ডাবল ইঞ্জিনের সরকারের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। গত ৩০ বছরের সরকার এবং গত তিন বছরের সরকারের মধ্যে তফাত ত্রিপুরাবাসী স্পষ্ট অনুভব করতে পারছেন। মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সে মৈত্রী সেতু সহ একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে দৃঢ় প্রত্যয়ের সুরে এ-কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কথায়, আগামীদিনে ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে হিসেবে পরিচিতি পাবে। এতে ত্রিপুরা সহ ভারত ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক প্রগতি হবে। এদিন ওই অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, দুই সাংসদ সহ রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আজ প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্বতন ৩০ বছরের সরকার এবং গত ৩ বছরের সরকারের কাজকর্মে ফারাক জনগণ স্পষ্ট অনুভব করতে পারছেন। কারণ, আগে শুধু কমিশন আর দুর্নীতির সংস্কৃতি কায়েম ছিল। তার বদলে এখন কর্মসংস্কৃতি ফিরেছে। সুবিধাভোগীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ পৌছে যাচ্ছে। তিনি আজ স্মরণ করিয়ে দেন, আগে কর্মচারীরা সঠিক সময়ে বেতন পেতেন না। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর সরকারি কর্মচারীরা সপ্তম বেতন কমিশনের সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রথম ত্রিপুরায় ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। কিন্তু আগে ওই কৃষকরাই উৎপাদিত ফসল বিক্রির জন্য নানা সমস্যার সম্মুখীন হতেন। তিনি তীব্র সমালোচনার সুরে বলেন, ধর্মঘটের সংস্কৃতি বদলেছে। এখন বাণিজ্যের উপযোগী পরিবেশ ও পরিস্থিতি কায়েম হয়েছে। তাই, ত্রিপুরায় রফতানি পাঁচগুণ বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৬ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। তাঁর কথায়, কেন্দ্রীয় বরাদ্দে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হয়েছে। ত্রিপুরায় ২০০৯-১৪ অর্থবছরে ৩,৫০০ কোটি দেওয়া হয়েছিল। সেই তুলনায় ২০১৪-২০১৯ বছরের মধ্যে ত্রিপুরাকে ১২,০০০ কোটি টাকার অধিক বরাদ্দ করা হয়েছে।
এদিন প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে ডাবল ইঞ্জিন সরকারের উপকারিতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, যে সমস্ত রাজ্যে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার নেই সেখানে গরিব, কৃষক এবং মহিলাদের আর্থিক দিক দিয়ে শক্তিশালী বানানোর প্রকল্প বাস্তবায়নে ভীষণ ধীর গতিতে কাজ হয়। তাঁর দাবি, ত্রিপুরার উন্নয়ন এবং সব দিক সামর্থ করে তুলতে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার ক্রমাগত প্রয়াস জারি রেখেছে। তিনি বলেন, ডাবল ইঞ্জিন-সরকার ত্রিপুরাকে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব প্রগতির দরজায় নিয়ে গেছে। বিদ্যুৎ ঘাটতির রাজ্য থেকে উদ্বৃত্ত রাজ্যে পৌঁছে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ২ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জল, আড়াই লক্ষ পরিবারকে বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ, প্রত্যেক গ্রামে শৌচালয় নিশ্চিত করা, ৫০,০০০ গর্ভবতী মহিলাকে মাত্রু বন্দনা যোজনার সুযোগ প্রদান এবং ৪০ হাজার গরিব পরিবারকে নতুন ঘর প্রদান সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত তিন বছরে যোগাযোগের প্রাথমিক পরিকাঠামোয় উল্লেখযোগ্য উন্নতি সম্ভব হয়েছে। এ-বিষয়ে তিনি বলেন, ত্রিপুরায় আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কাজ জোর গতিতে চলছে, সমুদ্রের ভিতর দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন, রেল সংযোগ এবং নদী পথেও যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। তিনি এদিন ত্রিপুরার জন্য হীরা অর্থাৎ হাইওয়ে, ইন্টারনেট, রেলওয়ে এবং এয়ারওয়ের উল্লেখ করেছেন।
@@মোদী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা শুধু ভারত এবং বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে মজবুত করছে এমন নয়, বাণিজ্যের এক শক্তিশালী অধ্যায় হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তাঁর কথায়, এই সমগ্র অঞ্চল পূর্বোত্তর এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে উন্নীত করা হচ্ছে।
তিনি জোর গলায় দাবি করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রেল ও জল যোগাযোগ প্রকল্পগুলি মৈত্রী সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়েছে। এই সেতু বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া-র সাথে ত্রিপুরা এবং দক্ষিণ অসম (বরাক উপত্যকা), মিজোরাম ও মণিপুরের যোগাযোগ আরো উন্নত করবে। তাঁর মতে, ওই সেতু বাংলাদেশের আর্থিক প্রগতিকে গতি দেবে। তিনি ওই সেতু নির্মাণে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর বাংলাদেশ সফরে ওই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী আজ দাবি করেন, এখন যোগাযোগের জন্য সড়কপথে সীমাবদ্ধ থাকার প্রয়োজন নেই। নদী পথ যোগাযোগের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ওই নদী পথেই বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বন্দরকে পূর্বোত্তরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে চেষ্টা চলছে। তাঁর কথায়, সাব্রুমে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট গুদাম এবং কন্টেইনার যাতায়াতের জন্য লজিস্টিক হাব হিসেবে কাজ করবে। তাঁর দাবি, ফেনী নদীর উপর সেতু নির্মাণে আগরতলা আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনকারী নিকটতম শহর হবে। তিনি বলেন, আগরতলাকে উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। তাতে, মানুষের জীবন-জীবিকায় বিরাট পরিবর্তন আসবে।