ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে রীতিমতো রাজ্যের সমালোচনা করল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘রাজ্যের যা অবস্থা, তাতে আইনের শাসনের পরিবর্তে শাসকের আইন চলছে।’
মঙ্গলবার ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে হাইকোর্টে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দিয়েছে কমিশন। বৃহস্পতিবার সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘প্রতিশোধমূলক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। প্রধান বিরোধী দলকে (পড়ুন বিজেপি) যাঁরা ভোট দেওয়া বা সমর্থন করার সাহস দেখিয়েছিলেন, তাঁরা (হিংসার শিকার হয়েছেন)। অত্যাচার এবং আতঙ্কে ক্ষতিগ্রস্তরা অসহায় এবং আশাহীন হয়ে পড়েছিলেন।’ কমিশনের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, রাজ্যে যেভাবে হিংসার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবিকায়। হিংসার জেরে অসংখ্য মানুষ এখনও বাড়ি ছাড়া হয়ে আছেন। ভয়ে মানুষ মুখ খুলতে পারছেন না।
ভোট-পরবর্তী হিংসার ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে কমিশন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘গরিব এবং সাধারণ মানুষ পুলিশের আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। প্রায় সকল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষই তদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন যে পুলিশকে ফোন করে পাওয়া যায়নি বা ঘটনাস্থলে এলেও নেহাত দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়েছিল পুলিশ। তখন গুন্ডারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় হিংসা চালিয়ে যেত।’ সঙ্গে বলা হয়েছে, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলায় রুজু করেছে পুলিশ অথবা অভিযুক্তদের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে উলটে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের দায়ের করা মামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের দায়ের করা মামলায় কিছু করেনি।’
৫০ পাতার রিপোর্টে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছে মানবাধিকার কমিশন। রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, আদালতের পর্যবেক্ষণ তদন্ত করা হোক। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করে দ্রুত মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। সুরক্ষা দিতে হবে সাক্ষীদের। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্যের বন্দোবস্ত করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে সেই রিপোর্ট নিয়ে বৃহস্পতিবার কোনও মন্তব্য করতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তাই কোনও মন্তব্য করবেন না। সেইসঙ্গে স্পষ্ট করে দেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা যখন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তখন হিংসার ঘটনা ঘটছিল।