কলকাতা, ২৪ মে (হি স)। অপপ্রচারের জন্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিক। সোমবার এই দাবি করলেন ডঃ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘হিন্দুস্থান সমাচার’কে সোমবার দুপুরে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বৈশাখী বলেন, “আমি দু’দিন আগে রাতে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ঘরে গিয়েছিলাম বলে কুণালবাবু সেটা মধুচক্র বলে মন্তব্য করেছেন বহুল প্রচারিত চ্যানেলে। এটা অন্যায়, অশালীন। অত্যন্ত লজ্জার ব্যাপার। এটা আমাকে যেমন ছোট করল, তেমন বর্ষীয়ান নেতা এবং রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রতবাবুকেও তো ছোট করল! কেন এরকম প্রকাশ্য মন্তব্যের দায়ে কুণালবাবুর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে না? মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। আমি সুবিচার চাইছি।”
রাতে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ঘরে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বৈশাখী এই প্রতিবেদককে বলেন, “ওনার আইনজীবী আমাকে একটা ওকালতনামায় সই করে আনার অনুরোধ করেছিলেন। বস্তুত শোভনদারও একটা ওকালতনামায় সই করার দরকার ছিল। কিন্তু কুণালবাবু এবং রত্না এই সহজ বিষয়টি নিয়ে অযথা জল ঘোলা করেছেন।
এদিকে হাসপাতাল সূত্রে অভিযোগ এসেছে বৈশাখী দেবীর বিরুদ্ধে। নারোদা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর জেলে নিয়ে যাওয়ার পরেই অসুস্থ বোধ করেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। অভিযোগ, চিকিৎসকরা শোভন বাবুকে দেখতে এলে বৈশাখী ভিডিও রেকর্ডিং করতেন। তিনি অভিযোগ করতে শুরু করেন যে বাইরে থেকে করোনাভাইরাস এনে ওই কেবিনে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে শোভন বাবু এবং বৈশাখী করোনায় আক্রান্ত হন। বৈশাখী দেবী বারবার অভিযোগ করেন যে রত্না চট্টোপাধ্যায়কে যেন কোনভাবে হাসপাতলে ঢুকতে না দেওয়া হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বৈশাখী অভিযোগ করেন, রত্না দেবী করোনা নিয়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য হাসপাতালে আসতে পারেন।
সূত্রের খবর, শোভন বাবু খাওয়া-দাওয়া ছাড়েননি বরং বৈশাখী দেবীর উদ্যোগে, দুজনে রীতিমতো হাসপাতালের মধ্যে ভুরিভোজ করেছেন। বৈশাখী কেবিন না পাওয়ার পর থেকেই মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সামনে রীতিমত নাটক করতে শুরু করেন বলে সূত্রের খবর। তাঁর নাটকের প্রেক্ষিতে চিকিৎসকরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠেন। যার ফলে তাঁকে মানে শোভন বাবুকে যে অন্য পাঁচটা রোগীর মত ছাড়া যায় না তা চিকিৎসকরা জানালেও মানতে রাজি হননি বৈশাখী দেবী এবং শোভন বাবু।
সূত্রের খবর, যেভাবে শোভন বাবু ও বৈশাখী দেবী এসএসকেএম হাসপাতালে এই মেডিকেল বোর্ড নিয়ে অনাস্থা প্রকাশ করেন তাতে লজ্জিত অন্য দুই ভর্তি থাকা নেতা। শোভন বাবু হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মেডিকেল বোর্ডের কাছে লজ্জা ও ক্ষমা প্রকাশ করেন তাঁরা। আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে যেভাবে শোভন বাবু মিডিয়ার সামনে তাঁর বক্তব্য ও অভিযোগ জানিয়েছেন নিজের থেকে বারান্দার জানালায় এসে তাতে এরই মধ্যেই তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এভাবে তিনি যে মিডিয়ার সামনে চলে আসতে পারেন তা জানতে পারেননি বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয় শোভন বাবু ও বৈশাখী দেবীর কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তাঁর বিরুদ্ধে আনা এইসব অভিযোগকে ‘উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার’ বলে অভিহিত করেন বৈশাখীদেবী। ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে তিনি সোমবার দুুপুরে বলেন, “শোভনদা দিনে ২১টা ওষুধ খেতেন। দুবার ইনস্যুলিন নিতে হয় তাঁকে। উনি সত্যি মোটেই স্বস্তিতে নেই। এই অবস্থায় ভুড়িভোজ? যাঁরা এ সব রটাচ্ছেন, তাঁরা আদৌ মানুষ? শোভনদা সম্পর্কে আড়ালে নানা রোগের কথা রটানো হয়েছে। তা আমি চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাইব না, কে কিসের ভিত্তিতে বলেছেন ওঁর সিরোসিস অফ লিভার হয়েছে?“
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সুরক্ষাব্যবস্থা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈশাখীদেবী। তাঁর বক্তব্য, সিনিয়র চিকিৎসকরা বার বার এক ম্যাডামের অনুমতির কথা বলছিলেন। কোন ম্যাডাম। শোভনবাবুর চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা আমি করেছি। রাতে ওঁর ঘরে দরজা ধাক্কানো হয়েছে। বলা সচ্ছে সপ্তর্ষি, মানে ওনার ছেলে বাবাকে দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু আসলে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নিতে সই করাতে গিয়েছিল সপ্তর্ষি। যেখানে বহিরাগতের হাসপাতালের কেবিনে ঢোকার ব্যাপারে আইনি নির্দেশ আছে, সেখানে কর্তৃপক্ষ কীভাবে এরকম ঢিলেঢালা ব্যবস্থা নেয়?
Foto, link
হিন্দুস্থান সমাচার/ অশোক
অশোক সেনগুপ্ত