায় ইচ্ছে করে আস্থায় ঢিল ছোঁড়া। কাজটি কিন্তু যিনি করেছেন তিনি একজন হিন্দু। এমনকি মনীষা চক্রবর্তীর দলের নেতা কমরেড খালেকুজ্জান নিজেও কিন্তু এই কাজটি করেন নি। আসলে আস্থা তে আঘাত দেওয়ার মতো মহৎ কাজ যদি ওই আস্থায় বিশ্বাসী পরিবারের লোক কে দিয়ে করানো যায় তার টেস্ট আলাদা।তবে হ্যাঁ, ধর্ম কিন্তু আফিম হিন্দুদের জন্য। এ তো গেল বাংলাদেশের কথা। বাংলাদেশে এছাড়া উপায়ও নেই। তাই একই রকম ভাবে বাংলাদেশের বিদ্যা সিনহা মিম নামক হিন্দু নায়িকাও এই একই ধরনের কাজ করে শিরোনামে এসেছেন। কারণ বিদ্যা সিনহা মিম এর মত হিন্দু নায়িকাদের বাংলাদেশে টিকে থাকতে গেলে এ কাজ করা ‘ছোট্ট ব্যাপার’। যেমন নায়ক মুসলিম আর নায়িকা হিন্দু এইরূপ চিত্রনাট্য ছাড়া বাংলাদেশের সিনেমা ভাবাই যায় না। এবার ভারতে কমরেড দের গোমাংস প্রেমের নমুনা দেখা যাক। ভারতে এঁরা পিছিয়ে নেই, বরঞ্চ বলা চলে ভারতে এই কাজ বিশেষত্ব পশ্চিমবঙ্গে অনেক পূর্বেই করেছেন কমরেড বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য ও তাঁর চ্যালা চামুন্ডারা। উনি রীতিমত জাঁকজমক করে বেশ কিছু স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে কলকাতার বুকে মিডিয়া ডেকে ‘প্রকাশ্য বীফ্ পার্টি’ করেছেন। 2015 সালের 7 ই নভেম্বর কলকাতার মানুষকে অবাক করে দিয়ে তিনি গোমাংস ভক্ষণ করে, ভারতের ধর্মহীন বা ধর্মনিরপেক্ষ কমিউনিস্ট পার্টির ভবিষ্যৎ সিকিওর করেছেন।The Hindu পত্রিকা ঐ দিন লিখেছে-“The left’s dilemma over beef ban issue once again come to the fore……..senior communist party of India(Marxist)CPI(M) leader and former kolkata mayor Bikash Ranjan Bhattacharya for participating in a “beef eating”event in the city.It was also learnt that CPI(M) state secretary Surjya Kanta Mishra spoke to Mr.bhattacharya in this regard.On being asked about the development, Mr. Bhattacharya said that even though the party state secretary spoke to him on the issue, there was ” no criticism “,Mr. Bhattacharya, however said that protest against growing intolerance needs to continue. “There may be difference of opinion on the way of the protest.But the time has came to raise our voice against the growing intolerance in the country ,”Mr. Bhattacharya said. অর্থাৎ মোদ্দাকথা যা দাঁড়ালো যে,দেশ অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে আর তাকে রক্ষার জন্য বা সহিষ্ণুতা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি গোমাংস ভক্ষণ এর এই প্রকাশ্য নাটক করেছেন।চমৎকার কমরেড। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, কবি সুবোধ এঁরা গোমাংস খেয়ে সেকুলার বলে জাহির করেছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে শূকরের মাংস খাবার দম ইনাদের নেই। শুকরের মাংস খেলে তাহলে বোঝা যেত প্রকৃত সেকুলারিজম আর সহিষ্ণুতার সংজ্ঞা। আর তাছাড়া গোমাংস যদি খেতেই হতো তাহলে বাংলাদেশে খেলেই তো হতো।জ্যোতিবাবুদের পূর্বপুরুষরা তো গোমাংস খাবেন না বলেই রাতের অন্ধকারে দেশ ত্যাগ করে ভারতে এসেছিলেন। এঁদের পূর্বপুরুষরা তো ধর্মকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন।অথচ পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগের ইতিহাসকে এঁরা বীফ্ ফেষ্টিভেলে পরিণত করেছেন।এর থেকে লজ্জার আর কি হতে পারে? তবে অতিসম্প্রতি বিকাশ বাবুদের পার্টির ঠাকুরদার দেশ চীনে কুকুর এবং বিড়াল মাংসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ফলে চীন দেশে যাঁরা কুকুর এবং বিড়ালের মাংস অতীব প্রিয় মনে করেন, তাঁরা অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছেন।এবিষয়ে বিকাশবাবু দের আন্দোলন (প্রকাশ্যে কুকুর মাংস ও বিড়ালের মাংস খেয়ে)দেখার জন্য অধীর আগ্রহে আছেন বহু মানুষ।এক্ষেত্রে একটি ছোট্ট কথা না বললেই নয় আর তা হল পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের বহু স্থানে শূকরের মাংস বিক্রি করতে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে,ফলে শুকর মাংস প্রেমিকরা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছেন। এই বিষয়ে বিকাশ বাবুদের ধর্মহীন বা ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিও আকর্ষণ করছি।
তবে গো-মাংস নিছক একটি ফুড হ্যাবিট নয়, হতেও পারে না। এটি অস্তিত্বের ওপর আগ্রাসনের একটি বহুল ব্যবহৃত হাতিয়ার। সেই মোঘল যুগ থেকে যার শুরু হয়েছে, এখনো চলছে রমরমিয়ে আস্থা কে পদদলিত করতে।
সেকুলার হিন্দু বাদ দিলে, ধর্ম প্রাণ হিন্দুরা গরুকে মাতা জ্ঞানে পূজা করেন।তার ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক যথেষ্ট যুক্তি ও কারণ রয়েছে। দুধের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা নিষ্প্রয়োজন।একটা গরু সারা জীবন আমাদের জান-প্রাণ দিয়ে সেবা করে। কিন্তু গো-পালন এখন প্রায় উঠেই যাচ্ছে। হিন্দুরা যার থেকে উপকার পায় তাকে শ্রদ্ধার আসনে রেখে পূজা করে। তা সে কোন গাছপালা হোক বা পশুপাখি। বিভিন্ন দেব দেবীর বাহন হিসেবে ও বহু পশু পাখিকে শ্রদ্ধা সহকারে পূজা করা হয়। সারা জীবন যে সেবা করল বুড়ো বয়সে তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে তার মাংস খাওয়া টা মাতৃ পিতৃ হত্যারই সামিল। যে মা তিল তিল করে রক্তমাংস, স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করলো তাকে বুড়ো হলে দূর করে দেব বা কেটে খেয়ে নেব এর থেকে পাপ কাজ আর কি হতে পারে? তাছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতির এবং বহু মানুষের জীবিকাও নির্ভরশীল গো-পালনের উপর। আগেই বলেছি দুধের আকাল দেখা দেওয়ায় সম্প্রতি UAE, 4500 দুগ্ধ দায়ী গাভী বিশেষ জাহাজে করে উরুগুয়ে হতে আমদানি করেছে। অর্থাৎ দুধের প্রয়োজন সর্বাগ্রে। শিশুর পুষ্টি ও বিকাশ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যের জন্য দুধের বিকল্প কোথায়? বর্তমানে আবার সোশ্যাল মিডিয়াতে বজ্জাতি শুরু করেছে কিছু পোষা ইনটেলেকচুয়াল। যারা বেদের রেফারেন্স টেনে এনে বলছেন যে বেদে নাকি গো-হত্যা এবং গো-মাংস ভক্ষণের বিধান আছে। ভন্ডামি আর মিথ্যার এক সীমা থাকা দরকার। বৈদিক শব্দকে না জেনে,শব্দের অর্থকে নিজের মনের মতন করে বর্ণনা করে চলেছেন বেশ কিছু স্বঘোষিত বেদ-জ্ঞানী!
অথর্ব বেদে গো-হত্যা নিষিদ্ধ।এবং ঋকবেদে ও গো-হত্যার স্পষ্ট নিষেধ রয়েছে।কেবলমাত্র ‘অঘ্ন্যা’ বা অহন্তব্য এই বিশেষণের দ্বারাই যে বেদে গো- হত্যা নিষিদ্ধ এমন নয়,গো-হত্যার স্পষ্ট নিষেধ ও রয়েছে। যেমন- “মা গামনাগামদিতিং বধিষ্ঠ”(ঋক্ সং 8/101/15), “গাং মা হিংসীর দিতিং বিরাজম্ “(সং 8/2/10/2)। অর্থাৎ গরু হল অদিতি এবং তা বধের অযোগ্য। ঋকবেদে স্পষ্ট বলা আছে-
“সূর্যায়া বহতুঃ প্রাগাৎ সবিতা যমবাসৃজৎ।
অঘাসু হন্যতে গাবো অর্জুন্যোঃ পর্য্যুহ্যতে। ।”(ঋঃ বেদ-10/85/13)
“হন্যতে গাবো” অর্থাৎ গো-হত্যা করা যাবে না।
আরো বলা হয়েছে-
“মাতা রুদ্রানাং দুহিতা বসুনাং স্বমা দিত্যনামমৃ তস্য নাভিঃ।
প্র নু যোচং চিকিতুষে জনায়, মা গামনাগামদিতিং বধিষ্ঠ ।।”
অর্থাৎ অমৃতরূপ দুধ দান করে যে গরু সেই অদিতি স্বরূপ গরুকে বধ করো না।
যজু বেদে বলা হয়েছে-
“অন্তকায় গোঘাতম্” অর্থাৎ গো ঘাতকের শাস্তি হল মৃত্যু দণ্ড। আরো একটি মন্ত্রে বলা হয়েছে-
“ঘৃতাং দুহানামাদিতিং জনায়াগ্নে মা হিংসী পর মে ব্যোমণ্।” অর্থাৎ মানুষকে যে ঘৃতদান করে সেই অদিতিকে হিংসা করো না।ঋকবেদের ঋষিরা বলছেন-“আরে তে গোদনমুত পুরুষঘ্নম্। “অর্থাৎ গো হত্যাকারী ও নরহত্যাকারী দূর হঠো। এইরকম বহু বহু ব্যাখ্যা রয়েছে। যা পড়লে জানা যায় যে গরুর দুধ ছিল ‘অমৃত তুল্য’ যা ঋষিরা ভক্ষণ করতেন, তাঁরা গোমাংস ভোজী ছিলেন না। কিন্তু যেহেতু বেশকিছু হিন্দুদের মধ্যে বেদ, উপনিষদ্, পুরাণ, স্মৃতি এই সমস্ত মহামূল্যবান পুস্তক পড়তে অনীহা;সেই কারণে স্বঘোষিত বেদ বিশেষজ্ঞরা বেদের অপব্যাখ্যা শুরু করেছে। এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক হতে হবে। মহাদেবের বাহন হল ষাঁড়। তাঁর উদ্দেশ্যে ষাঁড় মানতের রীতি ও রয়েছে। গাভী আবার দেবীরূপে পূজিতা। গো-বাঁধনা, গোপাষ্টমী প্রভৃতি উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রাচীনকাল থেকেই গো-মাতার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শিত হয়ে আসছে। মহাভারতে ও গো-হত্যা নিষিদ্ধ বলা হয়েছে।
” অঘ্ন্যা ইতি গবাং নাম ক এতা হন্তুমহতি।
মহচ্চকারা কুশলং বৃষং গাং বাহলভেত্তু যঃ।।”
স্মৃতি (পরাশর)তে গোরুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেবতা বিদ্যমান আছেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এবং এইরূপ শরীরে বহু দেবদেবীর চিত্রসহ গো-মাতার ছবি আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। ভারতীয় সংস্কৃতি ও অর্থনীতি গো-আধারিত।গো-সংরক্ষণ ও গো-সংবর্ধন ভারতীয় সংস্কৃতির প্রধান স্তম্ভ।গো-সম্পদ বিশ্বকে সমৃদ্ধ করেছে। Prevention of cruelty to Animals (Regulation of Livestock markets)Rules,2017 তে বলা হয়েছে কৃষি কাজের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে পশু বিক্রি করা যাবে না।এবং পশুর সংজ্ঞাতে বলা হয়েছে গরু, ষাঁড়, গাড়ি টানা বলদ, হাল টানা বলদ, মোষ, বকনা বাছুর এবং উট হলো পশু। এবং এই রুলস এর তিন নম্বর ধারা তে দেশের প্রতিটি জেলায়, জেলা পশু বাজার মনিটরিং কমিটি গঠনের কথা ও বলা হয়েছে।
তবে এসব করেও কি বীফ্ পার্টি বন্ধ করা গেছে? উত্তর হল- যায়নি। শুধুমাত্র অন্যের আস্থাকে ছোট করতে গিয়ে আমরা ভবিষ্যৎ বিপদ ডেকে আনছে কিনা তা আমাদেরই পর্যালোচনা করতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে বীফ্ পার্টির আয়োজকদের আসল চরিত্র ও উদ্দেশ্য। এও আমাদের ভাবতে হবে যে আমরা “বীফ্ পার্টির” অংশ হব না “মিল্ক পার্টির” আয়োজক হব।
ড.সুমন পানিগ্রাহী (Dr. Suman Panigrahi)।
চিত্রঋনঃগুগুল ইমেজ।