গরুর দুধে সোনা খোঁজা থেকে পুলিশ পেটানোর নিদান—মন্তব্য করে বিতর্ক তৈরি করা তাঁর জুরি মেলা ভার। কয়েকদিন আগে রাজ্যের বানভাসী পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে দুষেছিলেন তিনি। এবার রীতিমতো মেজাজ হারিয়েই নিজের দলের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেই শাস্তির নিদান দিলীপ ঘোষ দিলেন স্থানীয়দের। আর তা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। কেউ কেউ এটাকে সেমসাইড গোল বলছেন। আবার দলের একাংশ আদি নেতারা বলছেন, নির্বাচনে হেরে গিয়ে মাথার ঠিক নেই।
ঠিক কী ঘটেছে? রবিবার খড়গপুরের ২ নং ওয়ার্ড এলাকায় জল–যন্ত্রণা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আর তাতেই তাঁর ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে। মেজাজ হারিয়ে মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ নিদান দিলেন, স্থানীয়রাই যেন ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে রাখেন। তাঁর বাড়ির সামনে গিয়ে নোংরা ফেলে আসেন। ব্যস, মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে গেল সেই বিস্ফোরক মন্তব্য। আর দলের অন্দরে চলা কোন্দল প্রকাশ্যে এলো।
কয়েকদিন ধরে নাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে রাজ্যজুড়ে। তার জেরে জল জমে খড়গপুরের সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জেরে জমা জল নামছে না। এই পরিস্থিতিতে খড়গপুরে গিয়ে রাজ্য সরকার কোনও কাজ করেনি বলে অভিযোগ তোলেন দিলীপ। আসলে তাঁর নিশানায় ছিলেন ঘাটালের তারকা তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ দেব। আর রবিবার তিনি একই অভিযোগে মেজাজ হারিয়ে বেলাগাম মন্তব্য করে বিতর্ক তৈরি করলেন।
রবিবার ২ নং ওয়ার্ড এলাকায় বিজেপি কর্মীর যান দিলীপ ঘোষ। সেখান থেকে ফেরার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরেন। জমা জলের যন্ত্রণা নিয়ে অভিযোগ জানান। তখনই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন সাংসদ। আর বলেন, ‘আমি কী করব? সাংসদ তহবিলের টাকা দিয়েছি। নালা তৈরি করেছি। সবই কি দিলীপ ঘোষ করে দেবে?’ তখন এক বাসিন্দা জানান, স্থানীয় বিজেপি কাউন্সিলর তো কোনও কাজই করছেন না। তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘ওঁকে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে রাখুন। ওঁর বাড়ির সামনে নোংরা জল ফেলে আসুন।’ এমনকী কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে মলত্যাগ করে আসার পরামর্শও দেন।
জানা গিয়েছে, খড়গপুর ২ নং ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর হলেন শুকরাজ কৌর। পাঁচ বছর আগে তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আর এলাকায় তাঁকে দেখা যায়নি। নাগরিক পরিষেবা দেখভাল করে থাকেন তাঁর স্বামী। আর এবার তাতেই ঘটেছে বিপত্তি। এবারের বৃষ্টিতে বানভাসী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কাজ যে সেখানে বিন্দুমাত্র হয়নি তা প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। তাই নাগরিকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন মেদিনীপুরের সাংসদ। তাতেই মেজাজ হারান।