চার বছর আগে এই অনলাইন প্লাটফর্ম তৈরি করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। পড়াশোনার জন্য তৈরি সেই ওনলাইন প্ল্যাটফর্ম এত কাজে আসবে কে জানত? সেটাই হয়েছে। অতিমারির ফলে বেড়েছে অনালাইনে শিক্ষার চাহিদা। ফলে প্রতিদিন ৩ কোটি পড়ুয়া এইঅনলাইন প্লাটফর্ম।
এই অনলাইন প্লাটফর্মের নাম ‘দীক্ষা’। এটির এখন অ্যাপ যেমন রয়েছে সঙ্গে রয়েছে ওয়েবসাইটও। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন বোর্ডের বই পাওয়া যায়। শিক্ষক শিক্ষিকাদের ট্রেনিং মডিউলও এখানেই মিলছে। এটি যে কেউ ব্যাবহার করতে পারে কারন এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়াশোনা করার জন্যই তৈরি। তবে একটা রেজিস্ট্রেশন করাতে হয়। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের কতটা কাজে লাগছে তা বোঝা যায়।
কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন সহজলভ্য অ্যাপে এখন প্রতিদিন তিন কোটি ইউজার হয়ে গিয়েছে। এর ব্যাবহার বেড়েছে মূলত অতিমারির শুরুর সময় থেকে। বেশি ব্যাবহার শুরু হয় মার্চ মাস থেকে। এই অনালাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছিল ২০১৭ সালেই। সরকারের ই-বিদ্যা যোজনার মাধ্যমে তা প্রকাশ্যে আনা হয়েছিল। তারপর থেকে কাজ হচ্ছিল এটিকে উন্নত ও জনপ্রিয় করে তোলার জন্য। ফল মিলছে ২০২১ সালে এসে।
প্রসঙ্গত, অক্সফাম ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করা ৮০% বাচ্চার বাবা-মা বিশ্বাস করেন যে লকডাউনের কারণে তাদের বাচ্চারা প্রচণ্ড ভোগান্তিতে পড়েছে। তারা তাদের পড়াশোনা এবং ক্লাস উভয় ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া, যে ৫ বছর আগে চালু হয়েছিল, তখন শিশুদের সমস্যাগুলি সমাধান করতে সক্ষম হয়নি। উলটে এটা তাদের ঝামেলা আরও বাড়িয়ে তুলছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ভারতের গ্রামীণ পরিবারগুলির মধ্যে কেবল ১৫% পরিবারের ইন্টারনেট রয়েছে। অর্থাৎ, ৮৫% গ্রামীণ পরিবার এখনও ইন্টারনেটের সুবিধা পায় না।
এখন লকডাউনের কারণে অনেক স্কুল অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। অথচ ইন্টারনেট না থাকায় অনেক শিশু অনলাইন ক্লাস করতে পারে না। আর যাদের ইন্টারনেট আছে তারা তাদের ছাড়িয়ে যায়। দলিত, মুসলিম ও উপজাতিদের ঘরে ইন্টারনেট সুবিধার অভাব বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, ডিজিটাল ইন্ডিয়া এগিয়ে ও পিছিয়ে- এই বৈষম্য হ্রাস করার পরিবর্তে বাড়াচ্ছে চাইছে। একে বলা হয় “ডিজিটাল বিভাজন”।
অক্সফাম ইন্ডিয়া ৪ সেপ্টেম্বর তার একটি সার্ভে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার ১ হাজার ১৫৮ জন বাবা-মা এবং ৪৮৮ জন শিক্ষকের উপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। আসলে করোনার যুগ এবং ডিজিটাল ভারতে ইন্টারনেট সুবিধার অভাব একা স্কুল শিশুদের প্রভাবিত করেনি। এ কারণে শহরাঞ্চলে বসবাসকারী কলেজ শিক্ষার্থীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় আগস্টে অনলাইন ওপেন বইয়ের পরীক্ষা চালায়। এতে, অনেক শিক্ষার্থীর তাদের উত্তরপত্রগুলি পোর্টালে আপলোড করতে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হয়। কিছু তো সময় মতো আপলোডও করতে পারা যায়নি।
এ ছাড়া প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদেরও এই সমস্যায় পড়ে। সমস্যা দুরকমের। প্রথমটি হ’ল মহামারীটির এই পর্যায়ে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াত করা সম্ভভ ছিল না। ফলে কম্পিউটারে তাদের পরীক্ষা দিতে হত। এই ধরণের পরীক্ষায়, যারা এই ডিভাইসগুলি ব্যবহার করতে অভ্যস্ত নন এমন বেশিরভাগ লোক পিছনে পড়ে যান। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলেও কলেজ সেমিস্টার পরীক্ষা বা প্রবেশিকা পরীক্ষাকে পিছিয়ে দেওয়া হয়নি। ডিজিটাল ইন্ডিয়া যে কোনও জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারত যদি সত্যিই বাস্তবে ভারত ডিজিটাল হত।